
২০১৩ সালের Denis Villeneuve পরিচালিত আলোচিত হলিউড মুভি “Prisoners”। সাধারণ একটা পরিবারের উৎসবমুখর রাতের ডিনার শেষে দুই পরিবারের বাচ্চা দুটি মেয়ের নিখোঁজ হওয়া দিয়ে শুরু হয় সাসপেন্স থ্রিলার ভিত্তিক এই মুভির। পেন্সিল্ভেনিয়া’য় এক প্রতিবেশী বন্ধুর বাসায় “থ্যাংকস গিভিং ডে” উদযাপনের ডিনারের শেষে হুট করেই দুই পরিবারের দুই কিশোরী এনা এবং জয়া নিখোঁজ হয়ে যায়। বির্চ পরিবারের মেয়ে জয়া এবং ডোভার পরিবারের মেয়ে এনা; পারিবারিক গেটটুগেদারটি হচ্ছিলো বির্চ পরিবারের বাসায়। দুই পরিবারের অপর দুই বড় সন্তান, বির্চ পরিবারের বড় মেয়ে এলিজা এবং ডোভার পরিবারের বড় ছেলে রলফ এরা দুজন ডিনারের আগে বাসার বাইরে যখন হাঁটতে বের হয়েছিলো নিজেদের ভাইবোনদের নিয়ে তখন বাসার সামনে একটা ক্যারাভ্যান দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। দুই কিশোরী সেটার ছাঁদে উঠার চেষ্টা করলে তাদের বাঁধা দিয়ে বাসায় নিয়ে আসে। ডিনারের পর দুই পরিবারের বাবা-মা নিজেদের মাঝে গল্পে মশগুল ছিলো, হঠাৎ দুই কিশোরীকে খুঁজে দেখে বাসায় নেই। মিস্টার ডোভার দ্রুত নিজেদের বাসায় দৌড়ে গিয়ে খুঁজে দেখে আসেন। কিন্তু না, কোত্থাও নেই দুই কিশোরী, সাথে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা ক্যারাভ্যানও গায়েব।
প্রথমেই খোঁজ পরে সেই ক্যারাভ্যান এর এবং সন্দেহজনক অবস্থায় আটক করা হয় সেই ক্যারাভন, চালক সহ। পুলিশ চালক এলেক্স জোন্সকে আটক করে জিজ্ঞাসবাদে বের হয়ে আসে সে মানসিক প্রতিবন্ধী একজন যার কথাবার্তা আচার আচরণ শিশুসুলভ। তাই তাকে তার আন্টি মিস হলি’র নিকট সোপর্দ করে দেয়। কিন্তু মিস্টার ডোভার এর দৃঢ় বিশ্বাস আসল ক্রিমিনাল এই এলেক্সই। তিনি জোর দাবী জানান এলেক্সকে আটক রেখে জোরদার জিজ্ঞাসাবাদের। কিন্তু পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয় এবং মিডিয়ায় জোরালোভাবে এই নিখোঁজ কান্ডর খবর প্রচারিত হয়।
এদিকে পুলিশ এক চার্চের ফাদারের বাসা হতে ঘটনাচক্রে এক লাশ উদ্ধার করে এবং ফাদার জিজ্ঞাসাবাদে জানায় লোকটি চার্চে এসেছিলো তার পাপ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করতে। সেই লোক নাকি ১৬ জন বাচ্চাকে অপহরণ করে খুন করেছিলো। অন্যদিকে পুলিশ যেদিন এলেক্সকে ছেড়ে দেয় সেদিন মিস্টার ডোভার ক্ষোভে পুলিশ ষ্টেশন এর বাইরেই তার উপর চড়াও হন। সেসময় এলেক্স তাকে ফিসফিসিয়ে বলে “তারা যতক্ষণ আমার কাছে ছিলো এতটুকু কান্না করে নাই”। ব্যাস তখন থেকে তিনি পিছু নেন তার, কয়েকদিন পর রাতের বেলায় পোষা কুকুর নিয়ে এলেক্স হাঁটতে বের হয় এবং গুনগুন করে একটা গান গাইতে থাকে যা নিখোঁজ হওয়ার রাতে এনা এবং জয়া গেয়েছিলো। মিস্টার ডোভার এলেক্সকে সেখান হতে অপহরণ করে তার পৈত্রিক পরিত্যক্ত বাসায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন, নানান রকম টর্চার করে তার থেকে জানতে চান তাদের মেয়েদের সাথে সে কি করেছিলো। পুরো কাজটি করছিলেন তিনি পুলিশকে লুকিয়ে, যদিও এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিস্টার লকি সন্দেহ করছিলো এরকম কিছুই ঘটিয়েছেন মিস্টার ডোভার।
