বসুন্ধরা সিটির সামনে দাঁড়িয়ে আছি ।কুখ্যাত সন্ত্রাসী কালা মফিজের সাথে দেখা করব বলে।ওহ আমার নাম বলা হয়নি ।আমি ইশান ।আইজার এর রহস্য সমাধান করার পরে হাতে আর কোন রহস্য না থাকায় “শেষের আলো” পত্রিকায় খন্ডকালীন সাংবাদিকতায় ঢুকেছি। এই পেশায় এডভেঞ্জার কম না। সাথে কিছু টাকা ও দরকার।রহস্য মানেই অভিযানে যাওয়া । আর অভিযানে যেতে টাকা লাগে ।তাই এখানে কাজ করে কিছু টাকা কামিয়ে পরের রহস্য সন্ধ্যানে বেরিয়ে পরা যাবে। বসুন্ধরা সিটিতে সুন্দরী মেয়েরা ঢুকছে আর বের হচ্ছে। দূরে অল্প বয়সী কিছু ছেলে পেলে দাঁড়ানো। তারা হা করে মেয়েদের দেখছে ।যেন এভাবে হা করে মেয়েদের দেখা দুনিয়ার সব চেয়ে মজাদার কাজ ।মাঝে মধ্যে অদ্ভুত অংগ ভংগি করছে । এদের কাজই হল প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে এখানে এসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেয়েদের দেখা । অদ্ভুত দৈর্য্য আছে ছেলেগুলার মেয়েদের দেখার ব্যাপারে। আমি আনমনে পায়চারি করছি। কালা মফিজের এতক্ষনে এসে পরার কথা । তার থেকে আন্ডারওয়ার্ল্ড সম্পর্কে খোজ খবর নিব। নিউজ হবে ।কাটতি বাড়বে পত্রিকার ।হঠাৎ পা পিছলে পড়ে গেলাম । কেউ কলা খেয়ে ছিলকা ফেলে রেখেছিল ।আমার পরে যাওয়া দেখে অদূরে কিছু সুন্দরী মেয়ে হাসছে । আশপাশের সবাই কম বেশি হাসছে।কেউ এগিয়ে আসছে না।কলার ছিলকায় পড়ে যাওয়া যেন মজার কোন ঘটনা । যুবক বয়সী কেউ পড়ে গেলে সেটা দেখে অটোমেটিক হাসি চলে আসে আমাদের।বৃ্দ্ধ কেউ হলে এটা হয়না। কেন হয়না জানি না।অদ্ভুত সাইকোলজি মানুষের । মেয়ে গুলা হেসেই যাচ্ছে । হাসি ছাড়া এই মুহূর্তে তাদের আর কোন কাজ নেই ।বিব্রত বোধ করছি একটু।এত গুলা মানুষের সামনে এভাবে বেক্কেলের মত পড়ে যাওয়া। আরো সতর্ক থাকা উচিত ছিল ।উঠতে গেলাম।কিন্তু পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করলাম ।রগে টান খেয়েছে মনে হয় ।ভিড়ের মধ্যে থেকে এক জনের করুনা হল।সে হাত ধরে টেনে তুলল আমাকে ।একটা রিক্সা ঠিক করে তাতে উঠতে সাহায্য করল। রিক্সা যাচ্ছে শুক্রাবাদ আমার মেসের দিকে । এমন সময় ফর্সা করে এক লোক আমার রিক্সায় উঠে বসলো।প্রতিবাদ করার আগেই বলল ভয় পাবেন না সাংবাদিক ভাই।আমিই কালা মফিজ ।আমার লগেই দেখা করতে আইছিলেন।আমি অবাক হলাম ।লোকটার গায়ের রঙ ফর্সা ।রোদে পুরে যা একটু কালো ভাব এসেছে।কিন্তু তার পরও তার ফর্সা ভাব বোঝা যাচ্ছে ভালই।নিজেকে সে কালা মফিজ বলে পরিচয় দিচ্ছে।
আমি বললাম
-তোমার গায়ের রঙ ফর্সা, কালা মফিজ হল কেন ?!! হওয়া উচিত ছিল ধলা মফিজ।
-কি যে কন ভাই।সব কিছুর ই নিয়ম আছে একটা।মানুষ নিয়মের দাশ ।কালা মফিজ নাম রাখছি যাতে মানুষ নাম হুনলে একটু ডরায় ।ধলা মফিজ নাম হুনলে কি কেউ ভয় পাইব ? পাইব না । কালা মফিজের মধ্যে একটু ভয় ভয় ভাব আছে। সবই সিস্টেম ভাই। মানুষ সিস্টেমের দাশ।
এই লোকযে বহু সেয়ানা কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে।
- তুমি বুঝলে কিভাবে আমিই যে তোমার সাথে দেখা করতে আসছি ?
