somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোদাইকানাল "ফরেস্ট ডে ট্রিপ"

১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সারারাত বাসের দুলুনিতে এসির হাওয়া গায়ে মাখতে মাখতে ভালই একটা ঘুম দিলাম। ভারতীয় স্লিপার বাসে প্রথম অভিজ্ঞতা মন্দ না। ভোরবেলা বাস পাহাড়ি এলাকায় প্রবেশ করে মোচড় দেয়া শুরু করলে শরীর এপাশ হতে ওপাশ হওয়া শুরু করে দিল। ফলে ঘুমেরও দফারফা হয়ে গেল। পারভিইন ট্রাভেলস এর বাস এসে থামালো হোটেল "শিভাপ্রিয়া" এর পার্কিং এ। বিশাল চারতলা বিল্ডিং এর পুরানো হোটেল, সাথে লাগোয়া রেস্টুরেন্ট যেখানে ৯৯ রুপীতে মিনি বুফে ব্রেকফাস্ট, ১৪০ রুপীতে বিশাল ভ্যারাইটি ভেজ লাঞ্চ এবং ডিনার এর ব্যবস্থা রয়েছে। সেই সাথে সাইট সিয়িং এর জন্য রয়েছে মিনিবাস প্যাকেজ, ০৪টি ভিন্ন রুটের ০৪টি ভিন্ন ভিন্ন প্যাকেজ। আমি এদিন বুকিং দিলাম ফরেস্ট প্যাকেজ এর। কথা ছিল বেস্ট অফ কোদাই - পপুলার টুরিস্ট স্পট ডে ট্রিপ এর; কিন্তু পর্যাপ্ত টুরিস্ট না হওয়ায় বেঁছে নিতে হল ফরেস্ট ট্যুর এর প্যাকেজ।







প্রথম ছবিতে 'হোটেল শিভাপ্রিয়া' আর পরের ছবি দুটো 'হোটেল ক্লিফটন' এর।

প্যাকেজ বুকিং দিয়ে হোটেলের রুম কন্ডিশন এবং রুমরেন্ট দেখে সিদ্ধান্ত নিলাম, থাক বাবা আমি আগে হতে বুকিং ডট কম এ যে হোটেলে রুম বুক দিয়েছি, সেখানেই চলে যাই। তাই শিভাপ্রিয়া হোটেল হতে কখন আজকের ডে ট্রিপের বাস ছাড়বে তা জেনে নিয়ে আমার ব্যাগপত্তর নিয়ে হেঁটে হেঁটেই চলে এলাম বুকিং দেয়া হোটেল "ক্লিফটন" এ। এসে দেখি বিশাল বাগানবাড়ি টাইপ হোটেলে ভিন্ন ভিন্ন বেশ কিছু ডুপ্লেক্স কটেজ টাইপ ভবন নিয়ে ছড়ানো ছিটানো বিশাল এলাকা। ফুলের বাগানে সাজানো চমৎকার পরিবেশ। কিন্তু বিপত্তি দেখা দিলো, আমি ছাড়া এখানে কোন গেস্ট নাই, কারন রিনোভেশন এর জন্য কন্সট্রাকশন এর কাজ চলছে।



আমি এই ছুতোয় বুকিং ডট কম এর বুকিং ক্যান্সেল করে দিয়ে সেখানে থাকা একমাত্র কেয়ারটেকার কাম ম্যানেজার কাম রুমবয় এর সাথে দর কষাকষি করে ৪০০ রুপি কমে ১৬০০ রুপির রুম ১২০০ রুপিতে বুক করে নিয়ে ব্যাগ রেখে দ্রুত বের হয়ে এলাম, এবার নাস্তা করার পালা। শিভাপ্রিয়া হোটেল থেকে ক্লিফটনে আসার সময়ই দেখেছিলাম পথে রয়েছে "আর রাহমান" রেস্টুরেন্ট, প্ল্যান সেখানেই নাস্তা সেরে নেব। যেহেতু দক্ষিণ ভারতে প্রবেশ করেছি, তাই শুরু হোক দক্ষিণ ভারতীয় পদ দিয়েই নাস্তা, তাই দ্রুত নাস্তা সারার লক্ষ্যে বেঁছে নিলাম ভেজ ধোসা। নাস্তা শেষ করে হোটেল শিভাপ্রিয়ার কম্পাউন্ডে গিয়ে দেখি গাড়ী রেডি, আজকের দর্শনার্থীরা এক এক করে উঠে বসছে। বেলা সাড়ে নয়টা নাগাদ আমরা রওনা হয়ে গেলাম আজকের দিনের সাইট সিয়িং ট্যুর এর জন্য।

