যান্ত্রিক এই শহুরে জীবনে থাকতে থাকতে যখন বুক ভরে বিশুদ্ধ বাতাস নিতে মনটা আঁকুপাঁকু করে; তখন ঘরে ছেড়ে বেড়িয়ে পড়ুন সবুজ প্রান্তরে; শীতের এই সময়ে গ্রাম্যসবুজ এ হারিয়ে গিয়ে কিছুটা দেহমন পরিশুদ্ধ করতে একদিনের জন্য গিয়েছিলাম ঢাকার কাছেই নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ এর দিকে। নিজেকে রিচার্জ করার সাথে সাথে আগামী দিনগুলোর জন্য কিছু রসদ তুলে নিয়ে এলাম। যখনই মন ফের আঁকুপাঁকু করে উঠবে; মনিটরের বুকে চেয়ে চেয়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবো।
==========================================================================
প্রভাতের সর্ষেযাত্রা
সকালের প্রথম আলোয় গ্রামের ফসলি জমির আইল ধরে হেঁটে যাচ্ছিলাম কিছুটা দূরের সর্ষে ক্ষেতের দিকে। তখন ছবিটি তোলা। হলদে সর্ষে ক্ষেতের অন্য আরেক আইল ধরে গবাদি পশুর জন্য ঘাস কেটে নিয়ে যাচ্ছেন মধ্যবয়সের লোকটি।
==========================================================================
একা পাখী বসে আছে
একাকী একটা পাখি, কার অপেক্ষায় বসে আছে। অথবা সে পথ চেয়ে আছে বলেই আমার মত পথিকেরা হেঁটে যায়, ফিরে যায় প্রকৃতির কোলে এতটুকু বিশুদ্ধ বাতাসের খোঁজে।
==========================================================================
ও শিশু জলে নাইমো না; জলে পা ভিজাইও না...
এই টলটলে জলের পুকুর দেখে থমকে দাঁড়িয়েছিলাম আমাদের দলের সবাই। নীল আকাশের নীচে হলদে সর্ষে ক্ষেত বুকে ধরে চারিপাশে সবুজ প্রকৃতির মাঝে পুকুরের স্বচ্ছ জলে নীল আকাশের প্রতিচ্ছবি সবাইকে মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন করে রেখেছিলো যেই ক্ষণে তখন হুট করে আমাদের এক বন্ধুর ছয় বছর বয়সী এই ছেলে দৌড়ে পুকুরের বাঁধানো সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে গেল।
==========================================================================
কালের করিডোর
এক ক্ষয়িষ্ণু জমিদার বাড়ীর উঠোনের টানা বারান্দা যার একেবারে শেষপ্রান্তে জ্বলছিল চুলার আগুন, হচ্ছিল মধ্যাহ্নের আহারের রান্না, ধোঁয়া উঠছিল সেখান থেকে। এই প্রান্তে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল যেন দৃষ্টি বিভ্রম হচ্ছে; কোন এক স্বপ্নলোকে দেখছি হারানো কালের কোন এক রূপকথার গল্প।
==========================================================================
মুক্ত আঙ্গিনা
এই শহুরে জীবনে আমরা খুঁজি এতটুকু ফাঁকা জায়গা যেখানে আমাদের সন্তানেরা বুকভরে নিঃশ্বাস নিতে পারবে। অথচ গ্রামবাংলার বুক জুড়ে মাইলের পর মেইল রয়েছে প্রকৃতির মুক্ত আঙ্গিনা, যেখানে প্রকৃতির সন্তানেরা মুক্ত বিহঙ্গের মত উড়ে বেড়ায়
==========================================================================
লালঝুঁটিওয়ালা খাদ্যান্বেষী
সকালের হাঁটাহাঁটি শেষে আমরা যাচ্ছিলাম নাস্তার খোঁজে। পথেই একটা চায়ের দোকান দেখে সবাই চা পাণ করতে বসে গেলাম কাঠের বেঞ্চিতে। পাশেই একটা বাসার উঠোনে গবাদিপশুর দৌড়ঝাঁপ চলছিল; এরই মাঝে এই লালঝুঁটিওয়ালা খাদ্যান্বেষী করে চলেছিলেন তার খাদ্যের খোঁজ।
==========================================================================
আলো আঁধারির বিভ্রম
আমাদের দলের তিনজন আমার থেকে অনেকটা আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন গন্তব্যে, হাঁটছিলেন আপন মনে। দূর থেকে ক্যামেরা তাক করে ছবিটি তুলতেই মনে হল তিনটি ছায়ামূর্তি হেঁটে চলেছে সোনালী সকালের মায়াময় পথ ধরে।
