নয়নকে সব খুলে বললাম। শুনে কিছুক্ষন চুপ করে রইল।তার পর বলল
- আমার জানা মতে আইজার সভ্যতা বলে কোন সভ্যতা ছিল না প্রাচীন আরাকানে । তবে এটা নিয়ে আরেকটু পড়াশুনা করতে হবে।
- রিজভি আহমেদ একজন অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ছিলেন । তিনি আজেবাজে কথা লিখে যাবেন এটা আমার মনে হয় না।
-হুম, তা ঠিক। তবে আরাকানে মারুখ ইউ নামে একটা স্বাধীন রাজ্য ছিল। ধন সম্পদে প্রাচুর্য ছিল। বিভিন্ন দেশ থেকে বনিকরা ব্যাবসা করতে আসতেন ।এর অন্যতম ছিল দাশ ব্যাবসা। দাশ ব্যাবসার অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠে এই মারুখ ইউ। বিখ্যাত কবি আলাওলকেও এই মারুখ ইউ এর কোন এক বাজারে দাশ হিসেবে বিক্রি করা হয়। ইগনাসিও নামে মিশরীয় এক বনিক এসেছিলেন এই মারুখ ইউ তে। । তার সাথে অনেক সোনা দানা , রত্ন ছিল । কথিত আছে তিনি নাকি এসব ধন রত্ন দস্যু গিরি করে পেয়েছিলেন। মিশরে নাম করা দস্যু ছিলেন। আর কিছু রত্ন পেয়েছিলেন কোন এক ছোট পিরামিডের মমির সাথে।মিশরের রাজা যখন তাকে ধরার জন্য সৈন্য পাঠান। তখন তিনি জাহাজে করে সংগী সাথী নিয়ে সাগরে ভেসে পড়েন অজানার উদ্দেশ্যে। ভাসতে ভাসতে ইগনাসিও আরাকানে চলে আসেন। জাহাজ এসে থামে আকিয়াব বন্দরে ।
- এর পর কি হল?
- এর পর তার সম্পর্কে অত কিছু জানা যায় না। এগুলো আমি পেয়েছি চিনা এক অখ্যাত পরিব্রাজকের নথি থেকে।
- তার কথা গুলো কি বিশ্বাস যোগ্য?
- ততোটা না।
- কেন?
- কেননা তখনকার পরিব্রাজকরা বানিয়ে বানিয়ে অনেক গল্প লিখে রাখতেন । এর কারন ও আছে। তারা যখন যে দেশে যেতেন ,সে সব দেশের রাজারা তাদের ভ্রমন কাহিণী শুনতে চেতেন। আর সাধারন গল্পতো কেউ ই পছন্দ করবে না তাই না? বানিয়ে বানিয়ে উদ্ভট গল্প বলে যেতেন তারা।
- হুম ,তা ঠিক। পরে ইগনাসিও সম্পর্কে আর কিছু কি জানা যায় নাই ?
- হুম। কথিত আছে যে তিনি নাকি মিশরের প্রাচীন দেবি আইসিস এর কোন এক মন্দির থেকে তার সমস্ত ধন সম্পদ লুট করে আকিয়াবে এসেছিল। এগুলো মারুখ ইউ এর লোকদের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল।এক রাতে ইগনাসিও তার দল বল সহ আকিয়াব বন্দরের অদূরেই ডুবে যায়। সাগর ঠান্ডা ছিল । সবাই বলে দেবী আইসিস এর অভিশাপে ভেনিশ হয়ে গেছিল তারা।
- কেন তাকে বা তার জাহাজকে কি আর খুজে পাওয়া যায় নাই ?!
- নাহ। এটাই তো অদ্ভুত যে বন্দরের কাছে ডুবে গেল জাহাজ, আর তাকে খুজে পাওয়া গেল না। টিকিটি ও পাওয়া গেল না!!
- তুই বিশ্বাস করিস না যে ইগনাসিও ডুবে মারা গেছে ?
- নাহ, করি না। সে হয়তো রাতের আধারে অন্য কোন অজানার উদ্দেশ্যে চুপি চুপি বন্দর ছেড়ে পালিয়েছে।এমন ও হতে পারে চট্টগ্রামের দিকে চলে এসেছিল । এই টাইপের লোক স্থায়ি ভাবে এক জায়গায় থাকার মত না।
- তার মানে কি আইজার এর সাথে ইগনাসিওর কোন মিল আছে ?
- এটা বলা যাচ্ছে না। আরো খতিয়ে দেখতে হবে ব্যাপারটা ।
-হুম তুই দেখ। কিছু পেলে সাথে সাথে আমাকে জানাবি।
বেরিয়ে এলাম নয়নের বাসা থেকে । আমার বাসার সামনে এসে থমকে গেলাম। দরজার লক খোলা । ভিতরে কেউ ঢুকেছে । কে হতে পারে ?! চোর ? এখনই ঢোকাটা সমীচিন হবে না । অনুপ্রবেশ কারী ভিতরে আছে কিনা আগে নিশ্চিত হয়ে না হয়ে ,ঢোকা হবে বোকামী। এসব ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশ কারী আত্মরক্ষার জন্য বা পরিচয় গোপন রাখার জন্য কোন কিছু দিয়ে হিট করে বসতে পারে। চুপ করে বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে কান পাতলাম। নাহ ভেতরে কোন সারা শব্দ নাই। তার মানে কেউ নাই। তারপর ও সতর্কতার সাথে ভিতরে ঢুকলাম । আলমারী হাট করে খোলা । রিজভি আহমেদের বক্সটা ও খোলা । পরীক্ষা করে দেখলা টাকা পয়সা বা বক্স এর কোন কিছুই খোয়া যায়নি ।
তাহলে কে এসেছিল ??! অনুপ্রবেশ কারীর সাথে সেই রহস্যময় নারীর কোন মিল আছে কী ? টাকা পয়সা যেহেতু নেয়নি , চুরি করতে আসেনি ,অন্য কোন কারন ছিল। টেবিলের উপরে একটা চিরকুটের দিকে নজর গেল আমার ।
তাতে লেখা
“বাচতে চাইলে দূরে থাকুন”
আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় বলছে অনুপ্রবেশকারির সাথে আজকের রহস্যময়ী নারীর কোন সম্পর্ক নেই। তাহলে আর কে আছে যে আমার আইজার নিয়ে মাথা ঘামানো পছন্দ করছে না। কেনই বা তার এত প্রবলেম ?!! আমাকে হুমকী দিচ্ছে না এগুতে?!! যে করেই হোক এর শেষ দেখতে হবে। (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৭