somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

#ইশান_এবং_কুখ্যাত_সন্ত্রাসী_কালা_মফিজ (পর্ব-৪)

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




নির্বাচন হবে মেসে। ইছানুরদের মত লোকরা সহজে হাল ছাড়ার পাত্র না। আমাকে চ্যাংদোলা করে ফেলে দিতে না পেরে সে নতুন ছক কষেছে। মেসের নিয়ন্ত্রন আমার হাত থেকে নিয়েই ছাড়বে । সভাপতির পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।এই পদের জন্য নির্বাচন হবে ।আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না বললাম। কিন্তু রহমত এর চাপাচাপিতে রাজি হলাম । দুই সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিটি গঠন করা হয়েছে । নাছিম আর মিজান সেই কমিশনের সদস্য । এই দুইজনকে আমি টাকা ধার দিয়েছিম। কিন্তু ওই দিন বিচারের দিনে তারাই আমার বিরোধিতা করে বসে। ইছানুরের ভাষায় নির্বাচন কমিটি নিরপেক্ষ হয়েছে । গোপন ব্যালট পেপারে ভোট নেয়া হবে । মেসে মেম্বার টোটাল ষোল জন । নির্বাচন হবে শুনে মফিজ এসে হাজির । তার এক দফা এক দাবি তাকে ভোটাধিকার দিতে হবে । কিন্তু নির্বাচন কমিশন নাকচ করে দেয় তার দাবী। কারন সে মেস মেম্বার না এই কারন দেখিয়ে। কিন্তু সে অনশনে যাওয়ার আর পেশী শক্তি দেখিয়ে তার দাবী আদায় করে নেয়। কমিশন ভয়ে রাজি হয়ে যায়। আগামী কাল ভোট নেয়া হবে । ইছানুরের পক্ষে তার লোকরা প্রচারনা চালাচ্ছে। আমার পক্ষে রহমত আর মফিজ। এর মধ্যে মফিজের উৎসাহই বেশি । ইছানুরের পক্ষের লোকজন দেয়ালে রংগিন কাগজ সেটেছে । তাতে ইছানুরের নামে বিভিন্ন গুন সুচক লেখা । বেশির ভাগই ইছানুরের নিজের বলে দেয়া গুন বাচক বাক্য লেখা তাতে। নিজের ঢোল নিজে পিটানো যাকে বলে। দুই একটা নমুনা
“ইছানুর ভাইয়ের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র”
“ইছানুর ভায়ের দুই নয়ন ,আমাদের মেসের উন্নয়্ন”
ইছানুরের পক্ষে লোকজন বেশি। খোজ করতেই কারন পাওয়া গেল। দেধারচে টাকা খরচ করছে সে। মেসের সামনের দোকানে বলে দেয়া হয়েছে। এই এক দিনে এই মেস থেকে যেই যাবে, চা সিগারেটের কোন টাকা নেয়া হবে না। ইছানুর ই দিবে সবার টাকা।সবাই একটু পর পরই গিয়ে চা খেয়ে আসছে । যে সিগারেট খায় না সে ও সিগারেট খেয়ে আসছে । বেশির ভাগ নির্বাচনে দেখা যায় মানুষ একজনের টা খেয়ে আরেকজন কে ভোট দেয় । কিছু মেস মেম্বার নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়েছে । রহমত ও মাঝে মধ্যে আমার অগোচরে গিয়ে দুই এক কাপ চা খেয়ে এসেছে ফ্রি দোকান থেকে ।একবার আমার চোখের সামনে পড়ে যায়। আমার সামনে এসে লজ্জিত ভংগিতে বলে । ভাই চা খাইছি দেইখা যে ভোট ও দিমু এই চিন্তা কইরা ঘুমাক ইছানুর।হালা বদের হাড্ডি। আপনিই জিতবেন ভাই। সবাই ওর পক্ষে ফালাফালি করছে । ভোট দেয়ার সময় আপনারেই দিবে । ফকডে কিছু ফাও খাইয়া লইতাছে। অলরেডি দুই হাজার টাকার বিল হইয়া গেছে । নির্বাচন হইতে হইতে দশ হাজার ছারাইব। মফিজকে দেখা যাচ্ছে না । সে আসল পরের দিন সকালে । সাথে চারজন লোক নিয়া আসছে ।এসেই তারা স্লোগান দেয়া শুরু করলো, আমার ভাই তোমার ভাই ,ইশান ভাই ইশান ভাই ।
যে লোক গুলোকে জীবনে দেখি নাই,চিনি না।তারা হেরে গলায় চিৎকার দিচ্ছে আমার পক্ষে । বুঝলাম লোকগুলোকে মফিজ ভাড়া করে নিয়ে এসেছে । আমি আমার রুমে বসে আছি।নির্বাচন নিয়ে আমার মধ্যে কোন আগ্রহ নাই। কিন্তু বাকিদের উত্তেজনা চরম ।একটু পরে হট্টগোলের শব্দ পাওয়া গেল। আমি বের হলাম একটু পরে।ততক্ষনে হৈচৈ থেমে গেছে ।আমি মফিজকে ডাক দিলাম
-মফিজ।
- জ্বী ভাই
-এদিকে আস
একটু পরে মফিজ আমার রুমে ঢুকলো।
-ইশান ভাই।
- কি নিয়ে হট্টগোল করছ ?
