somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যাত্রা হল শুরু; রক্ষে করো গুরু (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০২)

১০ ই জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগের পর্বঃ উদ্ভট যাত্রার আগের গল্প (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০১)

যথারীতি ঈদের পরদিন রাত নয়টার নাগাদ আমরা ছয়জনের দল পৌঁছে গেলাম বাস কাউন্টারে এবং নির্ধারিত সময়েই বাস ছেড়ে দিলো। ফাঁকা রাস্তায় দ্রুত ছুটে চলছে গাড়ী, সারাদিনের ক্লান্তিতে কানে হেডফোন গুঁজে দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম। ঘন্টাখানেকের আগেই ধামরাই পেড়িয়ে প্রায় মানিকগঞ্জের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে গাড়ী; আর ১০/১২ কিলোমিটার পরই ক্রস করবো মানিকগঞ্জ; এমন সময় বাস থেমে গেল। থেমে যাওয়া বলতে একেবারে ইঞ্জিন বন্ধ; চোখ মেলে দেখি সামনে সারি সারি গাড়ী স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

প্রথম আধঘন্টায় বুঝতে পারলাম না ঘটনা কি; এরপর গাড়ীর সুপারভাইজার খবর নিয়ে আসলো “গোল্ডেন লাইন পরিবহণ” এর একটি বাস এর সাথে একটি মাল বোঝাই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে; ঘটনাস্থলেই মারা গেছে নাকি আটজনের মতো। হায় খোদা! কি সর্বনাশের কথা। যদিও পরে জানতে পেরেছিলাম ২ জন মারা গিয়েছিল। ঘন্টাখানেক পরে বিপরীত দিক থেকে ফায়ার সার্ভিস, র‍্যাব ও পুলিশ এর গাড়ী মানিকগঞ্জের দিকে যেতে দেখলাম। প্রায় তিনঘন্টা স্থবির থাকার পর রাত তিনটা নাগাদ গাড়ী চলতে আরম্ভ করলো। এদিকে এত লম্বা সময় এপাশ থেকে গাড়ী না যাওয়া সত্ত্বেও পাটুরিয়া ফেরীঘাটে গিয়ে দেখি বিশাল লম্বা লাইন; ফেরী পারাপারের জন্য। মেজাজ গত দুই দিন ধরে এমনিতেই খুব খারাপ ছিল; এখন আর ভালো লাগছিলো না। খোদা জানে কতক্ষণে ফেরীতে উঠতে পারবো।

এসময় দেখলাম ড্রাইভার আর সুপারভাইজার নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। আমাদের কলকাতায় নামিয়ে দিয়ে সন্ধ্যায় তাদের ট্রিপ ধরতে হবে বেনাপোল থেকে; রিজার্ভ করা আছে বোধহয়। নিজেদের মধ্যে কি সব আলোচনা করে সুপারভাইজার গাড়ী হতে নেমে গেল। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে মোবাইল ফোনে একে ওকে ফোন দিতে লাগলো একটা ইমার্জেন্সি পাস বের করার জন্য। এসময় তার ত্রানকর্তা হিসেবেই যেন বাসেরই এক যাত্রী এগিয়ে এলো। সরকারী উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা; উনারও দ্রুত বেনাপোল পৌঁছানো দরকার। এই শেষ রাতে বিআইডব্লিউটিএ’র কোন এক উচ্চপদস্থ কাউকে ফোন করে ঘটনা জানালেন। কিছুক্ষণ পর ভদ্রলোকের ফোন বেজে উঠলো; উনি কথা বলে সুপারভাইজারকে দিলেন। সুপারভাইজার বোধহয় কোন ইন্সট্রাকশন নিয়ে কথা শেষ করে বাস হতে নেমে মিনিট পাঁচেক পরে গাড়ীতে এসে ড্রাইভারকে গাড়ী ঘুরিয়ে অন্য কোন ঘাটে নিতে বলল। এই সকল ঘটনা আধঘন্টায় ঘটে আমাদের বাস উঠে পড়লো ফেরীতে। ফেরি যখন অপর পারে ভিড়ছে, ততক্ষণে পূব আকাশে সুর্য'র আভা উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরী পারাপারের পর রাস্তা ফাঁকাই ছিলো; গাড়ীদ্রুত চলতে লাগলে একটু ঘুমিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলাম। কারণ, এই যাত্রা শেষ হতে হতে আগামীকাল বিকেল হবে। প্রায় পঁয়তাল্লিশ ঘন্টার যাত্রা; তাই একপ্রকার জোর করেই ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। এক ফাঁকে ঘুমিয়েও গেলাম। বেলা নয়টা নাগাদ আমাদের বাস এসে পৌঁছলো বেনাপোল। কাউন্টারের পাশেই কোনমত ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলাম লোকাল একটা খাবার হোটেলে। আগের যাত্রা অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া শিক্ষায় ঢাকা থেকে ট্রাভেল ট্যাক্স দিয়ে আসি নাই; কারণ, দেখা যায় আমরা ট্রাভেল ট্যাক্স এর ঝামেলা ঢাকা থেকে সেরে আসলেও লাভ হয় না; কারণ সকল যাত্রী তো আর ঢাকা থেকে সেই কম্ম সেরে আসে না।

