somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক ছিল রাজা, আর এক ছিল রানী...

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল থেকে মাথা ব্যাথায় অবস্থা কাহিল। মাথা ব্যাথা করলে শুয়ে থেকেও লাভ হয় না, বরং চিনচিনে ভাব টা আস্তে আস্তে গোটা গায়ে ছড়িয়ে পড়ে। আমার স্বভাব হল মাথার উপর আরেকটা বালিশ চাপা দিয়ে ঘুমানো, কিন্তু গরম পড়ে যাওয়ায় সেটাও করা যাচ্ছে না। মাথা ভিজে টপটপ করে পানি পড়ে বালিশ চাপা দিলেই - সব মিলিয়ে একটা বিতিকিচ্ছিরি অবস্থায় শুরু হল দিন টা।

আজ অফিস ছুটি থাকায় কাজের তেমন তাড়া নেই। বাসায় থাকায় সুমি গরুর মাংস রান্না করল। এবার বানিজ্য মেলায় একজন সেলসম্যান হাতে একডজন "স্বাদ-এ-ম্যাজিক" ধরিয়ে দিয়েছিল। পাঁচটাকা করে এক এক পিস হওয়ায় তেমন গায়ে লাগেনি। কিন্তু নাম টা মজার, "স্বাদ-এ-ম্যাজিক" "স্বাদ-এ-ম্যাজিক" - কেমন যেন লুপে পড়ে ফাটা রেকর্ডের মত ঘুরতে থাকে মাথায়। আজকে সুমিকে বলেছিলাম মাংসে সেই ম্যাজিক দিতে, ও দিয়েছিলও - কিন্তু খাওয়ার পরে আসলে চাউর করা গেল না ম্যাজিকের স্বাদ কেমন। বোধহয় আমার অনেক গুলো কেনা কাটা প্রজেক্টের মতই এটাও ফ্লপ খেল। তবে ষাট টাকায় এটা কেনার পর সেলসম্যান যে হাসিটা দিয়েছিল সেটা পাঁচশো ষাট টাকাতেও পাওয়া যায় না। স্বাদ-এ-ম্যাজিক, স্বাদ-এ-ম্যাজিক - নামটা সুন্দর! ব্যাথা হয়ে যাওয়া মাথায় এখনো লুপটা চলছেই

ফরহাদ কে নিয়ে বের হয়েছি দুপুর বেলা। ইদানিং উত্তরার অবস্থা কেমন যেন হয়ে গিয়েছে। স্কুল ছুটির এই সময়টায় রাস্তা ঘাট একেবারে ঠাসা থাকে। একটা রিকশা পড়েছিল সামনে, অনেকক্ষন হর্ন দেয়ার পরেও সরালো না। অবশেষে বের হওয়ার সময় আগুন গরম চোখে সেই রিকশা ওয়ালার দিকে তাকাতেই দেখি তার নির্লিপ্ত চাহনী। কারো আগুন গরম দৃষ্টি সেই মুখে কোন ভাবান্তর তৈরী করে না। আমি অ্যাকসেলাটরে পায়ের চাপ বাড়াই। গায়ের গরম রক্ত যেন ইঞ্জিনের মাঝেও টগবগ করে ফুটতে থাকে। গাড়ি এক লাফে এগিয়ে চলে রাস্তা বরাবার। অ্যাকসেলারেটর টা একদম চেপে ধরে রাখতে পারলে ভালো হত, ভাবতে না ভাবতেই ক্লান্ত ট্রাফিক পুলিশ তার ব্যাটন টা বাড়িয়ে ধরে সামনে। লাল বাতিটা এতক্ষনে চোখে পড়ে আমার।

কোথাও যাওয়ার থাকে না এই রকম সময় গুলোতে। আমি উদ্দেশ্য ছাড়া ঘুরি। এদিকে সেদিকে তাকাই, কখনো জোরে ছুটি, কখনো আস্তে। এই সময়টুকু আমার একান্তই নিজের। একদম আমার। একটা গাড়ি বিশ্বরোডের একদম মোড়ের উপরে এসে ডানে ঘোরার সিগন্যাল দেয়। এই নাদুস নুদুস এসির বাতাস খাওয়া মানুষগুলোকে আমার ঘেন্না লাগে। এরা কখনো আরেকজনের দিকে তাকায় না। গাড়িটা ক্রস করার সময় আমি আগুন গরম চোখে ড্রাইভারের দিকে তাকাই - সেই রিকশাওয়ালার নির্লিপ্ত চাহনী আর এর চেয়ে থাকার মাঝে কোন পার্থক্য নেই। দিনটা কেমন যেন খারাপ যাচ্ছে খুবই। সুমির সাথে ঝগড়া হবে নিশ্চিত!