-ইছানুর আমার লোকদের নির্বাচনী প্রচারনায় কাজে লাগাতে দিবে না?
- কি বলে ?
-তারা নির্বাচন কমিশনের কাছে বিচার দিয়েছে ,বহিরাগত কোন লোক দিয়ে নির্বাচনী প্রচারনা চালানো যাবে না।
- ঠিকই তো বলছে । তুমি কেন তাদের এনেছ?
- এইডা কি কইলেন ভাই।নির্বাচনী আচরন বিধিতে কি এই ধারা আছে যে বাহিরের লোক প্রচারনা চালাতে পারবে না ?
- নাহ ,তা নাই।
-ভাই এই মফিজ কাঁচা কাম করে না।
- পরে কিভাবে ঠান্ডা হল ইছানুর ?!
-এই যে মেশিন দেইখা ।
-তুমি পিস্তল নিয়া আসছ ??!!!
- আরে ভাই টেনস লইয়েন না।আসল না।খেলনা পিস্তল।এইডা দেইখাই হাগা মুতা বাইরাই গেছে ইছানুরের ।
-হুম
-আসি ভাই তাইলে,অনেক কাম পইরা আছে ।আজ রাইতে আবার নির্বাচন উপলক্ষে সেই রকম খানা দানার ব্যাবস্থা করা হইছে ,আমি নিজ হাতে পাকামু।
-হুম যাও।
আমি একটা সান্ধ্য পত্রিকা নিয়ে বসলাম। গতকাল মতিঝিল থেকে আসার সময় নিয়ে এসেছিলাম এটা । চার টাকা মাত্র দাম।সান্ধ্য পত্রিকা গুলো ভালই করে ।লেখা আর মান খারাপ না ।একটা আর্টিকেল এর শিরোনামের দিকে চোখ আটকে যাওয়ায় কিনি পত্রিকাটা। শিরোনামটা ছিল এরকম “মানুষ কি এই গ্রহের মানুষ না এলিয়েন “ । কৌতুহলদ্দিপক শিরোনাম । সম্প্রতি আমেরিকান বিজ্ঞানী সিলভার দাবী করেছে মানুষ নাকি এই পৃথিবীর না। ভীন গ্রহ থেকে আসা এলিয়েন । তার “হিউম্যান আর নট ফ্রম আর্থ” নামক বইতে তিনি বলেছেন, মানুষের পূর্ব পুরুষরা নাকি উন্নত কোন গ্রহ থেকে এসেছিল। মানে মানুষের পূর্ব পুরুষকে কোন এক অজানা কারনে স্পেস শীপে করে এনে ছেড়ে দিয়ে যায় এই গ্রহে। দেখার জন্য তারা এই গ্রহের সাথে ক্ষাপ খাইয়ে নিতে পারে কিনা ।মানুষ যে এই গ্রহের না তার সপক্ষে সিলভার বেশ কিছু যুক্তি দেখিয়েছেন।
যুক্তি
১) পৃথিবীর সকল প্রানী প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগে ক্ষাপ খাইয়ে নিতে পারে নিজেকে।কিন্তু মানুষ পারে না। তার বিভিন্ন উপকরনের দরকার বাঁচার জন্য যেমন ঘর বা অন্য কোন কিছুর আশ্রয় ।
২) মানুষ ই এক মাত্র প্রানী যারা পথিবীতে সূর্যের আলোর নিচে বেশিক্ষন থাকতে পারে না,কিন্তু আবার সূর্যকে কাজে লাগে লাগায় সে।
৩) মানুষের মাথা জন্মের সময় বড় থাকে অনেক।আর মানুষ অন্য যে কোন প্রানীর থেকে সন্তান জন্ম দেয়ার সময় বেশি কষ্টের স্বীকার হয়। সন্তান জন্মদান করতে গিয়ে মাতৃ মৃত্যুর হার মানুষের মধ্যেই বেশি। এর কারন এই পৃথিবীর পরিবেশে মানুষ এখন ও মানিয়ে নিতে পারেনি নিজেকে।