সেদিনের ডে ট্রিপের গাড়ী





প্রথম স্পট ছিল, সাইলেন্ট ভ্যালী ভিউ পয়েন্ট। উপরের ছবি দুটো সেই ভিউ পয়েন্ট এর যা নেট হতে সংগৃহীত, কুয়াশার কারনে সেদিন আমি কোন ভিউই পাই নাই। আরেকটা পয়েন্ট ছিলো সেখানে সুসাইডাল পয়েন্ট যার ছবি নীচেরটা -



সাইলেন্ট ভ্যালি ভিউ পয়েন্ট কোদাইকানাল এর অন্যতম জনপ্রিয় একটি টুরিস্ট স্পট। এটি বেরিজাম লেক রোডের পিলার রকসের কাছাকাছি। পাহাড়ের উপর থেকে নিচের সাইলেন্ট ভ্যালীর চিত্তাকর্ষক সৌন্দর্য আপনাকে নিশ্চিত মনোমুগ্ধ করবে। এখান থেকে দেখা দৃশ্য আপনাকে বিস্ময়ে অভিভূত করবে নিশ্চিত, এবং সেই সাথে এখানকার নির্মল পরিবেশ এবং প্রচুর গাছপালা জায়গাটার আবেদন কয়েকগুন বাড়িয়ে দেবে। সকাল, শেষ বিকেল এবং সন্ধ্যার মুহুর্ত এই সাইলেন্ট ভ্যালি ভিউ পয়েন্ট ঘুরে দেখার আদর্শ সময়। প্রায় সময়ই উপত্যকাটি সাদা কুয়াশায় ঢেকে যায়, ফলে তখন ভিউ পয়েন্ট হতে কিছুই দেখা যায় না। আমাদের কপাল এমনই মন্দ ছিলো প্রথম স্পটেই কিছু দেখতে পেলাম না, কুয়াশায় চারিদিক ঢেকে একাকার হয়ে ছিলো। ঘন কুয়াশার কারনে কিচ্ছু দেখা যায় নাই।

নীচের ছবি তিনটিতে সেদিনের কুয়াশায় ঢাকা সাইলেন্ট ভ্যালি ভিউ পয়েন্টঃ







এরপরের গন্তব্য ছিলো, বেরিজাম লেক ভিউ, পাহাড়ের সারির মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক লেক, যদিও অনেক উপরে ভিউ পয়েন্টটা ছিলো; তবে ভিউ ছিলো অপূর্ব। যদিও পরে গিয়েছিলাম নীচে মূল লেকে, আরও দুয়েকটা স্পট ঘোরার পর। নীচে ছবিতে বেরিজাম লেক ভিউ পয়েন্ট -













কোডাই বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় 23 কিমি দূরে অবস্থিত এই বেরিজাম লেক যা কোদাইকানালের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্পট। এর সতেজ পরিবেশ এবং চারপাশে সবুজের সাথে লেকটি একটি আশ্চর্যজনক পিকনিক স্পট তৈরি করে। এই লেক এলাকায় প্রবেশের জন্য একটি ফরেস্ট পাস প্রয়োজন। আপনি সহজেই জেলা বন অফিস থেকে পাস পেতে পারেন যা পর্যটকদের বিনামূল্যে পাস প্রদান করে। মাছ ধরতে আগ্রহী হলে, মৎস্য দফতরের কাছ থেকে মাছ ধরার অনুমতি নেওয়া সাপেক্ষে সেই ব্যবস্থাও রয়েছে। এছাড়া, আগ্রহী হলে, কেউ নৌকা ভ্রমণে লেকের শান্ত জল চিড়ে এগিয়ে যেতে পারেন চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে। এই বেরিজাম লেকে পাশে একটি একশত বছরের পুরানো ইটের বিল্ডিংও রয়েছে যা আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান পর্যটকদের নিকট।



