somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উদ্ভট যাত্রার আগের গল্প (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০১)

০৮ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



উদ্ভট যাত্রার আগের গল্প
সময়টা ২০১৬ সাল; ভারত ভ্রমণের নেশায় নেশাগ্রস্থ হওয়ার কাল। কাশ্মীর-সিমলা-মানালি-দিল্লী ট্যুর দেয়ার চার মাস পর গেলাম কলকাতা-কেরালা-গোয়া-মুম্বাই। ফের চারমাস যেতে না যেতেই রমজানের ঈদের আগে দিয়ে হুট করে প্ল্যান করলাম ফের ভারত যাবো; পরিকল্পনায় ছিল রাজাস্থান এর দিকে যাওয়ার। কিন্তু মানুষ ভাবে এক; আর হয় আরেক। তাই বর্ষার মাঝেই প্ল্যান করে ফেললাম দার্জিলিং এর দিকেই না হয় যাওয়া যাক। যদিও ভিসা নেয়া ছিল বেনাপোল বর্ডার দিয়ে; তাতে কি? কলকাতা ঘুরে সারারাত ট্রেন জার্নি করে শিলিগুড়ি হয়ে দার্জিলিং যাওয়া চাই। আমার পাগলামীর সাথে একাত্মতা করে আরও সাতআট জনা জুটে গেল। তখন ভারতীয় ভিসা পেতে নানান ঝামেলা হচ্ছিল; Indian Visa Application Center (IVAC) এর ওয়েবসাইট এর নানান ঝামেলা এবং তা নিয়ে নানান অভিযোগ এর প্রেক্ষিতে ভারতীয় হাই কমিশন বিশেষ ভিসা ক্যাম্পের আয়োজন করেছিল। ফলে সেই ঈদে হাজারে হাজার বাংলাদেশী পর্যটকের স্রোত ছিল ভারত অভিমুখী।

তো ঠিক সেই সময়ে সকল কিছু প্রতিকূলে থাকা সত্ত্বেও আমরা ঠিক করলাম আমাদের প্ল্যান হবে এরকমঃ ঢাকা-কলকাতা-শিলিগুড়ি-মিরিক-দার্জিলিং-রাংগপো-লাভা-লোলেগাঁও-কালিম্পং-শিলিগুড়ি-কলকাতা-ঢাকা। পাগলের প্ল্যানিং বলা যেতে পারে। রুট এর উদ্ভটতার সাথে ঈদের মৌসুমের সেই ভিসা ক্যাম্পের বদৌলতে সীমান্তে পর্যটকের বিশাল চাপ এবং বর্ষার সময়ে দার্জিলিং এবং তদসংলগ্ন পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধ্বস এর সাথে টানা বৃষ্টির সম্ভাবনা; সব কিছু নিয়েই প্ল্যান করলাম যাবই যাবো এই ট্রিপে। ট্রিপের নাম দিলামঃ “Monsoon Trip At Darjeeling-Mirik-Lava-Lolegaon-Rangpo-Kalimpong”।

পরিকল্পনা হল ঢাকা হতে বাই রোডে বেনাপোল দিয়ে কলকাতা যাবো। এরপর সেখান হতে বিখ্যাত “দার্জিলিং মেইল” এ করে চলে যাবো নিউ জলপাইগুড়ি ষ্টেশন। ঠিক সেখান হতেই আমার ট্রাভেল এজেন্ট আমাদের পিক করে মিরিক হয়ে দার্জিলিং চলে যাবে। দার্জিলিং এ দুই রাত থেকে সেখান থেকে সিকিম এর গেটওয়ে এলাকা রাংগপো বেড়াবো (তখনো সিকিম বাংলাদেশী পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হয় নাই); সেখান থেকে চলে যাবো লাভা। লাভায় এক রাত থেকে পরদিন লোলেগাঁও বেড়ানো শেষে চলে যাবো কালিম্পং। কালিম্পং এ এক রাত কাটিয়ে শিলিগুড়ি হয়ে ফের ট্রেন ধরে কলকাতা। তারপর কলকাতা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা। সবার ছুটি কম থাকায় এই পুরো জার্নি শিডিউল এক সপ্তাহে কমপ্লিট করতে হবে।

আমি এজেন্টের সাথে কথা বলে প্রতিটি লোকেশনে আমার পছন্দের হোটেল নির্ধারিত করে দিলাম; যদিও পরে একটি ছাড়া বাকী হোটেলগুলো সব পরিবর্তিত হয়েছিলো। এরপর ছিলো বাসের টিকেট অগ্রীম বুক করা। ঢাকা থেকে ছয়জন আর খুলনা থেকে দুইজন যাবে; তাই ঢাকা থেকে বেনাপোল হয়ে কলকাতা যাওয়ার অগ্রীম টিকেট করে নিলাম শ্যামলী পরিবহনের ডিরেক্ট বাসে; যেটা বর্ডার অতিক্রম করে একই বাসে কলকাতা পর্যন্ত যায়। শিলিগুড়িতে আমার এজেন্টকে বলে দিলাম নির্ধারিত তারিখের ট্রেন টিকেট এর ব্যবস্থা করতে; এসি কামরার কোন টিকেট না পাওয়ায় শেষে কাটতে হলো নন-এসি স্লিপার ক্লাস এর টিকেট। সেই টিকেট উনি কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দিলেন ঢাকার উদ্দেশ্যে; শুরু হলো ঝামেলার পালা। চাঁদরাত এর দিন মতিঝিল এর সুন্দরবন কুরিয়ার এর হেড অফিসে গিয়ে হাজার খানেক টাকা বখশিস দিয়ে বহু কষ্টে উদ্ধার করা হয়েছিলো সেই ট্রেনের টিকেট।

সবকিছু যখন কনফার্ম করে চাঁদরাতে বাসায় এলাম; তখন খুলনার দুজন যে ছিলো; তাদের মধ্যে একটা ছেলে আমার পূর্ব পরিচিত; আমাদের সাথে মারিশ্যা-রাঙ্গামাটি ট্রিপে ছিল; সে ফোন করে জানালো সে আমাদের সাথে যাবে না। আমি বললাম, সবকিছু বুকড, কনফার্ম করা হয়েছে; এখন না গেলে কিভাবে হবে? সে খুব বাজে ব্যবহার করে ট্যুর ক্যান্সেল করেছিলো সেদিন রাতে। মজার ব্যাপার যেখানে আমাদের ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা বাস টিকেট এর ভাড়াই ছিলো ৩,৮০০ টাকা জনপ্রতি; সে নাকি সাড়ে তিন হাজার টাকায় শেষ করেছে সেই ট্রিপ! আসলে ভ্রমণে এই এক সমস্যা; একেকজনের লেভেল অফ কমফোর্ট আর মিনিমাম রিকোয়ারমেন্ট এর স্কেল একেক রকম। কে কাকে বুঝাবে? যাই হোক নানান ঝক্কি ঝামেলা আর মন ভার করে নিয়ে ঈদের দিন ব্যাগপত্তর গুছিয়ে নিলাম। এরপর অপেক্ষার পালা। ঈদের পরদিন রাতের বাসে করে রওনা হলাম কলকাতার উদ্দেশ্যে।

ভ্রমণকালঃ জুলাই ২০১৬

পরের পর্বঃ যাত্রা হল শুরু; রক্ষে করো গুরু (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০২)

এক পোস্টে ভারত ভ্রমণের সকল পোস্টঃ বোকা মানুষের ভারত ভ্রমণ এর গল্পকথা
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২৩
৮টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×