পর্ব-৯
একটু আগে ফোন আসলো। রাজ ঠাকুরকে যারা অপহরন করেছে তাদের কেউ একজন ফোন দিয়েছে। রিজভি আহমেদের আঁকা ম্যাপটা চেয়েছে। বিনিময়ে রাজ ঠাকুরকে ছেড়ে দেয়া হবে। প্রথমে তারা চেয়েছিল তাদের বলে দেয়া নির্দিষ্ট স্থানে পাঠিয়ে দিতে ম্যাপটা । কিন্তু আমি রাজি হইনি। কেননা তাতে যে রাজঠাকুর মুক্তি পাবে তার নিশ্চয়তা নাই। তাই আমি রাজ ঠাকুরকে আমার সামনে সশরীরে হাজির করার শর্তে রাজি হই।টেকনাফের অদূরে পাহাড়ি এক জংলা জায়গা ঠিক হল। নায়রা আমার সাথে এসেছে।ওই ঘটনার পরদিন সকালে নায়রার সাথে দেখা হয়েছিল সমুদ্র বিচে। তার কাছে ওই দিন রাতে আমার রূমে আসার কথা জিজ্ঞেস করায় সে অকপটে অস্বীকার করেছে। সে নাকি আসে নি।আমি জিজ্ঞেস করলাম
- তাহলে ওই দিন যে স্বপ্ন নিয়ে কি যেন বলে ছিলেন ।সেটা তো আর বিস্তারিত কিছু বললেন না।
- হ্যা বলবো। এখন রাজ ঠাকুর বিপদে আছে । এই ব্যাপার নিয়ে আমাদের পরে আলোচনা করাটাই শ্রেয় নয়কি ।
- হ্যা সেটা ঠিক। কিন্তু মানুষকে রহস্যের মাঝে রেখে দেয়াটা ও এক ধরনের অভদ্রতা।
- তার মানে আমি অভদ্র ?
- না, ঠিক তা না।
- বলেছি তো সময় হলে সব বলবো। এখনো সময় হয়নি ।
- সেই সময় যাতে অতিদ্রুত আসে সৃষ্টিকর্তার কাছে সেই প্রার্থনা করি।
মৃদু হাসলো নায়রা। হাসলে তাকে অসম্পভ সুন্দর লাগে।অন্য সময় গম্ভীর থাকে। খুব আপন কেউ ছাড়া মেয়েদের গম্ভীর রূপটাই পুরুষদের কাছে পছন্দ । অপরিচিত বা স্বল্প পরিচিত মেয়েদের প্রগলভতা ছেলেরা পছন্দ করে না। নায়রা এটা খুব ভালো করেই জানে বোধ হয়। তাই কথা বলে ও একদম মেপে মেপে । তাই তার প্রতি এক ধরনের আকর্ষণ অনুভব করছি ।দিন দিন প্রেমে পড়ে যাচ্ছি হয়ত নায়রার। সাবধানে থাকতে হবে এই মেয়ে থেকে । সুযোগ পেলেই কখন ছোবল দিয়ে বসবে কে জানে ।
নায়রাকে রাজ ঠাকুরের বিপদের কথা বলায় সানন্দে আমার সাথে আসতে রাজি হল।তবে সে অপহরন কারীদের সামনে যাবে না। দুই জন এক সাথে গেলে দুই জনই বিপদে পরতে পারি। নায়রা কে আমি পুরো পুরি বিশ্বাস করি না এটা ঠিক। কেননা তার আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমি এখনো ধোয়াশার মধ্যে আছি ।