এরপর আমরা গেলাম ফায়ার ওয়াচ ভিউ (কিচ্ছুই না,ফালতু, আমার ভালো লাগে নাই), ক্যাপ্স ফ্লাই ভিউ। আরেকটা ভিউ পয়েন্ট হতে দেখেছি কেরালার মুন্নারের টপ ভিউ পয়েন্ট, যা গতবছর এর কেরালা ট্রিপে ঘুরে এসেছি। এই টপ ভিউ পয়েন্ট হতে আবার দেখা যায় "কুলুক্কুমালাই" ভিউ পয়েন্ট, যার অপর পাশে আছে মাদুরাই। এই রেঞ্জটা খুব মজার, আমি ট্রেকার হলে এই রুট নিয়ে একটা ট্রেকিং করতাম। সাইলেন্ট ভ্যালি ভিউপয়েন্ট এর রাস্তা থেকে মাত্র কয়েক ফুট দূরে রয়েছে ক্যাপস ভ্যালি ভিউ পয়েন্ট যা কোডাইকানালের একটি প্রধান আকর্ষণ! তামিল ভাষায় "থপ্পি ভেসুম পারাই" নামে পরিচিত, এর অর্থ "ক্যাপ রক নিক্ষেপ"। কারণ আপনি যদি পাহাড় থেকে একটি টুপি নিক্ষেপ করেন তবে সেখানে প্রবল বাতাসের কারণে এটি আপনার কাছে ফিরে আসবে। কোডাইকানালের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিসগুলির মধ্যে একটি হল এই ক্যাপ ব্যবহার করে আপনার এবং উপত্যকার মধ্যে একটি রাউন্ড বুমেরাং খেলা! উল্লেখ্য যে, এটি কোডাইয়ের চারপাশে ভেজা এবং পাহাড়ের পথগুলি খুব পিচ্ছিল।

ছবিতে ক্যাপ্স ফ্লাই ভিউ পয়েন্টঃ



ক্যাপ্স ফ্লাই ভিউ পয়েন্ট হতে গেলাম পরের গন্তব্য, "মাথিকেতান ফরেস্ট", বিশেষ একটা বন। রাস্তার উপরাংশে সাধারণ বন, নীচে পাহাড়ের সারি ধরে গহীন বন, যেখানে গেলে মানুষ পথ হারিয়ে ফেলে। স্থানীয় ভাষায় মাথিকেতান মানে পাগলাটে বা হারিয়ে যাওয়ার বন। প্রতি বছর বেংগালুরু হারিবাল মেডিকেল কলেজের স্টুডেন্টরা এখানে আসে নানান ভেষজ এর খোঁজে। রাস্তায় মূল ক্যাম্প স্থাপন করে কোমরে দড়ি বেধে নেমে যায় বনে, রাস্তা হারানোর ভয়ে। এখানে সুগন্ধি নানান গাছের পাতা আছে, যা দিয়ে পারফিউম তৈরি হয়। আমাদের গাড়ীর ড্রাইভার দু'ধরণের দুটি পাতা এনে দিয়েছিল, যা হাতে নিয়ে একটু কচলে নিতেই দীর্ঘক্ষণ ঘ্রাণ ছিল হাতে।



এই Mathikettan solai | kodaikanal ফরেস্ট সম্পর্কে আরও জানতে দেখতে পারেন এই ভিডিওটিঃ


এরপর গেলাম, সেই বেরিজাম লেকে, কিন্তু কপাল খারাপ বোটিং করার সুযোগ পাই নাই।







আর এই লেক ভ্রমণের মাধ্যমেই শেষ হলো আজকের ডে লং প্যাকেজ টুর, চললাম এরপর ফিরতি পথে হোটেল শিভাপ্রিয়ার দিকে, দুপুর একটার মধ্যে ফিরে এলাম। এবার প্ল্যান দুপুরের খাবার খেয়ে কোদাইকানাল শহরটা ঘুরে দেখার, সেই গল্প থাকবে পরের পর্বে। আর হ্যাঁ, দক্ষিণ ভারতে গিয়ে কলাপাতায় তাদের লোকাল খানাখাদ্য খেতে আমার বেশ ভালো লাগে, উপভোগ করে; যদিও আমাদের দেশের বেশীরভাগের জিহবায় উহা ভালো অভিজ্ঞতা নাকি দেয় না... কি জানি ভাই, আমার সেদিনের দুপুরের খাবার নীচের ছবিতে -



এই ট্রিপ এর একটি ভিডিও খুঁজে পেলাম ইউটিউবে। আমার কাছে ভিডিও তেমন নাই, তাই আগ্রহীদের জন্য খুঁজে পাওয়া ভিডিওটি শেয়ার করলামঃ



আবার দক্ষিণ ভারতে ভ্রমণ -TDTK (Tour D Tamilnadu & Karnataka)
পর্ব - ০৩
ভ্রমণকালঃ জুন, ২০১৭


এই সিরিজের সকল পোস্টঃ
* আবার দক্ষিণ ভারতে ভ্রমণ - শুরুর গল্প
* চলে এলাম কোদাইকানাল
* কোদাইকানাল "ফরেস্ট ডে ট্রিপ"

এক পোস্টে ভারত ভ্রমণের সকল পোস্টঃ বোকা মানুষের ভারত ভ্রমণ এর গল্পকথা
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০১
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×