ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা স্বপ্নের মতো ব্যাপার ছিল, যেসব মানুষের আর্থিক সঙ্গতি কম এবং মেধা রয়েছে তারাই একমাত্র পড়তে পারে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে মেধার সাথে সাথে আরো কিছু কিছু বিষয়ের দিকে মনোযোগ দেয়ার সময় হয়েছে অনেক দিন ধরেই, যদিও তা এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে।
আমি যখন ইউনিভার্সিটি পাশ করে বের হই তখন এখনকার ছেলেপেলেরা স্কুলে পড়ে, অথচ আজ এমন এক জনের কাছ থেকে এমন আচরন পেলাম যা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের জন্য বেমানান। আগেও রাজনীতি করে এমন ছেলেরা বাহাদুরি দেখাতো, হলে বাকি খেত, কিন্তু সাবেক ভাইদের সাথে অযথা বেয়াদবী করতো এমন কখনো দেখি নি। আজ দেখলাম।
সাবেক ছাত্র হিসেবে এখনো ইউনিভার্সিটি যাই, শুক্র অথবা শনিবারে, বড় ভাই, ছোট ভাই, পুরানো ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিয়ে চলে আসি। চাকরি-বাকরির বাইরে রিক্রিয়েশন এটাই। কিন্তু আজ মনে হলো, বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বর এখন আর আমার না, এখানে এখন একদল শকুন বাস করে।
হর্ন দেয়ার পর সরে দাঁড়াতে দেরি হওয়ায় এমন আচরন কেউ করতে পারে, তা ধারনারও বাইরে। হাত তুলতে যাচ্ছিল আমার উপর, বড় ভাই যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র, তাকে বেগ পেতে হচ্ছিল ছেলেটাকে নিবৃত্ত করতে। আমি বারবার বলছিলাম, আমি শুনতে পাই নি আপনার হর্ন, আমি আপনার অনেক সিনিয়র, ইউনিভার্সিটিরই ছাত্র ছিলাম, হলে থাকতাম, ছেলেটা ততো উত্তেজিত হলো। বলল, আমাকে নাকি বেঁধে রাখবে, ছিঃ।
সারাজীবন যা হয় নি, আজ একদিনেই বুঝলাম, মানসম্মান রক্ষা করাই বড় জিনিস, ওর হাত যদি আমার উপর উঠে যায়, তাহলে নিজেকে কোনদিনই ক্ষমা করতে পারবো না, ঘেন্না এসে যাবে নিজের উপরই, কেন আমি পলিটিক্স করি নি, কেন বড় কোন নেতার নাম তৎক্ষণাৎ বলতে পারি নি, তুই তোকারি, বের হয়ে যা শুনে চলে এসেছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একজন ছাত্র হিসেবে এখন ঘৃনা হচ্ছে নিজের উপর। হলে থেকে পড়াশোনা করেছি পাঁচ বছর, কারো সাথে কোন ধরনের ঝামেলায় জড়াই নি, রাজনীতিতে জড়াই নি, ছা-পোষা মানুষ আমাদের ওসব মানায় না। তারই খেসারত সম্ভবত দিতে হলে আজকে।
মাথা নীচু করে ইউনিভার্সিটি ছেড়ে চলে এলাম।
ছেলেটা সম্ভবত ক্ষমতাসীন দলের নতুন নেতা, নাম জানারও প্রয়োজন বোধ করি নি, ওর যা করার করেছে, খুব বেশি দিন না, এর উলটো পিঠও দেখবে। কারন আমরা যখন ছাত্র ছিলাম, এই ধরনের ছেলেদের হাল কেমন হয় তা অনেকবার সচক্ষে দেখেছি।
ওর প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই, ভালো শিক্ষা পায় নি বলেই হয়তো এই অবস্থা।