রহস্যময় পার্সেলটা পাই আমি প্রায় বিশ দিন আগে ।কিন্তু ব্যাপারটা আজগুবি ভেবে গুরুত্ব দেইনি । গত রাতের স্বপ্নটা আমাকে পার্সেলটা নিয়ে আবার চিন্তা করার সুযোগ করে দিল । অতিসাধারণ পার্সেল এর মতই ছিল। আমাদের পারিবারিক ফ্রেন্ড রাজ ঠাকুর পাঠিয়েছেন। পেশায় উকিল তিনি। বাবা মারা যাওয়ার পরে আমাদের সমস্ত সম্পত্তি তিনিই দেখে শুনে রেখেছেন । অমায়িক লোক যাকে বলে, ঠিক তাই। পাঠকদের সুবিধার জন্য আমি রাজ ঠাকুরের লেখা চিঠিটা হুবহু তুলে দিচ্ছি,
প্রিয় ইশান,
“আশা করি ভাল আছ। অনেক দিন ধরে দেখা হয়না ।চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা খুব দূরে না হলেও , আমার মত বুড়োর জন্য যথেষ্ট দূরে বই কি । ব্যাপারটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ।বয়সের ভারে বাসা থেকে তেমন একটা বের হওয়া হয় না। আর তোমাকে ফোন করে জানাতে পারতাম । কিন্তু তাতে ঘটনার গুরুত্ব হারাত। তাই আমি প্রমান স্বরূপ একটা বক্স পার্সেলের সাথে পাঠিয়ে দিলাম।যাই হোক বাজে না বকে আসল কথায় আসি। তুমি তো আমার বাল্য বন্ধু মেজর রিজভিকে চিন । অবসরে যাওয়ার পরে সে প্রাচীন সভ্যতা সম্পর্কে বিশেষ আগ্রহী হয়ে উঠে। প্রাচীন মূল্যবান দ্রব্য সংগ্রহ এক সময় তার নেশায় পরিনত হয়। জীবনের সমস্ত সঞ্চয় সে এগুলোর পিছনেই ব্যয় করেছে। ভদ্রলোক গত মাসে মারা যান । মারা জাওয়ার পর তার একটা চিঠি আমি পড়ি । জীবিত থাকতে সে কখনো এগুলো নিয়ে আলোচনা করেননি আমার সাথে। করলে তার থেকে অনেক প্রশ্নের উত্তর জেনে রাখা যেত। তিনি আইজার নামে একটা প্রাচীন সভ্যতার খোজ পান । জায়গাটা বর্তমান আরাকান রাজ্যের কোন এক জায়গায় । রিজভি আইজার সভ্যতাকে অভিশপ্ত সভ্যতা বলে অভিহিত করেছেন।কোন এক দেবির অভিশাপে ধংস প্রাপ্ত হয় পুরো সভ্যতা । কেন দেবীর এমন আক্রোশ হল আইজারের প্রতি সেটা স্পষ্ট না।সেখানে নাকি একটা বড় পিরামিড আর দেবি আইসিস এর একটা মন্দির আছে।তিনি শেষ জীবন এই মন্দির আর পিরামিডের অনুসন্ধ্যানেই অতিবাহিত করেন। এগুলোর অবস্থান এর কাছাকাছি ও তিনি চলে এসেছিলেন যা বোঝা যায় ।ভদ্রলোক একটা ম্যাপ একে গেছেন ।ম্যাপটা ও আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি পার্সেলের সাথে। তবে তিনি একটা জিনিস কে ভয় পেতেন পত্র পড়ে যা বুঝলাম ।