কাওকে ধোয়াশার মধ্যে রেখে ,তার সাথে ভালো বন্ধুর মত আচরন করা বোকামি। এটা নায়রা বোধ হয় জানে না। কিন্তু এই মুহূর্তে তার সাহায্য নেয়া ছাড়া উপায় নাই আমার। অপহরন কারিরা তাদের কথা রাখল। মুখোশ পড়া দুই জন লোক রাজ ঠাকুরকে ধরে নিয়ে আসছে। নায়রাকে একটু দূরে রেখে এসেছি। যদি কোন বিপদ হয় আমাদের তাহলে পুলিশ কে আর বন্ধু নয়নকে জানাবে। কিন্তু কোন ধরনের ঝামেলা করলো না অপহরন কারীরা। ম্যাপ দিতেই রাজ ঠাকুরকে মুক্তি দিয়ে দিল তারা। রাজ ঠাকুর সহ আমি চলে এলাম তার চট্টগ্রামের বাসায়। নায়রা কে বলা হয়েছিল ভদ্রতার খাতিরে। কিন্তু সে আসে নাই। সে কক্স বাজারের কোন একটা হোটেলে উঠবে বলল। রাজ ঠাকুর চিঠিতে যেটা বলেছিলেন তার থেকে যথেষ্ট শক্ত পোক্ত আছেন। মিথ্যা বিলেছিলেন রাজ ঠাকুর। তার আবার নিজেরই সংশ্লিষ্টতা নেই তো অপহরনের সাথে?!কেন তিনি নিজেই নিজেকে অপহরন করার নাটক সাজাবে ?! কি সব বাজে চিন্তা আসছে।তার মত লোকের বিরুদ্ধে এসব চিন্তা করা ও পাপ।তবে একটা ব্যাপার ক্লিয়ার।শুধু গুপ্ত ধন না। অন্য কোন ব্যাপার জড়িত আছে আইজার এর সাথে।
যার সাথে জামশেদ,নায়রা আর অজানা সেই পক্ষ জড়িত। সবাই মরিয়া হয়ে উঠেছে ইগনাসিওর সম্পদের খোজ পাওয়ার জন্য। কিন্তু কি থাকতে পারে তাতে?!! নয়নকে ফোন করে আসতে বলেছি।একা কুলিয়ে উঠতে পারছি না।ওর সাহায্য দরকার। রাজ ঠাকুরকে জিজ্ঞেস করলাম
- অপহরন কারীদের কাওকে চিনতে পারবেন?
- নাহ।তারা সব সময় মুখোশ পড়ে থাকতো।
- তারা কিভাবে জানলো যে আমার কাছে ম্যাপ আছে?! এই ম্যাপের কথা তো আপনি ও জানতেন না।
- সেটা তো আমি বলতে পারব না বাবা।
- তারা অন্য কোন তথ্য চায়নি?
- নাহ
-রিজভি আহমেদ এই বক্স ছাড়া আর কোন তথ্য দিয়ে গেছে আপনাকে?
- চিঠিতেই তো বললাম, রিজভি এ ব্যাপারে আমার সাথে কোন কথা বলতো না।
- হ্যা। আচ্ছা রিজভি আহমেদের সাথে আইজার নিয়ে কাজ করেছে এমন কারো নাম বলতে পারবেন?
- হ্যা, নারায়ন তার সাথে কাজ করতো। নারায়ন আমার ও বন্ধু। রিজভিরও বন্ধু। ছোট বেলা তিনজনেই এক সাথে স্কুলে পড়েছি। তবে নারায়ন আমাকে দুই চোখে দেখতে পারে না। আমার সাথে কথা বলে না নারায়ন।
- নারায়নের ঠিকানাটা দিতে পারবেন?
বেশ কিছুক্ষন কি যেন চিন্তা করলো রাজ ঠাকুর। দ্বোটানায় আছে সে। তার পর একটা কাগজে লিখে দিলেন খস খস করে। কিছু প্রশ্নের উত্তর মিলাতে পারছি না। নারায়ন, রাজ ঠাকুরের ছোট বেলার বন্ধু। তো কেন নারায়ন তাকে দেখতে পারে না। রিজভি আহমেদ ও জীবিত থাকতে রাজ ঠাকুরের সাথে আইজার নিয়ে কোন আলাপ করতেন না।কেন করতেন না?!! রাজ ঠাকুরকে কি বিশ্বাস করতেন না তিনি?!! দেখা যাক কি হয়। (চলবে
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৪৩