নিউমার্কেটে নামলাম অনেকদিন পরে। শেষ কবে এসেছিলাম, দিন গুনতে গুনতে সেটা মেলাতে পারলাম না। মাসুদ ইলেক্ট্রনিক্সে যাওয়া দরকার। খোকন ভাইয়ের কাছে কোন ভালো পুরোনো লেন্স আছে কিনা সেটা একবার দেখব। নিউমার্কেটের একদম মাঝখানের জায়গাটা কেমন গোলক ধাঁধার মত লাগে আমার। আমি সেদিক দিয়ে ঢুকে বেশ কিছুক্ষন ঘোরাফেরা করে মাসুদ ইলেক্ট্রনিক্স খুঁজে পেলাম না। সামনের মোড়টার পরেই মনে হয়, ভেবে মোড় ঘুরতেই দেখি এ মা, এতো ঠিক যেখান দিয়ে ঢুকেছিলাম সেখানেই। অবশেষে একজনকে জিজ্ঞেস করতেই সে বলে দিল কোনদিক দিয়ে কোনদিকে যেতে হবে। আমি দিক ঠিক রাখতে পারি না। কেউ যখন আমাকে বলে দক্ষিন দিকে যেতে হবে, আমি একটু হেসে আবার জিজ্ঞেস করে বসি, দক্ষিন দিক টা যেন কোন দিকে! এত বয়স হল, তাও দিক ঠিক রাখতে পারি না আমি।

মাসুদ ইলেক্ট্রনিক্সে কোন লেন্স পেলাম না। পেলাম একটা হুড। পছন্দ হল খুব। তবে সাড়ে ছয়শো টাকা দিয়ে কিনবো কিনা ভাবতে ভাবতে না পেরে কিনেই ফেললাম। সেটা নিয়ে বের হতেই নিউমার্কেটের মাঝখানে দেখি খুব ভীড়। আমি ভাবলাম না যেন কি, মারামারি শুরু হল নাকি কোথাও! দেশের অবস্থা ভালো না। কখন কোথায় কি ঘটে কিচ্ছু বোঝা যায় না। সেই ভীড় ঠেলে একটু এগিয়ে একজনকে জিজ্ঞেস করতেই সে পান খাওয়া দাঁতগুলো আকর্ণ বিস্তৃত করে বলল "বাংলালিংকের অ্যাড হচ্ছে ভাইজান"। বাহ, ভালই তো - দেখি কেমন করে অ্যাডের শুটিং করে। একপাশে তাকাতেই দেখি শুভজ খান আরো দুই তিনটা মেয়ের সাথে হেসে হেসে গল্প করছে। এই ছেলেটার ছবি তোলার হাত ভালোই। আজকে সামনা সামনি দেখলাম। একটা শর্টস, একটা সানগ্লাসের সাথে হাওয়াই চপ্পল। কিন্তু মজার ব্যপার হল পায়ে মোজা পরা। কিছুক্ষন দেখলাম সবার নাচানাচি

ফেরার পথে মাথাব্যাথাটা নতুন করে মাথাচাঁড়া দিয়ে উঠলো। একদিন পরেই ভ্যালেন্টাইন্স ডে। সুমির জন্য খুব ছোট হলেও কিছু একটা কিনবো ভেবে একটা লিপস্টিক আর একটা নেইলপলিশ কিনলাম। দোকানের এক কোনায় দেখি একটা সাদা মগ ঝকমক করছে, গায়ে লেখা "লাভ ইউ সন"। আচ্ছা - আমি মনে মনে হাসলাম। এটা আফিফ কে দিলে মজা পাবে ছেলেটা। কিন্তু আফিফের জন্য এখন আর একা একা কিছু কেনা যায় না। কিনলেই ইভান এসে ধরে বসে, বাবাই আমার গিফট দাও। আর বাসায় একটা মেয়ে থাকে, ওদের সাথে খেলে আর সুমিকে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে। ইভানের জন্য কয়েকটা বাঘ সিংহ কেনার পরে মেয়েটার জন্য একটা পুতুলের সেট কিনলাম। পরের মেয়ে হলেও বাচ্চা তো! আমি আমার ছেলেদের জন্য কোন কিছু কিনলে সবসময়েই ওর জন্যও কিনি। ভাগ্যের ফেরে আমার বাসায় থাকে মেয়েটা। আমি অপরাধবোধে ভুগি খুব। আর তাই সবসময় চেষ্টা করি সেও যেন একটু ভালো ফিল করে। ওর হাতে আমি বা সুমি কিছু কিনে দিলে মেয়েটা খুব খুশি হয়। ওর হাতে পুতুলের সেটটা দেয়ার পরে ও বলল "থ্যাংকিউ" - আফিফের দেখাদেখি মেয়েটাও শিখেছে থ্যাংকিউ বলা - আমার খুব মজা লাগে এটা দেখলে :)

বাসায় এসে গান শুনছি তপুর। ছেলেটার গলা খুব ভালো। অন্যরকম করে গায়, অন্যদের সাথে মেলে না

"তোমার মনে আছে যা বলো আমিও বলে ফেলি
মন যা চাইছে তাই করো, না করাটাই বোকামী..."

আমি মাথা নাড়াই, আসলেই, মন যা চাইছে সেটা করে ফেলাটাই সবচেয়ে ভালো। আমি টাইপ করতে থাকি, খটাখট খটাখট শব্দ ওঠে...

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:৩১
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×