সেখানে লেখা ‘ ইন্দ্রকান্তার অভিশাপ থেকে কেউ বাচবে না’। এই ইন্দ্রকান্তা কে সেটা আমি স্পষ্ট করে বুঝতে পারি নাই। ইনি আইজারের কোন স্থায়ী সম্প্রদায়ের দেবি বা রানি হবেন হয়তো। আর যতদূর জানি দেবি আইসিস প্রাচীন মিশরীয় দেবি। তিনি প্রাচীন বাংলা বা আরাকান ভূখন্ডে কেমন করে আসলেন।এখানকার মানুষ আইসিস সম্পর্কে জানত না।জানলে তার কিছু নিদর্শন তো পাওয়া যেত প্রত্নতত্ত্ব থেকে । আমি রিজভির শেষ ইচ্ছা পুরনের জন্য তোমাকে অনুরোধ করছি । তার শেষ ইচ্ছা ছিল কোন একজন বিশ্বস্থ লোক তার এই কাজ এগিয়ে নেবেন। তোমার চাইতে বিশ্বস্থ আর কাউকে পাইনি। এই কাজের জন্য তুমিই উপযুক্ত। তার অসমাপ্ত গবেষনা তুমি চালিয়ে নিবে। তোমার ও প্রত্নতত্ব সম্পর্কে বিশেষ আগ্রহ আছে জানি আমি । আশা করি তুমি আমার চিঠি পাওয়া মাত্র আমার সাথে যোগাযগ করবে”
ইতি ,
রাজ ঠাকুর
১-৭-২০০৭
বাস স্ট্যান্ড রোড, চট্টগ্রাম
তিঠিটা আমার হাতে আসে প্রায় বিষ দিন আগে। কিন্তু গুরুত্ব দেয়া হয়নি। শেষ বয়সে মানুষের অদ্ভুত সব চিন্তা ভাবনা আসে । তিলকে তাল বানিয়ে বলে।কিন্তু গত রাতে একটা স্বপ্ন দেখি আমি, একটা পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে আছি। আমার পরনে আদিম যুগের রাজসিক পোশাক। হঠাৎ কোথা থেকে একটা অপরূপ সুন্দরী মেয়ে আসে। উজ্জ্বল সাদা পোশাক তার পরনে।তার সামনে নিজেকে প্লান লাগছে । আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে একটা আংটি পড়িয়ে দিল।কি ধাতুর সেটা বুঝতে পারলাম না।কিন্তু দামী আংটি । এর পর ই অদৃশ্য হয়ে গেল কিছু বুঝে উঠার আগেই । পরপর তিনদিন দেখলাম একই স্বপ্ন । আজকে সকালে উঠে রাজ ঠাকুরের পাঠানো বক্সটা খুলে ভালো করে দেখলাম। প্রাচীন মেহগনী কাঠের তৈরি বক্স। তার ভিতরে কিছু ছোট খাট জিনিসের সাথে একটা আংটি। আমার স্বপ্নে দেখা সেই আংটির মত হুবহু । সিধান্ত নিয়ে নিলাম। আইজার সভ্যতার জট খুলতে হবে আমাকেই ।স্বপ্নে দেখা মেয়েটা কে ??!! আইসিস নাকি ইন্দ্রকান্তা ?!! কার অভিশাপে আইজার সভ্যতা ধ্বংস হয়েছিল ??! রাজসিক পোশাক পড়া ওই আমিটা কে ?!! সেলফোনটা তুলে নিলাম। রাজ ঠাকুরের নাম্বারে ফোন দিলাম।ফোন ধরলো বাসার কাজের ছেলে ।তিনি নাকি এক হপ্তার জন্য দেশের বাহিরে গেছেন । আমার পুরনো লক্কর ঝক্কর হোন্ডা কোম্পানীর মোটর সাইকেলটা বের করলাম।কয়েক জায়গায় যেতে হবে । অদৃশ্য কোন শক্তি যেন কলকাঠি নেড়ে কাজ করাচ্ছে আমাকে দিয়ে......।।কে করাচ্ছে ??!! কেন করাচ্ছে?! আইজার সভ্যতার সাথে এই অদৃশ্য শক্তির সম্পর্ক কী ??
( চ লবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:০৯