somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওয়ান হেডলাইট

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্রিং ক্রিং

- হ্যালো হাসিন, স্লামালাইকুম কি খবর
- আরিফ হুজুর, ফ্রি আছ? তাহলে শর্মা হাউজে চলে আসো
- পুরা ফ্রি - তুমি কই?
- এইতো জসীমউদ্দিনে, মাত্র বের হলাম
- আচ্ছা আসতেছি

আরিফ, অরুন আর রুমন সাধারণত ফ্রি থাকে শনিবারে। আমিও থাকি, কিন্তু গা ম্যাজম্যাজ করে বলে সকাল বেলা বের হওয়া হয় না। বিকেলে কিছু করার না পেলে মন খারাপ হয়ে যায়। তার উপরে বিষণ্ণ রকমের সন্ধ্যার আলো থাকলে তো কথাই নেই। আমার তখন আর কিছু করতে ইচ্ছে করে না - তাই একা বের হলে এই তিনজনের কাউকে না কাউকে পাওয়া যায় সঙ্গী হিসেবে, কপাল ভাল থাকলে সবাইকেই। আমিও কিছুক্ষন কথা বলার এই সুযোগ হারাতে চাইনা শনিবারে।

আজকে তিনজনকেই ফ্রি পাওয়া গেল। আমি পৌঁছলাম সবার আগে। শর্মা হাউজে ঢুকে দেখি টিভিতে মিলার নাচ চলছে, ফুয়াদ ড্রামসে। সেটে দেখি হেলিকপ্টারও আছে। ইদানীং সবকিছুতে হেলিকপ্টার নেয়া কি হুজুগ হয়ে গেল নাকি! কয়েকদিন আগে কোন নায়ক যেন কোন পরিচালক কে নিয়ে গ্রামে গিয়েছিল একজন কে বিয়ে করতে। আমি সাত পাঁচ ভাবতে থাকি, আশে পাশের টেবিলে অসংখ্য মানুষ। কেউ গল্প করছে, কেউ হাসছে আবার কেউ মনোযোগ দিয়ে মেনু দেখার ফাঁকে ফাঁকে মিলাকে দেখায় ব্যাস্ত। হরেক রঙের মানুষ!

আরিফ ঢুকল পাক্কা আধা ঘন্টা পরে, আমি তখন ক্ষুধা সামলাতে না পেরে একটা শর্মার শেষ কামড় দিয়ে মুখ মুছছি। রেস্টুরেন্টের লোকেরা অকাজের খদ্দের পেলে বড়ই বিরক্ত হয়। ওয়েটার থেকে শুরু করে ঝাড়ুদার পর্যন্ত তাকায় কেমন যেন চোখে। সেই দৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্যই আমি সাধারণত তাড়াতাড়ি অর্ডার দিয়ে দেই। আরিফ দরজা দিয়ে ঢুকে সেই চিরপরিচিত হাসি দিয়ে বলল, আরে তোমার খাওয়া শেষ? আরে নাহ, তোমার জন্য এখনও তো অর্ডারই দেই নাই, বলে আমি একটা উইংসের অর্ডার দেই। আচ্ছা শোন আরিফ, অরুন আর রুমন আসলে কিন্তু আমরা ওদের জন্য অর্ডার দিবো না, এমন ভাব করব যে আমাদের খাওয়া শেষ আর এখন চলে যাবো। শুনে আরিফ মিটিমিটি হাসে। আমরা ব্যাস্ত হই ছেলেমানুষী কথাবার্তায়।

মাথার উপরে হঠাৎ চটকানা, তারপরেই পাশের সীটে ধপাস করে বসে অরুন। সামনের সীটে রুমন। আমরা সবাই মিলে পুরোনো দিনের গল্প করি। অরুন জানায় যে সে টাকা জমাচ্ছে একটা ক্যামেরা কেনার জন্য। আমার ক্যামেরা টা নিয়ে কিছুক্ষন এটার ওটার ছবিও তুলে ফেলে। আমি দেখি পাশের টেবিল থেকে কেউ বিরক্ত হচ্ছে কিনা। অনেকেই অনেক সময় ভেবে বসে যে আসলে তার ছবি তোলা হল কিনা - তাই আমি ছবি তোলার সময় খুব সাবধান থাকি ইদানীং।

আরিফের গল্প শুনি, ওর গাড়িতে কেমন করে কয়েকদিন আগে আরেকটা মটরবাইক ধাক্কা মারল সেটা নিয়ে অনেকক্ষন আলোচনা চলে। আমি রুমনকে বলি রুমন তোর বউ কিন্তু দিন দিন সুন্দর হয়ে যাচ্ছে রে - শুনেই রুমন যথারীতি মেজাজ দেখায় বলে তাতে তোর কিরে হারামজাদা! আমি হাসি - আমি জানি এই কথা বললেই রুমন ক্ষেপে যাবে

আমরা কথা বলি, আমাদের কথা শেষ হয় না। আমার মনে হয় এই সময় ঘড়ির কাঁটাটা আরেকটু ধীরে চললে মন্দ হত না। মাথার ভিতে জনি হেটের জ্যাজ বাজতে থাকে "আই উইশ আি কুড টার্ন ব্যাক দ্য ক্লক" - আমরা কথা বলতে থাকি, আমাদের কথা শেষ হয় না।

আরিফ আমার গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যায় আড়ঙের সামনে। আড়ঙের বিলবোর্ডে মডেলদের ছবি দেখলে আমার সবসময়ই মনে হয় কেমন করে তোলে এইরকম ছবি! ওদের মুখের ভাব, চোখের চাহনী সব মিলিয়ে কেমন একটা সেক্সি এক্সপ্রেশন! নাহ, সব কিছু কি আর সবাইকে দিয়ে হয়!

আরিফকে নামিয়ে দেই বনানীর মোড়ে। ট্রাফিক জ্যাম কিছুটা কম থাকে শনিবারে। নিঃশব্দে স্টিয়ারিং ধরে বসে থাকি। মনে পড়ে বাসায় যাওয়ার কথা। সুমি শাড়ি পরতে একদম পছন্দ করে না, তবে আমার জোরাজুরিতে ইদানীং পরে। শাড়ির চেয়ে সুন্দর ড্রেস আর কিছু হতে পারে! শাড়ি পরলে সুমি কে কি যে সুন্দর লাগে আমার! আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি - সুমির কথা ভাবতে ভাবতে রাস্তায় সাঁই সাঁই করে পার হয়ে যায় অন্য গাড়িগুলো! আমি স্টিয়ারিং ধরে বসে থাকি চুপচাপ

গাড়ির মিউজিক প্লেয়ারে মৃদুস্বরে ওয়ালফ্লাওয়ারের জ্যাকব ডিলান গাইতে থাকে

মি অ্যান্ড সিন্ডারেলা
উই পুট ইট অল টুগেদার
উই ক্যান ড্রাইভ ইট হোম, উইথ ওয়ান হেডলাইট...

আমি স্টিয়ারিং ছাড়ি না, মাঝে মাঝে গলা মিলাই জ্যাকবের সাথে। গাড়ি ৮০-৯০-১০০ হয়ে চলতে থাকে, সময় যেন আর ফুরোয় না!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১:২৩
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×