এরই মাঝে আরেক নতুন চরিত্র হাজির হয় দৃশ্যপটে। পুলিশ অফিসার পিছু নেন অগ্যাত এক ব্যাক্তির, নাম বব টেলর। একটা সুপার শপ থেকে সে ভিন্ন ভিন্ন সাইজের বাচ্চাদের জামা কাপড় কিছুদিন পরপর কিনতে আসে। পুলিশ অফিসারের ইনভেস্টিগেশন ইনকোয়ারিতে সুপার শপের সেলসম্যান মহিলা এই তথ্য জানান তাকে। মিস্টার লকি লেগে থাকেন সেই ব্যক্তিকে আটকের চেষ্টায় এবং এক সময় তার সন্ধান পেয়ে যান। তাকে গ্রেফতার করেন তার বাসায় গিয়ে এবং একটা রুমে খুঁজে পাওয়া যায় অনেকগুলো ট্রাঙ্ক। কিন্তু সেগুলো ভরা জ্যান্ত সাপে!!! কিন্তু সাপের নীচে বাচ্চাদের জামা দেখতে পান। বব টেলর’কে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পুলিশ কাস্টডিতে জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন সময় এক পুলিশ অফিসারের বন্দুক কেড়ে নিয়ে আত্মহত্যা করে বসেন বব টেলর। কিন্তু মৃত্যুর আগে এঁকে যান এক রহস্যময় নকশা।
একের পর এক সন্দেহভাজন আর রহস্য সমাধান হতে হতে ভেস্তে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যায় সিনেমা। বাচ্চা দুটি কি আসলেই কিডন্যাপ হয়েছিলো, নাকি হারিয়ে গিয়েছিলো কোথাও? তারা কি আদৌ জীবিত ছিলো, নাকি তাদের হত্যা করা হয়েছিলো? হয়ে থাকলে কিভাবে? কে করেছিলো তা? কে আসল অপরাধী? সন্দেহের দোলাচালে মুভিটি দেখতে থাকুন আর অনুমান করতে চেষ্টা করুন আসলে কি ছিলো রহস্য কিশোরী বাচ্চা দুটির নিখোঁজ হওয়ার পেছনে, কি হয়েছিলো তাদের পরিণতি।
IMDb ৮.১ রেটিং পাওয়া মুভি Google Users এ ৮৬% দর্শকের পছন্দের সাথে Rotten Tomatoes এ অডিয়েন্স ভোট পেয়েছে ৮৭ শতাংশ। ৪৬ মিলিয়ন ডলারে নির্মিত মুভিটি ১২০ মিলিয়ন ব্যবসা করে অন্যতম ব্যবসা সফল ছবির সাথে ২০১৩’র আলোচিত মুভি ছিলো। ডেনিস ভিলেনিউভ পরিচালিত একটি চিত্রনাট্য থেকে অ্যারন গুজিকোস্কির লেখা। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন হিউ জ্যাকম্যান, জেক গিলেনহাল, ভায়োলা ডেভিস, মারিয়া বেলো, টেরেন্স হাওয়ার্ড, মেলিসা লিও এবং পল ডানো সহ আরও অনেকে।
আজ হুট করেই মুভিটি দেখা হলো, দেখে মনে হলো মুভিটি রিভিউ লেখার মতো। যদিও আমি ট্রাভেল মুভি রিভিউ ছাড়া মাত্র দু’তিনটি বাংলা টেলিফিল্ম রিভিউ লিখেছিলাম বহু বছর আগে এই সামু ব্লগে। রিভিউ পড়ে আগ্রহ না জাগলেও দেখে ফেলেন মুভিটি। আসলেই মুভিটি দেখার মত, তাই দেরী না করে দেখে ফেলেন সময় করে। শুভরাত্রি।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:২৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