- এই লাইনে থাকলে চোখ খান খোলা রাখতে হয় ।নাইলে ই ফুটুস ।আমার দুই সাগরেদ আপনার উপর আধা ঘন্টা ধরে নজর রাখছে ।পরে লাইন যখন ক্লিয়ার বলে সিগনাল দিল।আপনারে ডাক দিতে গেলার।এর মধ্যেই আপনি ধপাশ।
বলেই হো হো করে হাসতে লাগলো। হাসার ফলে তার পান খাওয়া লাল দাত গুলা বের হয়ে গেল।জগতের সব চাইতে বিচ্ছিরি দৃশ্য পান খাওয়া দাঁত । মফিজের গালে জোরে একতা চড় মারতে ইচ্ছা করলো।অনেক কষ্টে ইচ্ছাটাকে মাটি চাপা দিলাম । সাংবাদিকদের রাগ থাকতে নেই।তাহলে যখন তখন নেতাদের কথা শুনে রাগ উঠে হুলস্থুল কান্ড ঘটে বসত।
- ভাই ইন্টার ভিউটা জম্মেশ হয় জানি। বড় করে ছাপাবেন আমার ছবিটা ।স্টুডিও থিকা ফটোশুট করে নিয়া আসছি। এই যে ছবি।
- ফটো শুট করছেন কেন ? আমাদের কাছেই তো ক্যামেরা ছিল ?
- পত্রিকা ওয়ালারা ভাল ছবি তুলতে পারে না। নিজের বিবি ই চিনে না পত্রিকায় দেখে আমাকে। এর আগে একবার ইন্টারভিউ দিছিলাম। অবশ্য ছোট পত্রিকা ।আপনাদের “শেষের আলো” তো দেশের এক নাম্বার পত্রিকা,এবার যদি লাইম লাইটে আসতে পারি।
এই লোক বেশি কথা বলে।পান খাওয়া লোক গুলো বেশি কথা বলে । অভিজ্ঞতার থেকে দেখেছি।
- তুমি যে পত্রিকায় ইন্তারভিউ দিবা ।ভয় করে না ?লোক জানা জানি হবে ।পুলিশে ধরে নিয়ে যাবে।
- ভয় কিসের আবার। আমার নিজেরই লাভ ।পত্রিকায় দিলে বিখ্যাত হব । ছোট ছোট কারবারিরা আমার কাছে বায়াত নিবে ।আমার নেটওয়ার্ক বড় হবে ।পুলিশ কিছুদিন ঝামেলা করবে।জেল খাটা লাগবে ছয় মাস ।এই কেসে জেলে গেলেও লাভ আছে।জেলেও ভক্ত কুল জুটে যাবে ।তারা বায়াত গ্রহন করবে । হাত-পা মেসেজ করে দিবে ।জর্দা দিয়া পান খাইতে খাইতে হাত-পা মেসেজ করার মত শান্তি আপনারে বুঝানো যাইব না।স্বরগীয় শান্তি।
- হুম
পায়ে টান মনে হয় ভাল মতই পরেছে।এখন ও ঠিক মত নাড়াতে পারছি না।রিক্সাওয়ালা আমাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে।তার চালানোর গতি এলোমেলো।আমাদের কথা বার্তা শুনে ভয় পেয়েছে বোধ হয়।রিক্সা ফেলে ভো দৌড় দিবে কিনা ভাবছে হয়তো ।এমন সময় রিক্সার চেন পড়ে গেল।চেন ঠিক করার জন্য রিক্সাওয়ালা নামলো ।আমার আন্দাজ ঠিক হল।সুযোগ পেয়েই দিল দৌড় ।অন্ধকার এক গলিতে গিয়ে ঢুকলো সে।আমি জানি ব্যাটা অন্ধকার গলিতে গা ঢাকা দিয়ে আমাদের উপর চোখ রাখছে।আমরা নেমে গেলেই সে বেরিয়ে আসবে।আশ পাশে কোন রিক্সা পাচ্ছি না।কালা মফিজ বলল -ভাই আমি চালাই?
