‘তই তই তই... আমার ময়না পাখিটা কই?’ সংলাপে জনপ্রিয় - ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ শিহাব শাহীনের চাঁদরাতে মুক্তি পাওয়া চরকি অরিজিনাল সিরিজ যা মুক্তির পর ১০০ ঘণ্টার মধ্যে ১ কোটি মিনিট স্ট্রিমিং হয়ে ইতিমধ্যে রেকর্ড করেছে। 'মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন' এর কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাসির উদ্দিন খান, যাকে ইতিমধ্যেই অনেক সিনেমা এবং অভিনয়শিল্প বোদ্ধা হুমায়ুন ফরিদীর পরে বাংলার অভিনয় জগতে বহুমুখী প্রতিভা বলে স্বীকৃতি দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা যে ভিন্ন! চেনা বৃত্তের বাইরে অভিনয় করে তিনি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলেন তার বহুমুখী প্রতিভার। সেই কথায় পরে আসি, আগে আসা যাক কে এই নাসির উদ্দিন খান, যিনি গত দু'তিন বছরে দেশের সকল প্লাটফর্মে সব চাইতে বেশী চর্চিত তারকা।
১৯৭২ সালের ২১ নভেম্বর মনু মিয়া শোরদার এবং আম্বিয়া খাতুন এর ঘরে নাসির উদ্দিন খান চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম সিটি কলেজ থেকে ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স শেষ করে ক্যারিয়ার গড়তে ভর্তি হয়ে যান চাটার্ড একাউন্টেন্সি "সিএ" কোর্সে, কিন্তু সিএ সিসি কমপ্লিট করে আর পরীক্ষা দেয়া হয় নাই। এরপর সেই সিএসিসি সার্টিফিকেট নিয়ে চাকরি জীবন শুরু করেন চট্টগ্রামের পিএইচপি গ্রুপে। এরপর বেশ কিছু কোম্পানী বদল করে এক সময় সিদ্ধান্ত নেন অভিনয়ে ক্যারিয়ার এগিয়ে নেয়ার। ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রামে একজন নাট্য শিল্পী হিসেবে অভিনয় জীবন শুরু করে ২০১৫ সাল পর্যন্ত থিয়েটারে অভিনয় চালিয়ে যান চাকুরীর পাশাপাশি। ২০১৬ সালে চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশনে কাজ করার জন্য ঢাকায় চলে আসেন নাসির উদ্দিন খান এবং প্রথম ব্রেকথ্রু মিলে ২০১৭ সালের আয়নাবাজি সিরিজের কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ‘অস্থির সময়ের স্বস্তির গল্প’-এর ‘মাহুত’ নাটকের একটি চরিত্রে, যেটিতে অভিনয় করে তিনি বেশ আলোচিত হন। তারপর থেকে একে একে কাজ করেছেন সিনেমা ন ডরাই, পরাণ, হাওয়া, দামাল, মেইড ইন চিটাগং, ফ্রাইডে, রিকশা গার্ল'তে। টেলিভিশন এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কাজ করেছেন তাকদীর, খাঁচার ভেতর অচীন পাখী, মহানগর, বলি, সিন্ডিকেট, গুটি এবং সবশেষ মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন এ। এইগুলোর বাইরেও তিনি বেশ কিছু নাটক সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই স্বল্প সময়ে।
এর মধ্যে ওয়েব সিরিজ ‘তাকদীর’-এ ডোম ও ‘মহানগর’ থানার ছিঁচকে অপরাধী চরিত্র তাকে আলোচনায় আনে। এরপর পরাণ সিনেমার পুলিশ অফিসার চরিত্রে তিনি ব্যাপক প্রশংসিত হন। এরপর ‘হাওয়া’ মুভিতে নাগু চরিত্রে, ফ্রাইডে চলচ্চিত্রে পলাশ কাদের তরফদার ওরফে "পকাত" করে তিনি নিজেকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যান। এরপরই আসে তার সর্বাধিক আলোচিত চরিত্র নিয়ে ‘সিন্ডিকেট’-এ রসিক মন্দলোক অ্যালেন স্বপন যাকে নিয়ে পরবর্তীতে নির্মিত হয়েছে ওয়েব সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। তার চরিত্রগুলোর সংলাপ দর্শকের মুখে মুখে ঘুরতে থাকে। কিছু আলোচিত সংলাপঃ
‘রূপালিরে আবার কল টল দিয়েন না, নাম্বারটা ডিলিট করে দিয়েন’। - 'তাকদীর'
‘মাইসেলফ অ্যালেন স্বপন’, ‘নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারলাম না’—‘সিন্ডিকেট’
‘তই তই... আমার ময়না পাখিটা কই?’ - ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’
'কী গ্যারান্টি আচে লাইফের। কোনো গ্যারান্টি নাই। আপনার পিউচার নিচ্চয়তার গ্যারান্টি আমি দেব।' - ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’
সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, অভিনয়ের সবক্ষেত্রেই তাকে দেখা যাবে, যদি সবকিছু তার কমফোর্টজোনে থাকে। আর এর পথ ধরেই এই ঈদে গুণী এবং তারকা নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী নাসির উদ্দিন খান, তারিন জাহান এবং রাশেদ মামুন'কে নিয়ে নির্মান করেছেন "ক্যান্সার পার্টনার" নামক নাটকটি।
========================================================================
টিভি নাটকে দেখা যাবে কি না?