৪) মানুষ ই এক মাত্র প্রানী যারা প্রকৃতি থেকে পাওয়া খাবার সরাসরি খেতে চায় না। বিভিন্ন প্রক্রিয়াকরন এর মধ্য দিয়ে খায় খাবার।
৫) ডারউইনের তত্ত্ব মতে যদি মানুষ বিবর্তনের মধ্য দিয়ে এসে থাকে ।তাহলে সমসাময়িক সময়ে মানুষের সমান না হলে ও কাছা কাছি বুদ্ধিমান কিছু প্রানী থাকতো।কিন্তু মানুষের কাছা কাছি কোন বুদ্ধিমান প্রানী পৃথিবীতে নাই ।
৬) মানুষ তার চাইতে কম গ্রাভিটি সম্পন্ন গ্রহ থেকে এসেছে।এর জন্য পৃথিবীতে সে একটু হাটা চলা করলেই হাপিয়ে যায়
যুক্তিগুলো খারাপ না। কিছুটা হাইপো থিসিস এর মত হলে ও ব্যাপারটা নিয়ে বিজ্ঞানীদের ভাবার আছে অনেক ।

নির্বাচনের প্রচারনা তুমুল ভাবে চলছে ।কালা মফিজ স্লোগান দিলে বিরধী দল থেকে ও স্লোগান দেয়া হয় । আমি রুমের থেকে বের হইনি । মফিজ রান্না করেছে । খাওয়া দাওয়া আগে করা হবে। এর পরে ভোট নেয়া হবে।কারন ভোটে হার জিতের ব্যাপার আছে।পরে খাওয়ার মুড নষ্ট হয়ে যাবে তাই। সবাই পাতিল চেটে পুটে খেল । এর পর ভোট নেয়ার পালা । আসাদ তার নির্বাসন থেকে সাময়িক সময়ের জন্য বেরিয়ে এসেছে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য।আসাদ কে বললাম
-আসাদ কেমন আছ।
-ভাই ভাল আছি।
- তোমার হিমু হওয়ার ট্রেইনিং কবে শেষ হবে ?
-এই শেষের পথে।
- তোমার ট্রেইনিং শেষ হলে একটা স্কুল খুলব।সেখানে হিমু হওয়ার ট্রেইনিং দেয়া হবে।তুমি হবা প্রধান ইন্সট্রাকটর।
-আচ্ছা ভাই।
ভোটা ভুটি শেষ হল । ভোট গননার পালা শুরু হল। ফলাফল ঘোষনা করা হল কিছুক্ষন পরেই । ফলাফল ,আমি বিপুল ব্যাবধানে হারলাম । টোটাল সতের ভোটের মধ্যে আমি আমারটা সহ পেলাম তিনটি ভোট। রহমতকে দেখলাম বিরোধীদলের সাথে হাত মিলিয়েছে । তাদের সাথে বিজয়ের খুশিতে শামিল হয়েছে ।আমি নিশ্চিত আমার এই তিনটি ভোটের মধ্যে আসাদ আর মফিজেরটা আছে।রহমত ওই পক্ষে ভোট দিয়েছে।জগৎ বড় রহস্যময় । মানুষ একে অপরকে ল্যাংমারার সুজোগ পেলে এক মুহূর্ত দেরি করে না। অনেক দিন আগে একটা নাটক দেখেছিলাম,নাম চলিতেছে সার্কাস। নাটকটার কথা মনে পড়ে গেল আজকে ।।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:০০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×