==========================================================================
মেঠোপথে দ্বিচক্রযান
চা পাণ করার দোকানটি ছিল এই পথে, ছোট ছোট বালকের দল দ্বিচক্রযান এ চেপে যখন সেই পথ পাড়ি দিচ্ছিল, ক্ষণিকের জন্য মন চাইছিলো তাদের সাথে যোগ দিতে।
==========================================================================
সবুজের বুকে খঞ্জর
সেই মায়াবতী পুকুরের অপর পাড়ের শষ্যক্ষেত এটি। নীল আকাশের নীচে চারিদিকে সবুজে ঘেরা হলুদ সর্ষে ক্ষেতে উজবুক এর মত দাঁড়িয়ে রয়েছে বৈদ্যুতিক তারবাহী ধাতব টাওয়ারটি। একেবারেই বেমানান; ঠিক যেন সবুজ প্রকৃতির বুকে কেউ খঞ্জর বসিয়ে দিয়েছে।
==========================================================================
স্বপ্নবোনার আস্তানা
সেদিনের সেই ভ্রমণ শেষে ফেরার পথে আমরা থেমেছিলাম স্থানীয় তাঁত পল্লীতে; যেখানে বোনা হয় বেনারশী শাড়ী; শাড়ী তো নয়, বোনা হয় হাজারো বাঙ্গালী রমণীর আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন। এখান হতে শাড়ীগুলো চলে যায় ঢাকা শহরের নানান বিপণী বিতানে, শোভা পায় কাঁচে ঘেরা আলোকিত বিক্রয়কেন্দ্রে।
==========================================================================
প্রতীক্ষা...
খড়ের গাঁদায় বসে আছে একাকী; হয়তো কারো প্রতীক্ষায়। কেউ কেউ এভাবেই কাটিয়ে দেয় সহস্রাব্দ অজানা কিছুর প্রতীক্ষায়।
==========================================================================
কালের কোঠরি...
অদ্ভুত সুন্দর এই কোঠরিটি ছিল পথের ধারে একটি গাছের বুকে; না জানি কার আস্তান। দারুন সুন্দর দেখাচ্ছিল সূর্যালোকে। ক্যামেরা বন্দী করে নিয়ে এলাম ঘরে, দেখবো যখন মন চাইবে পরে।
==========================================================================
বেলাশেষে
হয়তো এই নৌকায় করে পথ পাড়ি দেয়া হয়েছে দিনের পর দিন, আজ আর নেই হয়তো তার প্রয়োজন এই জীবন সংসারে। তাইতো একাকী পড়ে আছে কাঁদামাটির বুকে। সব কিছুরই বুঝি প্রয়োজন ফুরালে একই হাল হয়।
==========================================================================
বিশিষ্ট ভদ্রলোক
জমিদার বাড়ীর প্রবেশমুখে এক গৃহস্থের উঠোনে এই ভদ্রলোক রোদ পোহাচ্ছিলেন। আমাদের এক বন্ধুপত্নী উনার সাথে সেলফি তুলতে ইচ্ছুক ছিলেন; কিন্তু ভয়ে উনার কাছে যাচ্ছিলেন না। কারণ, এই গোত্রের সাথে তার পূর্বের সেলফি তোলার ইতিহাস হয়তো ভালো নয়। কিন্তু যার গৃহস্থে এই ভদ্রলোকের আবাস, তিনি সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন উনাকে বিশিষ্ট শান্তশিষ্ট হিসেবে।
==========================================================================
বুকের পাঁজরে শেকড়
যৌবন হারানো পুরাতন জমিদার বাড়ীর দালানের পাঁজর ফুড়ে গজানো শেকড় যেন আকড়ে ধরে রাখতে চাইছে পরিত্যাক্ত কোন স্মৃতিগাঁথা অতীতকে।
==========================================================================
দানবের আঁচড়
যতই আমরা প্রকৃতি প্রকৃতি করি না কেন, সর্বত্রই ছড়িয়ে আছে যান্ত্রিক দানবেরা। আজ প্রত্যন্ত অঞ্চলেও যন্ত্র দানব ব্যতীত মানব প্রজাতি একদন্ড চলতে পারে না। জয়তু যন্ত্র দানবের জয়যাত্রা।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৪:০৮