লেখালেখি আমার পেশা নয়, নেশাও নয়, ভালোবাসা। আমি কখনো কারো সাথে নিজেকে তুলনায় বিশ্বাসী নই, সে যেই হোক না কেন, আমি আমিই, আমি অন্য কেউ নই, আমার কাছে জগতের সবচেয়ে বিশুদ্ধ জ্ঞান হল নিজেকে জানা, নিজেকে জানার মধ্য দিয়ে জানার শুরু, ক্রমে এটি বিস্তৃত হবে জীবন, জগত, প্রকৃতি, মানুষসহ অন্যান্য সত্ত্বা ও অনুভবকে চেনার গভীরতায় আর এভাবেই সম্ভব জীবন ও সাহিত্যের ধারক হয়ে ওঠা, সাহিত্য এক অনন্ত সাধনার পথ, নিরন্তর সাধনার মাধ্যমেই এই পথের অভিযাত্রীরা নিজেদের সাধারন মানুষের স্তর থেকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যান, এজন্য তারা বরেণ্য, মানুষ হয়েও তারা পূজনীয়, জীবন ও দৃষ্টিভঙ্গীর গভীরতায় নিজের ব্যক্তিগত ও সমকালীন অনুভব যখন বিশ্বজনীন ও কালজয়ী হয়ে ওঠে তখন সেটা কবিতা বা সাহিত্য পদবাচ্য বলে বিবেচিত হয় । শুধু বিবৃতি সাহিত্য নয়, প্রকাশের ব্যঞ্জনা চাই, সৃষ্টির যন্ত্রনা চাই, নিজের ভাবনাকে বিশ্বমানবের, সমকালীন ভাবনাকে চিরন্তন করাই সাহিত্যের কাজ, তাই সাহিত্য পদবাচ্য হতে হলে ভাবের প্রকাশ ও শব্দ চয়নে লেখা হতে হবে স্বতঃস্ফূর্ত, যা আপামর মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে হয়ে যাবে তাদের নিজের কথা, লেখা মৌলিক মানবিক অনুভুতিকে ছুঁয়ে যেতে হবে, মূর্ত বা বিমূর্ত যে লেখাই হোক না কেন তাকে বাঁচতে হলে এর বিকল্প নেই ।
আমার একটি লড়াই আছে, সেটাও নিজের সাথেই নিজের লড়াই, নিজেকে সমৃদ্ধ করে তোলার লড়াই, আমার একটাই চাওয়া, আগামীকালের আমি যেন আজকের আমি থেকে একটু হলেও সমৃদ্ধ হই, মোদ্দা কথা হল মানুষ হয়ে ওঠা, জন্ম থেকে কেউ মহান হয়ে আসে না, মানুষকে মানুষ হতে হয় সাধনায়, মানুষ হওয়া এক নিরন্তর সাধনা, মানুষ ভুল ত্রুটির উদ্ধে নয়, পাপ তাপের বাইরে নয়, আমি যেন অনন্ত সাধনার পথ থেকে বিচ্যুত না হই । সাম্প্রতিক সময়ে অনেক লেখালেখি হচ্ছে তার সব কি সাহিত্য পদবাচ্য হচ্ছে, এটি নিয়ে কেউ কেউ হতাশাও প্রকাশ করে থাকেন, কিন্তু আমি সে দলে নেই, আমি বরাবর আশাবাদী মানুষ, যে অপরিসীম মমতা নিয়ে মানুষ ভালোবেসে লেখালেখির চেষ্টা করছে, তাও ফেলনা নয় । অনেক লেখালেখি হচ্ছে, সব লেখা মানসন্মত হয়তো হচ্ছে না, তাই যে সাধক এ নিয়ে তার বিচলিত হবার কিছু নেই । লেখার মুল বিচারক হল আপামর পাঠক ও মহাকাল, যার যা ওজন সে অবস্থান ও মূল্যায়ন সে পাবে, মহাকালের ঘূর্ণাবর্তে যে মহীরুহ সে নিজের অবস্থান ধরে রাখবে, যে খরকুটো সে ভেসে যাবে" ।