somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লৌকিক অথবা অলৌকিক

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সন্ধায় বাসায় ফিরে ফ্রেস হয়ে বসতে না বসতেই টেক্সট পেলাম , তুমি কি একটু আস্তে পারবে এখন আমার বাসায় । টেক্সট করেছেন আমার ভার্সিটির প্রফেসর আজমল গনি ।
আমি এখানে গনিত এর উপর পি এইচ ডি করছি , তিনি আমার কোর্স টিচার । জানুয়ারির এই সময় কানাডায় প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়ে , গায়ের উপরে কোট চাপিয়ে তাই বাসা থেকে বের হলাম । আমার বাসা থেকে পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ ।
কলিং বেল চাপার সঙ্গে সঙ্গে আজমল স্যার দরজা খুলে দিলেন , আমাকে দেখে মৃদু হেসে বললেন কেমন আছো বাবা ।
জি ভালো আছি । হঠাৎ এই সময় ডাকলেন স্যার কোন সমস্যা ?
না এমনিতেই ভালো লাগছিল না , কথা বলার লোক পাচ্ছিলাম না তাই এ অসময়ে তোমাকে ডাকলাম । বুঝই তো বুড়া মানুষ কাজ নেই , আর তুমি ছাড়া এখানে বাঙ্গালিও কেউ নাই তাই তোমাকে সময় অসময়ে জ্বালাতন করি ।
না স্যার কি যে বলেন , আপনি আছেন বলেইতো একটু বাংলা বলতে পারি , আর আপনিও তো জানেন আমার এই পৃথিবীতে আর কেউ নাই , আপনার সাথে কথা বলতে আমার ও অনেক ভালো লাগে ।
হুম তোমার এই বয়সেই কেউ নাই , আর আমার বয়সে কি হবে , হা হা হা আহ ।
অনেক কথা হল , সমকালীন রাজনীতি অর্থনীতি বিজ্ঞান নিয়ে । এর ভিতর হঠাৎ আমি তাকে প্রশ্ন করলাম স্যার ,আপনার জীবনে কি এমন কোন ঘটনা আছে যার আপনি কোন সঠিক ব্যাখা দিতে পারেন নাই , যা আপনার কাছে আজও অমীমাংসিত হয়ে আছে ।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন আজমল স্যার । তারপর বললেন আছে ।
শুনতে চাও ।
জি স্যার বলেন আপনার যদি প্রব্লেম না থাকে ।
তিনি বলা শুরু করলেন ।
তখন বয়স আর কতো হবে ছাব্বিশ সাতাশ , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই মাত্র পাস করে বের হয়েছি ।
ফাস্ট ক্লাস সেকেন্ড ।
বন্ধুরা সবাই বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে আমিও আবেদন করেছি কানাডাতে পি এইচ ডি করার জন্য , চিঠির জবাব নেই । কেউ কেউ তো সরকারি চাকরির আশায় দৌড় ঝাপ করছে ।
আমার তেমন এসবে মন নেই , পড়ালেখা নেই , সকাল দশটায় ঘুম থেকে উঠি তারপর সারাদিন ঘরাঘুরি রাতে আবার বাসায় ।
হঠাৎই কি মনে করে যেন সিলেটের প্রত্যন্ত এক এলাকার এক স্কুলে চাকরি নিলাম , গনিত শিক্ষক হিসেবে । সিলেট শহর থেকে ওই গ্রামে যেতে পুরা একদিন লাগে , যোগাযোগ অবস্থা খুব খারাপ , আব্বা আম্মার বাধা সত্তেও গেলাম সেখানে , তরুন বয়স তো তাই , মনে মনে ভাবলাম সারা জীবন তো শহরেই থাকলাম একটু গ্রাম দেখে আসি । সেখানে ম্যানেজিং কমিটির প্রধান আমাকে বরন করে নিলেন । এলাকার খুব প্রভাভশালি লোক , অনেক টাকা পয়সার মালিক , তিনিই স্কুলের সহ প্রতিষ্ঠাতা।
সব আনুষ্ঠানিকতার পড় তিনি আমাকে বললেন আমি জানি বাবা তুমি এখানে বেশিদিন থাকবে না তবুও আমি তোমাকে এখানে কেন ডেকেছি জানো ?কারন তুমি যে কয়দিনই এখানে থাকোনা কেন তোমার কাছ থেকে গাধা গরু গুলো কিছু হলেও শিখতে পারবে ।
আমার থাকার ব্যাবস্থা হোল স্কুলের ছাত্র হোস্টেলে , এই হোস্টেলে কেউ থাকে না , অনেক গুলো রুম পড়ে আছে তার ভেতর একটা তে আমি থাক শুরু করলাম । তিন বেলা সময় মতো খাবার আসে হারুন চৌধুরীর বাড়ি থেকে ।
ভালোই গেলো প্রথম সপ্তাহ
অষ্টম দিনে বিকেলে সুয়ে আছি দরজায় নক করলো কে যেন ।
খুলে দেখি একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে , হাতে বই খাতা ,আমি বললাম কে তুমি ?