- তুমি রিক্সা চালাতে পার ?!!
- কি যে কন ভাই । ঢাকা শহরে প্রথম আইসা তো এই রিক্সাই চালাইছি দুই বছর ।এই লাইনে আসার একটা মজার ঘটনা শুনবেন ?
- নাহ, শুনতে চাই না।
- আইচ্ছা।পরে একদিন শুনাব।গল্পটা তোলা থাকলো।
- হুম
- এই পর্যন্ত নিরানব্বই টা ফালাইছি।টার্গেট একশটা।
- তুমি নিরানব্বইটা খুন করছ ?!!
- জ্বী।
- রোজ হাসরে কী জবাব দিবা ?
- আমি মানুষ মারি না।মানুষ মারলে গুনাহ হয়।কঠিন গুনাহ।মানুষ দুই প্রকার। মানুষ আর অমানুষ ।অমানুষ আবার অনেক প্রকারের হয়। কুকুর মানুষ,খাটাস মানুষ,কুমানুষ।কুকুর মানুষ মারলে গুনাহ হয় না।এরা সাধারন মানুষকে ক্ষতি করে ।
- তোমার নেক্সট প্লান কি ?
- আমার নেক্সট প্লান এক সুন্দরী মেয়েকে খুন করা ।
- নাম কি তার ?
- মাফ করবেন নাম বলতে পারব না ।
- কবে খুন করবা ?
- আগামি শুক্রবার।
- শুক্রবার পবিত্র দিন ।পবিত্র দিনে খারাপ কাজ করতে হয় না।পবিত্র দিনে ভাল কাজ করতে হয়।
কোন উওর দিল না সে। আমরা আমার মেসের সামনে চলে এসেছি। আমি বললাম
- তুমি আজকে চলে যাও।আগানি শুক্রবার খুনটা করে আসবা ।ওই দিন তোমার ইন্টার ভিউ নিব ।
- একটা কথা বলতাম ।
- কি বলবা বল ।
- আমি যে খুন করব।এটা শুনে আপনার ভয় করে নাই ?
- নাহ।
- কেন করে নাই ?! অন্য মানুষ হলে এতক্ষনে গু বের হয়ে যেত।রিক্সাওয়ালা দেখলেন কিভাবে ভয়ে পালাইলো?!
- বললাম তো আমি ভয় পাই নাই।তুমি এখন যাও।বিরক্ত করবা না ।
- আচ্ছা স্যার রিক্সাটা কি আগুন লাগাই দিমু ?
- কেন ?
