
আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। সামনে বৃত্তি পরীক্ষা তাই আমাদের জন্য আলাদা কোচিং ক্লাস হচ্ছিল। অংক স্যার এসে আমাদেরকে একটি অংক করতে দেন। সবাই অংক শেষ করে খাতা স্যারের কাছে জমা দেয়। কিছুক্ষণ পর স্যার আমাকে হুংকার দিয়ে ডাকলেন, এই এদিকে আয়। আমি গুটি গুটি পায়ে স্যারের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। স্যার বললেন দুই হাত মেলে ধর। আমি দুই হাত মেলে ধরতেই তার প্রচন্ড জোরে চিনা বেত দিয়ে দুইটা বাড়ি দিলেন। তারপর খাতা ছুড়ে দিয়ে বললেন, যা দেখ কি ভুল হয়েছে। আমি দেখলাম অংক ঠিকই হয়েছে কিন্তু উত্তর লেখার সময় দশমীক দিতে ভুল হয়েছিল তাই স্যার এভাবে মারলেন। ক্লাস শেষে স্যার চলে গেলেন । তখন ক্লাসের বন্ধুরা এসে বলল এই তোর হাত দিয়ে তো রক্ত পড়ছে! আমি দেখলাম আমার সাদা শার্টের ফাঁকে দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। এরপর বাসায় চলে গেলাম। দুদিন প্রচন্ড জ্বরের কারণে স্কুল যেতে পারলাম না। আমার এক বন্ধু আমার খোঁজ নিতে এসেছিল কেন স্কুলে যাচ্ছি না। আমার সার্বিক অবস্থা দেখে সে স্কুলে গিয়ে স্যারদের ব্যাপারটা জানালো। সেদিন বিকেলেই সব স্যার এমন কি হেড স্যার সহ আমাদের বাসায় এসেছিলেন আমাকে দেখতে। স্যারে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন , আমি তো তোর ভালোর জন্যই মেরেছিলাম এত জোরে হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি। আমি লজ্জিত মুখে মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার খুব আনন্দ হচ্ছিল সব স্যার আমাকে দেখতে এসেছে। ওদিকে আমার মা স্যারদের কে চা নাস্তা দেওয়ার জন্য দৌড়াদৌড়ি করছেন। স্যাররা আমাকে দেখতে এসেছেন এর চেয়ে সৌভাগ্য আর কি হতে পারে।
২০২৪ এ বসে শিক্ষকদের প্রতি ছাত্র-ছাত্রীদের এমন অমানবিক আচরণ মেনে নিতে পারছি না। শিক্ষকরা কোন দোষ করলে তার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীরা এক দফা দাবি দিয়ে শিক্ষকদেরকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে হেনস্ত করে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করছে। ভাবছি বাধাহীন এমন স্বাধীনতার স্রোত আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যায়.......
আল্লাহই তো বলেছেন সময়ের কসম।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


