somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিরুলিয়া'র প্রাচীন স্থাপনাসমূহ - হতে পারতো আরেক 'পানাম নগরী'!!!

১৪ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কয়েকমাস আগে এক ছুটির দিনে এক ভ্রমণবন্ধুর মোটর সাইকেলে করে গিয়েছিলাম টঙ্গীস্থ দত্তপাড়া জমিদার বাড়ীর খোঁজে। সেখান হতে দুপুরের পর চলে গেলাম আশুলিয়া হয়ে বিরুলিয়া। শতবর্ষ প্রাচীন এক হারিয়ে যাওয়া জনপদে। মিরপুর বেড়ীবাঁধ ঘেঁষে নদীপার এলাকা বিরুলিয়া। যে কেউ মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের পেছন হতে টেম্পু, বাস বা যে কোন যানে করে চলে আসতে পারেন বিরুলিয়ার এই প্রাচীন জনপদে। ছোট্ট একটি খালমত জলাশয় (তুরাগ নদীর অংশবিশেষ) নৌকাযোগে পার হলেই আপনি বিরুলিয়া বাজারে ঢুঁকে পড়বেন। এই জলাশয় পার হওয়ার সময় হাতের বামে তাকালে দেখতে পাবেন বিরুলিয়ার শতবর্ষ পুরানো এক বটবৃক্ষ, সাদা চুনকাম করা ফুট পাঁচেকের প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। এই বটগাছটারই ছবি বড় করে ঝোলানো আছে কোলকাতায় অবস্থিত ইন্ডিয়া তথা বিশ্বব্যাপি সমাদৃত আদি ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয় এর প্রধান শো রুম এ। কারণটা হল এ বটগাছের গোড়াতেই আদি ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয় এর কর্ণধার বাবু নিতাই এর পূর্বপুরুষরা পূজা অর্চণা করতেন। প্রতি বাংলা বছরের প্রথম দিনে, পহেলা বৈশাখে মেলা বসে বটতলায়।

আজকের ছোট্ট গ্রাম প্রায় ১০০ বছর আগে ছিল বিরুলিয়া নগরী। মিরপুর বেড়িবাঁধ থেকে নৌকায় তুরাগ নদী পার হলেই বিরুলিয়া। বর্ষাকালে গ্রামটিকে মনে হয় দ্বীপ। আগে ছিল ১৪-১৫টি, এখন আছে ৭-৮টি নকশাবহুল শতবর্ষী ভবন। এগুলোয় বসবাস করতেন তারকচন্দ্র সাহা, গোপিবাবু, নিতাইবাবু, রজনী ঘোষ প্রমুখ ব্যবসায়ী। বংশী, ধলেশ্বরী ও তুরাগ নদী পথে তাঁরা ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। তারা এখানে বসে নিলাম কিনতেন আর পরিচালনা করতেন জমিদারীর। আর এখানেই একসময় বসতি ছিল আদি ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয় এর কর্ণধার এর পিতৃপুরুষদের। চমৎকার ইট বিছানো রাস্তায় পশ্চিমে আগাতেই প্রথম চেখে পড়বে ৮৫ বছর পুরোনো শ্রী শ্রী বৃন্দাবন চন্দ্র জিউ বিগ্রহ মন্দির। সামেনে নানান ধরণের দোকান/বাড়ি - মাটির, টিনের, আধাপাকা, বিল্ডিং। বর্তমান বাসিন্দা নারায়ণচন্দ্র সাহা জানান, তাঁদের ইট-সুরকির বাড়িটি ১৩২৫ বাংলা সনে তাঁর দাদা তৈরি করেন। দাদা ছিলেন পাট ব্যবসায়ী। বর্তমানে গ্রামটিতে বাস করে আড়াইশ পরিবার। মসজিদ, মন্দির, স্কুল, কবরস্থান, শ্মশানঘাট ও বাজার আছে। বহুদিন আগের তৈরি মাটির ঘরও চোখে পড়ে। গ্রামের প্রধান রাস্তাটি সরু এবং ইটের সোলিং করা। এটি তারকচন্দ্র সাহা সড়ক নামে পরিচিত।

সাধারণত ঢাকা হতে বিরুলিয়ে গেলে যে পথ দিয়ে যায় আমরা ঠিক তার বিপরীত দিক দিয়ে প্রবেশ করলাম বিরুলিয়া গ্রামে। অর্থাৎ বিরুলিয়ার একেবারে শেষ প্রান্ত দিয়ে। প্রবেশ মুখেই একটি একতলা পুরাতন বাড়ী। এখানে থেমে জলপান এবং বিশ্রাম সেরে নিলাম। কারণ সেদিন ছিল প্রচণ্ড গরম। এরপর শুরু হল আমাদের বিরুলিয়া দর্শন। মোটর সাইকেল এক একটি বাড়ীর সামনে রেখে, সেখানে বর্তমানে বসবাসরত বাসিন্দাদের অনুমতি নিয়ে আমরা ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম শতবর্ষ আগের এই সকল স্থাপনা আর মনে মনে কল্পনা করছিলাম সেই জমজমাট নগরীর চিত্রখানা।

যদি পানাম নগরীর মত বিরুলিয়ার এই সকল স্থাপনাগুলোকে সংরক্ষণ করা হত সরকারী উদ্যোগে, তাহলে এটা হতে পারত ইতিহাস আর ঐতিহ্যের মিশেলে এক অনন্য পর্যটন কেন্দ্র। বর্ষায় চারিদিকে যখন অথৈ জল নিয়ে ছোট্ট বিরুলিয়া দ্বীপেরমত জেগে থাকে তার শতবর্ষ পুরানো এই সকল স্থাপনা নিয়ে, তখন বড়ই নয়নাভিরাম লাগে দেখতে। তো এই বর্ষায় যাচ্ছেন কি বিরুলিয়া ভ্রমণে। আমার ছোট্ট ক্যামেরায় তোলা কিছু ছবি আপনাদের জন্যঃ

তথ্যসুত্রঃ কালের কণ্ঠ







































সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৫২
৬৪টি মন্তব্য ৬৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×