২
আজ নিয়ে সাত দিন ধরে আসাদের সেচ্ছায় নির্বাসন চলছে । সে কারো সাথে কথা বলে না ,রুম থেকেও বের হয় না ।মেস ম্যানেজার প্রথম দিন রাতে খেতে ডেকেছিল। কিন্তু আসাদ রহমতের দিকে তেড়ে আসে।রহমত ভয় পেয়ে যায় । দ্বিতীয় বার ডাকার সাহস পায়নি। পরের দিন সকালে আমি একবার চেষ্টা করেছিলাম।
- আসাদ।
-জ্বী ভাই বলেন।
-ভাত খাবা না ?
-না ভাই খাব না।
-কেন খাবা না ?
-খুধা নাই তাই।
-রুমে কি কর বসে বসে ?
-হিমুর বই পড়ছি,হিমুকে নিয়ে রিসার্স করছি ।
-তুমি কি হিমুর বই কিনে এনেছ ?
-জ্বী
-কয়টা কিনেছ ?
-সব গুলো ।
-এখন কোনটা পড়ছ ?
-হিমুর আছে জল ।
-হুম পড়া শেষ হলে আমাকে বলবা ।যখনই একটা বই শেষ হবে।তার উপর একটা কুইজ নেয়া হবে ।
-ভাই মজা করতেছেন ?
-মজা করব কেন ?!! তুমি হিমুর উপর রিসার্স করতেছ ।তোমার অবস্থা কি জানতে হবে না ।পরীক্ষা দিয়ে তুমি প্রথম শ্রেনী থেকে দ্বিতীয় শ্রেনীতে উঠবা । এর পর তৃ্তীয় শ্রেনী। এভাবে মেট্রিক ,ইন্টার,অনার্স,।মাস্টার্স দেন পিএইচডি । তুমি হবা বাংলাদেশের প্রথম হিমুর উপর পিএইচডি ডিগ্রীধারী ব্যাক্তি।
-ভাই আপনি মজা করতেছেন আমার সাথে ।আপনি এখন আসতে পারেন ।
-কেন ?
-আমি এখন ধ্যানে বসব ।
-কেন হিমু কি ধ্যানে বসে ?
-তা না । ধ্যানে বসলে আত্মা কলুষ মুক্ত হয়।ঐশ্বরিক শক্তি চলে আসে মনে।
- ধ্যানের ফলাফল আমাকে জানাবা ।
-আচ্ছা।
দ্বিতীয় দিনও রহমত খাবার দিতে গিয়ে তাড়া খেল আসাদের । বেজায় খেপে গেল রহমত আসাদের উপর ।আমার কাছে নালিশ নিয়ে আসল ।
-ইশান ভাই।
-কিছু বলবা রহমত ?
-আপনার কাছে বিচার দিতাম একখান।
-কি বিচার ?
-এমন বে এনসাফি আল্লাহ ও সহ্য করবে না ।
-ঝেড়ে কাশো রহমত ।
-কাওরে খাইতে সাধা কি অন্যায় ?!
-না ,অন্যায় হবে কেন ?
-তাইলে কন আসাদ ভাইরে খাইতে সাধছি। সে আইজকা আমারে লাঠি নিয়া ধাওয়া দিছে ,মাইনষেরে উপকার করতে যাওয়াডাই ভুল।
-মানুষ না খেয়ে কয়দিন বাচে জানো ?
-না
-পানি না খেয়ে মানুষ বাঁচে সাতদিন আর খাবার না খেয়ে বাঁচে পনের দিন ।আসাদের ঘরে পানি আর খাবারের ব্যাবস্থা যেহেতু নেই।আর এক দুই দিনের মধ্যেই সে রুম থেকে বের হয়ে আসবে ।
-জ্বী আইচ্ছা।
-তুমি আসাদকে আর ঘাটাবা না ।
-জ্বী আইচ্ছা ।আমি তো মনে করছিলাম লোকটা না খাইতে পাইরা মরলে ,পরে থানা পুলিশ করা লাগবো।
-এটা নিয়া তোমাকে মাথা ঘামাতে হবে না ।
-জ্বী আইচ্ছা ।
- এখন যাও।
মানুষ অপরাধ করলে পুলিশকে ভয় পায়।রহমত যেহেতু পুলিশকে ভয় পায়।সে কিছু না কিছু অপরাধ করেছে । হয়তো আগে আন্তঃডাকাত বাহিনির এলিট সদস্য ছিল। বা ছিচকে চোর। নাহলে অকারনে পুলিশ নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
চতুর্থ দিন এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো।রহমত আসাদকে খাবার সাধা বন্ধ করে দিয়েছে । আসাদের গেট এর সামনে চতুর্থ দিন একটা কাগজ লাগানো আঠা দিয়ে।তাতে লেখা “ আর একবার সাধিলেই খাইব “
এর পর থেকে , রহমত নিয়মিত খাবার দিয়ে আসে।দরজার সামনে খাবার রেখে টোকা দেয়।আসাদ খাবার নিয়ে আবার দরজা আটকিয়ে দেয়।তার নির্বাসন তারাতারি শেষ হওয়ার লক্ষন দেখা যাচ্ছে না।
এর মধ্যে শুক্রবার পার হয়ে গেছে ।কালা মফিজের কোন খোজ নাই।একদিন তার সাথে মিরপুরে দেখা ।আমাকে দেখে দৌড়ে আসে
- স্লামালাইকুম সাংবাদিক ভাই।
পিছন ফিরে দেখি মফিজ ।পান খাওয়া দাঁত বের করে হাসছে ।
- কি খবর মফিজ ভাই ।আপনার না শুক্রবার দেখা করার কথা ছিল ?