আমি অভিনেতা। অভিনয়ের সব ক্ষেত্রেই আমাকে দেখা যাবে। কিন্তু সবকিছু আমার কমফোর্ট জোনে থাকতে হবে। কমফোর্ট জোন বলতে চরিত্র, গল্প, পরিচালক, সব কিছু মিলিয়ে ঠিক থাকলে দেখা যাবে। - সময়ের কণ্ঠস্বর
========================================================================
তো কেমন ছিলো এই নাটকে গুণী অভিনেতা নাসির উদ্দিন খান এর অভিনয়। আইনজীবী তারিন এর বাল্যবন্ধুর চরিত্রে একটুও মানায় নাই নাসির উদ্দিন খান'কে। তার সাথে তার উদ্ভট পরচুলা তাকে শুরুতেই হাস্যকর একটা ইমেজ দিয়েছে। আর শিক্ষিত গদ্য ভাষায় তার সংলাপ বলার চেষ্টা চোখে বেঁধেছে। চয়নিকা চৌধুরী প্রথমত তারিন এর বাল্যবন্ধুর চরিত্রে নাসির উদ্দিন খান'কে কাস্ট করেই ভুল করেছেন, তার সাথে এরকম হাস্যকর হেয়ার স্টাইলের পরচুলা তার মাথায় না চাপিয়ে সাধারণ হেয়ার স্টাইলে তাকে প্রেজেন্ট করলেও পারতেন। নাসির উদ্দিন খান এর ডায়লগ থ্রোতে আঞ্চলিকতার টান থেকে বের হতে হবে। নইলে উনি সব ধরনের চরিত্র করতে একেবারেই ব্যর্থ হবেন। তার সিগ্নেচার হাসি যা এই চরিত্রে ছাগলের মত মনে হয়েছে। তার চাইতে বহুগুনে ভালো অভিনয় করেছেন রাশেদ মামুন, তারিন এর স্বামীর চরিত্রে। রাশেদ মামুন এর অভিনয়ে অনেক উন্নতি চোখে পড়বে নাটকটি যদি দেখে থাকেন। কথা হল নাসির উদ্দিন খান সবকিছু আপনার কমফোর্ট জোনে থাকবে না, আপনাকে কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে আসতে হবে। নইলে এই বৃত্তবন্দী সীমানায় আরও কিছু আলোচিত সমালোচিত হিট, সুপার হিট নাটক, মুভি, ওয়েব সিরিজ এর পর এই পথচলা থেমে যেতে বাধ্য। এর উদাহরণ হিসেবে মিশা সওদাগর এর কথা বলতে পারি। কিছুদিন আগে তার "যদি আমি বেঁচে ফিরি" নামের ওয়েব সিরিজ মুক্তি পায়, যেখানে সকল চরিত্রের ডায়লগ থ্রো এক রকম আর মিশা সওদাগর এর ডায়লগ থ্রো অন্যরকম, বছর বিশেক আগের বাংলা সিনেমার বাবা বা নায়কদের মাইক কাঁপানো সংলাপ টাইপের; সত্যি বলতে যা বিরক্তিকর লেগেছে। এই ঈদে "সাহারা মরুভূমি" নামক চ্যানেল আইতে প্রচারিত নাটকে সাবিলা নুর এর সাথে তাকে একই সমস্যায় দেখেছি, সিনেমাটিক ডায়লগ। এটা যেন তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে গেছে, উনি সেটা থেকে আপ্রাণ চেষ্টা করেও বের হতে পারছেন না।
আর চলচ্চিত্র, নাটক, অভিনয় শিল্প বিশারদদের নিকট আকুল আবেদন হুট করেই যে কাউকে লিজেন্ডারি বানিয়ে ফেলবেন না। লিজেন্ড হয়ে কেউ আসে না, তার কর্ম তাকে সময়ের সাথে লিজেন্ড বানিয়ে দেয়। একজন হুমায়ুন ফরিদী হতে যতটুকু পথ পাড়ি দিতে হয়, তার এক দশমাংশএখনও পাড়ি দিয়েছেন কি বরেণ্য আলোচিত অভিনেতা নাসির উদ্দিন খান? প্রশ্ন রেখে গেলাম।
আর ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ টিজার দিয়ে যে সুরসুরি দিয়ে দর্শকদের সিনেমায় এনে হতাশ করেছে, তা নিয়ে শুধু বলতে পারি, এই সিরিজে আরও অনেক বোল্ড এন্ড এডাল্ট কন্টেন্ট যুক্ত হতে পারতো কাহিনীর দাবী অনুযায়ী। গল্পে অনেক ফাঁক রয়ে গেছে, সেগুলো কোথাও আলোচনা হচ্ছে না। আলোচনায় শুধু মিথিলার ব্লাউজের হুক আর "তই তই তই..."
সবশেষে বলবো ব্যক্তিগত অভিমত, "নাসির উদ্দিন খান - বাস্তবতার নিরিখে অভিনয়ের মান প্রশ্নসাপেক্ষ"
মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন
যদি আমি বেঁচে ফিরি
ক্যান্সার পার্টনার
সাহার মরুভূমি