- এই যে কত বর শয়তান ।আমাগোরে বিপদে ফালাইয়া পালাইলো।আগুন লাগাই দিলেই ওর উচিত শিক্ষা হবে।
- নাহ দরকার নাই ।যেখানে আছে সেখানেই রেখে দাও।রিক্সাওয়ালা আশপাশেই কোথাও আছে । আমরা চলে গেলে সে এসে নিয়ে যাবে রিক্সা ।আর এই একশ টাকা রিক্সার সিটের উপর রেখে দাও।
- জ্বী আচ্ছা।
আমি ভিতরে ঢুকে গেলাম ।মেস ম্যানেজার বসে আছে । আমি জিজ্ঞেস করলাম
-আসাদ এসেছে ?
-জ্বী বিকাল বেলা এসেছে । আইসাই গেট লাগাইয়া রাখছে ।বাইর হয় না।কেউ ডাকলেও রাগ হয় ।
আসাদ হল আমার এই মেস মেম্বার।ড্যাফোডিল ভার্সিটিতে পরে ।আজ সকালে দেখলাম তার মন খারাপ।আমি জিজ্ঞেস করলাম আসাদ মন খারাপ কেন ?
- সেমিষ্টারের সকল সাবজেক্টে ফেল করেছি।বাবা বহুত কষ্ট করে চল্লিশ হাজার টাকা পাঠিয়েছিল । এখন কিভাবে কি করব বুঝতেছি না। সব এই স্মার্ট ফোনের দোষ ।
- প্রেম কর ?
- নাহ।
- তাহলে ?!!
একটু যেন রাগর কন্ঠ তার,তার সাথে হতাশা মিশানো
-ভাই স্মার্ট ফোন থাকলে কি প্রেম করা লাগে ?!! কখন যে রাত সকাল হয় আর সকাল রাত বোঝার কোনই উপায় নাই !
-তোমার এই সমস্যার একটা সমাধান আছে ।
চখ চক চক করে উঠলো আসাদের।
- কী সমাধান ভাই ?
- হিমু হয়ে যাও ।হিমুরা হলুদ পাঞ্জাবি পরে ।সেই পাঞ্জাবীতে পকেট থাকে না।তারা মোবাইল মানি ব্যাগ ইউজ করে না ।খালি পায়ে হাটে।
আমার কথা মনে হয় আসাদের মনে ধরলো। সকালেই নিউ মার্কেট থেকে একটা হলুদ পাঞ্জাবী কিনে আনলো।পকেট ছাড়া পাঞ্জাবী পাওয়া গেলনা অবশ্য।সেলাই করে পকেট আটকে দিল ।সকালেই পাঞ্জাবী আর খালি পায়ে বের হয়ে গেল ।আর ফিরেছে সন্ধ্যার আগে ।আসাদের দরজার পাশে দাড়ালাম।ভিতরে ব্যাথায় গোংগানর আওয়াজ আসছে। ডাক দিলাম
-আসাদ।
ভিতর থেকে রাগত উত্তর আসলো।
-কে ইশান ভাই ?
-হ্যা দরজা খোল ।
- না খুলব না ।আপনি একটা শয়তানের দুলা ভাই ।
-কেন ভাই এ কথা বলছ ?
-আপনার কথা শুনে খালি পায়ে হেটে ভাংগা কাচে পা কেটে গেছে ।এখন ঠিক মত হাটতে ও পারছি না।ব্যাথায় জ্বর এসে গেছে, আপনার কথা মত স্মার্ট ফোন টা ও এক ভিক্ষুককে দিয়ে দিছি ।স্যান্ডেল ও সব দান করে দিছি ।
আসাদ কে ঘাটালাম না আর।এক সময় নিজে থেকেই বের হয়ে আসবে সে। আমি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে শুয়ে আছি।কালা মফিজকে নিয়ে চিন্তা করছি।ও কোন সুন্দরীকে খুন করতে পারে ??!! আর কেনই বা করবে ?!! একটা মেয়ের সাথে এমন কি শত্রুতা যে খুন করবে ।লোকটা রহস্যময়।শুক্রবার আসতে বলছি।শুক্রবার আসলে ই কিছুটা ক্লিয়ার হওয়া যাবে
(চলবে) Shoaib Hasan
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:২১