- কাজটা শেষ করতে পারি নাই ।জরিনারে মারার জন্য দাওডা উঠাইছিলাম কোপ দিমু ।এমন সময় ওর মায়া ভরা মুখটার পানে চাইয়া মনডা কেমন কইরা উডলো ।পরে দৌড় দিয়ে চইল্লা আইছি। মনডা শক্ত করন লাগবো।অতিশিঘ্রই কইরা ফালামু শক্ত ।আপনি টেনস লইয়েন না।
- ওর নাম জরিনা ?
- তওবা তওবা ।নামডা কইয়া ফালাইলাম ।আপনে আবার কাওরে কইয়েন না কইলাম ।
- না বলব না ।এর পর কোপ দেয়ার আগে চোখ বন্ধ করে দিবা ।তাইলে আর মায়া লাগবে না । চোখ খোলা রাখলেই সমস্যা । চোখ খোলা রাখলে পৃথিবীর মায়াময় রূপ আমাদের বিপথে নেয় । দেখ না মানুষ ক্ষমতাশালীর অন্যায় দেখে ও না দেখার ভান করে।চোখ বন্ধ করে রাখে ।যত চোখ কান খোলা রাখবা ততো বিপদ ।
- হ ভাই ঠিক কথা কইছেন ।যতো চোখ বন্ধ রাখা যায় ততোই ভাল মাইনষের জন্য।ভাই ইন্টার ভিঊডা নিবেন না ?
- আগে তুমি তোমার কাজ শেষ কর ।এর পর যখন কোপ দিবা চোখ বন্ধ কইরা দিবা।
- হ ভাই, চোখ বন্ধ কইরা দিমু ।
- জরিনা তোমার কি হয় ?
- এক সময় হইত ।অনেক কিছু হইত এহন হয় না ।পাগলের মত ভালো বাসতাম ।বিয়া করা বিবি ছিল।যেমন সুন্দর ।তেমন ভালো মাইয়া ।একবার পুলিশের কাছে ধরা খাইলাম।মিথ্যা মামলায় ধইরা নিয়া গেল।এই লাইনে একবার আইলে নিস্তার নাই। আকাম করলো কারা আর ধইরা নিয়া গেল আমারে সন্দেহ কইরা ।দুই বছর জেল খাইট্টা বাইর হইছি ।না বাইর হওনই ভালা ছিল । সব কিছু ওলট পালট ।জরিনা পেটের দায়ে বিয়া করছে এক রিক্সাওয়ালারে ।নিজের বিবি এহন পরের বিবি । ওরে ও দোষ দিয়া লাভ নাই। কিছু তো রাইকা যাই নাই যে ও খাইয়া বাচব ।প্যাটের দায়ে করছে সব ।প্যাটের দায়ে।
- জরিনাকে অনেক ভালবাস তাই না ?
জবাব দিতে গিয়ে কালা মফিজের ঠোট কেপে যায় ।অন্য দিকে ঘুরে যায় সে ।চোখের পানি আড়াল করার জন্যই বোধ হয়। পুরুষ মানুষের চোখের পানি ফেলতে হয় না ,অন্য কোন শিক্ষা না পেলেও এই শিক্ষাটা ভাল করেই পেয়েছে মফিজ ।কিন্তু দিন শেষে রক্তে মাংসে গড়া মানুষ সে । কান্না আটকিয়ে ও রাখতে পারে না । তাকে কান্নার সুজোগ করে দিয়ে আমি হাটা ধরলাম। (চলবে )
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৮