মেয়ে টা বলল আমি হারুন চৌধুরীর মেয়ে কলেজে পড়ি ,আব্বা আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছে অঙ্ক করার জন্য ।
আচ্ছা আসো বস , তোমার নাম কি ?
আমার নাম শশী ।
তাকে অঙ্ক করানো শুরু করলাম , টান এক মাস অঙ্ক করালাম , দারুন মাথা মেয়ে টার । আমি একটা অঙ্ক বুঝিয়ে দিলেই সে চারটা অঙ্ক করে ফেলতে পারে । এক মাসেই প্রায় অর্ধেক বই শেষ হয়ে গেলো । এর ভিতর আমি খেয়াল করলাম মেয়ে টা শুধু ভালো অঙ্কই পারে না সে দেখতেও অসম্ভব সুন্দরি । তরুন বয়স তখন , বুঝইতো তার প্রেমে পড়ে গেলাম । তবে শিক্ষক বলে তাকে তা বলতে পারলাম না ।
সে সময় আমি ভালো পেন্সিল এস্কেস করতে পারতাম ,সারা বিকেল তাকে অঙ্ক করাই আর রাতে ডাইরিতে তার ছবি আকি। এর ভিতর আমার কানাডা থেকে পি এইচ ডি করার জন্য চিঠি আসলো । দুই সপ্তাহের ভিতর সেখানে জয়েন করতে হবে , হাতে সময় নাই ।
সেই রাতে চিঠির কথা বলার জন্য মিষ্টি নিয়ে চৌধুরীর বাড়ি গেলাম ।
চৌধুরী সাহেব নিজেই বাড়ির দরজা খুলে দিলেন , ভেতরে বসতে দিলেন , কুসলাদি জিজ্ঞেস করলেন ।
তাকে বললাম চাচা আমার কানাডা থেকে চিঠি এসেছে ,পি এইচ ডি করার জন্য ।
তিনি বললেন আলহামদুলিল্লাহ , এটা তো অনেক ভালো খবর , যাও তুমি ওইখানে পি এইচ ডি করবে , অনেক বড় হবে আমরা তখন গর্ব করে বলতে পারবো আজমল একদিন আমাদের স্কুলের শিক্ষক ছিল ।
চাচা আমার আর আরেকটা কথা ছিল ।
বল ।
আপনি তো আমার সবই জানেন ।
হুম
আমি যদি আপনার মেয়ে শশীকে বিয়ে করতে চাই , আপনার কোন আপত্তি আছে ?
চৌধুরী সাহেব আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে , সে তাকানোর অর্থ আমি ধরতে পারছি না ।
সাহস করে আবার বললাম , চাচা আপনি কি আমার কথার কোন উত্তর দিবেন না ?
তিনি আমার দিকে তাকিয়ে শীতল গলায় বলল ,
আমার যে মেয়ে আছে আর তার নাম যে শশী তোমাকে তা কে বলেছে ?
কে বলবে আমি তো রোজই ওকে অঙ্ক করাই , আপনিই তো ওকে আমার কাছে পাঠিয়েছেন ।
তিনি দূর এর চেয়ার থেকে উঠে এসে আমার পাশে বসলেন , শীতের দিন তিনি ঘামছেন ।
বাবা তুমি কি জানো আমার এক মাত্র মেয়ে শশী এক বছর আগে আত্মহত্যা করেছে ।
চাচা আপনি এসব কি বলছেন আমি গতকালও ওকে অঙ্ক করিয়েছি ।
এই দেখেন আমি ওর একটা ছবিও এঁকেছি
ছবি দেখে চৌধুরী সাহেব হাউমাউ করে কেদে দিলেন ।
তারপর আমার হাত ধরে বললেন আমার মেয়ের পড়ালেখা করার অনেক ইচ্ছা ছিল মেট্রিকে ও এই এলাকার ভেতর সব থেকে ভালো রেজাল্ট করেছিল । ও চেয়েছিলো আরো পড়ালেখা করতে , আমি তাতে রাজি হইনাই , আমি ওর কথা না শুনে ওর বিয়ে ঠিক করি , সবই ঠিকঠাক চলছিল ,ও কোন প্রতিবাদ করে নাই , শুধু বিয়ের আগের দিন রাত্রে খেতে বসে আমাকে বলল , আব্বা আমার বিয়ে করার ইচ্ছা নাই ।
পরদিন সকালে ওর ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায় ওর ঘরে ।
আমি দেখছি আজ আমার সামনে আজমল স্যার ঘামছেন এই প্রচণ্ড শীতে ।
স্যার তার কি কোন ছবি আছে আপনার কাছে ?
তিনি মানিব্যাগ থেকে একটা পেন্সিল এস্কেস করা ছবি আমার হাতে দিলেন , অনেক পুরনো একটা কাগজ তাতে একটা মেয়ের ছবি আঁকা অসম্ভব সুন্দরি ।
তাকে কি আপনি এখনো দেখেন স্যার ?
না , তবে অনুভব করি মাঝে মাঝে আমার চারপাশে ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×