আমরা নাস্তা করে বাস কাউন্টারের লোক দিয়ে দ্রুত ট্রাভেল ট্যাক্স এবং বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন সিল কমপ্লিট করে সীমান্ত গেটে গিয়ে দেখি নো-ম্যান্স ল্যান্ডে হাজার দুয়েক লোকের দীর্ঘ লাইন! সেই লাইন অনেকক্ষণ পরপর এক পা দু পা করে আগায়। অতটুকু জায়গায় কয়েক হাজার মানুষের লাইন করতে সাপের ন্যায় আঁকাবাঁকা করে লাইন তৈরী করতে হয়েছে। তার উপর কড়া রোদ এর তাপে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মুশকিল। মনে হচ্ছিলো চিৎকার করে কান্না করতে, কেন যে এলাম বাই রোডে! সেবারের শিক্ষা নিয়ে আমি এরপরের যাত্রাগুলো চেষ্টা করেছি ঢাকা-কলকাতা বিমান পথে যাত্রা করতে। বৃদ্ধ-শিশু-রোগী-মহিলা এদের যে কি হাল হয়েছিল তা না দেখলে বুঝানো যাবে না। প্রায় তিনঘন্টা রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে যখন ভারতীয় ইমিগ্রেশন শেষ করলাম, তখন দুপুর দেড়টা। । ওপাশে গিয়ে দুপুরের খাবার এর চিন্তা বাদ দিয়ে বাসের কাউন্টারে গেলাম কিভাবে দ্রুত কলকাতা পৌঁছানো যায় সেই খবর নিতে।

সেবার আমাদের ট্রেন ছিল রাত দশটার দার্জিলিং মেইল; তাই রক্ষে। আমার পরিচিত বেশ কয়েকটা গ্রুপ সেবার কলকাতা হতে দিল্লীগামী রাজধানী এক্সপ্রেস মিস করে বহু টাকা পয়সা গচ্চা দিয়েছিল; পুরো ট্যুর ক্যান্সেল করতে হয়েছিলো অথবা ট্যুর প্ল্যান চেঞ্জ করে নির্ধারিত গন্তব্যস্থল বাদ দিয়ে অন্যত্র ভ্রমণ করে দেশে ফিরতে হয়েছিল। আমরা কলকাতা পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় সন্ধ্যে হয়ে এল। যেহেতু আমাদের ট্রেন ছাড়বে শিয়ালদহ ষ্টেশন থেকে; তাই আমরা শিয়ালদহ এর কাছাকাছি বাস পৌঁছলে পরে বাস হতে নেমে গেলাম। এখানে ঘটলো আরেক বিপত্তি। সদ্য বাহির হতে আনানো আমার নতুন ব্যাগপ্যাক বাসের হেল্পার রেখেছিলো সবার নীচে, তার উপর কয়েকটা ব্যাগ রাখাছিল। সেই অবস্থায় সেই আমার ব্যাগের পিঠে নেয়ার স্ট্রাইপ ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে ব্যাগ বাহির করতে গিয়ে সেটা ছিড়ে ফেললো। কি এক প্যারা নিয়ে সেই ব্যাগ আমাকে পরবর্তী সাতদিন ক্যারি করতে হয়েছিলো সেই গল্প আর নাই বা শোনাই। তবে এতো সব প্যারা থাকা সত্ত্বেও আজ যখন সেই কথাগুলো মেমরীতে রিকল করে এই লেখা লিখছি; মিস করছি সেইসব ভ্রমণ এর দিনগুলোকে।

শিয়ালদহ পৌঁছে খুঁজে বের করলাম ক্লকরুম; সেখানে ব্যাগপত্তর লকারে রেখে সবাই মিলে চলে এলাম প্রিন্সেপঘাট; কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম দূর্গের পাশে হুগলি নদীর তীরের এই ঘাটটিতে সান্ধ্যকালীন সময়টুকু কাটাতে আমি ভীষণ পছন্দ করি। এখানে অনেকটা সময় কাটিয়ে চলে এলাম মারকুইস স্ট্রীট এ, উদ্দেশ্য ‘কস্তুরী’ রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খাওয়া। যদিও এখন আর ‘কস্তুরী’র খাবারের সেই মান ও স্বাদ নেই; তবে তখনও ছিলো। রাতের খাবার খেয়ে নয়টার দিকে আমরা কলকাতা নিউমার্কেট হতে রওনা দিলাম শিয়ালদহ এর উদ্দেশ্যে। নির্ধারিতে সময়ে সেখানে পৌঁছে আমাদের “দার্জিলিং এক্সপ্রেস” খুঁজে পেতে তেমন বেগ পেতে হলো না। সবাই ট্রেনে উঠলে পরে আমি কিছু স্ন্যাক্স আর সফট ড্রিংস কিনে নিলাম ষ্টেশন এর লাগোয়া দোকানগুলো থেকে। এরপর নির্ধারিত সময়েই রাত দশটায় ছেড়ে গেল আমাদের “দার্জিলিং মেইল”।

ভ্রমণকালঃ জুলাই ২০১৬

এই ভ্রমণ সিরিজের আগের পর্বগুলোঃ
উদ্ভট যাত্রার আগের গল্প (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০১)

এক পোস্টে ভারত ভ্রমণের সকল পোস্টঃ বোকা মানুষের ভারত ভ্রমণ এর গল্পকথা
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×