somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চলে এলাম কোদাইকানাল

২২ শে নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গভীর ঘুমে তলিয়ে যাওয়া মানুষকে জাগানো খুব কষ্টসাধ্য, যদি তার রুমের দরজা থাকে বন্ধ। আগের রাতে আড়াইটা নাগাদ ঘুমাতে গিয়েছিলাম হোটেল রুমে, সারাদিন অফিস করে ঢাকা থেকে কলকাতা গিয়ে নানান ঝামেলার পর শহরের বাইরে হোটেল খুঁজে পাওয়া... উফফ, ভারতে জীবনের প্রথম সলো ট্যুরে যদি শুরুতেই গণ্ডগোল বাঁধে তাহলে কেমন লাগে? যাই হোক দরজায় কারো খুব জোরে জোরে নক করার শব্দে আরামের গভীর ঘুমের অতল হতে ভেসে উঠে চোখ খুলে দেখি অন্ধকার ঘরে আমি একা। কয়েক মুহুর্তে একটু ধাতস্থ হয়ে দরজা খুলতে দেখি দরজায় দাঁড়িয়ে হোটেলের রিসিপশনের সেই ছেলেটি, যে গতকাল রাত দুটোর সময় রুম রেডি করে আমার জন্য অপেক্ষায় ছিলো। ওকে জানিয়ে রেখেছিলাম, আজ দুপুরে আমার ফ্লাইট, কলকাতা টু চেন্নাই এর। ভাগ্যিস কথা প্রসঙ্গে তাকে বলেছিলাম, না হলে খবর ছিলো। আমাকে যখন ঘুম থেকে জাগালো সে, তখন ঘড়িতে সকাল সাড়ে দশটা! দ্রুত ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে (আসলে ব্যাগ গোছানোর তেমন কিছু ছিলোই না) দ্রুত সকালের নাস্তা করে হাওড়া জেলার বেতর, ইছাপুর হতে ট্যাক্সি নিয়ে রওনা হয়ে গেলাম কলকাতা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের দিকে।





এই ট্রিপে একে তো ছিলাম একাকী, সাথে ছিলো না কোন ভারতীয় মোবাল সিম কার্ড। ফলে হোটেল বা কোন স্থানের ওয়াইফাই এর উপর নির্ভর করে বাকীটা সময় নেটওয়ার্ক বিহীন চলতে হয়েছে। দুপুরের ফ্লাইট ছিলো, বেলা বারোটার কিছু পরে পৌঁছে গেলাম বিমানবন্দর, বোর্ডিং পাস নিয়ে চেকিং শেষে অপেক্ষার পালা ফ্লাইটের টাইমে। এয়ারপোর্টে ফ্রি ওয়াইফাই রয়েছে ঠিকই, কিন্তু দেখলাম সেটাতে লগইন করতে ভারতীয় মোবাইল নাম্বার দরকার, যেটাতে ওটিপি পাঠাবে। যেহেতু সাথে কোন ভারতীয় মোবাইল সিম নাই, তাই আর কোন কাজ না পেয়ে কানে হেডফোন গুঁজে পছন্দের প্লেলিস্ট চালিয়ে দিলাম। অপেক্ষার পালা শেষে নির্দিষ্ট সময়ে বিমানে উঠে বসলাম নিজ আসনে, সন্ধ্যার আগে আগে পৌঁছে গেলাম চেন্নাই। এই ট্রিপে যেহেতু সলো ট্রিপ, তাই কোন ট্রান্সপোর্টের টিকেট আগে থেকে করা ছিলো না শুধুমাত্র ঢাকা-কলকাতা-চেন্নাই আর ব্যাঙ্গালোর-কলকাতা-ঢাকা'র বিমান টিকেট ব্যতীত। চেন্নাই পৌঁছে প্রথম কাজ ছিলো সেদিনের রাতের বাসে চেন্নাই টু কোদাইকানাল এর টিকেট করা। এয়ারপোর্ট হতে বের হতেই দেখলাম MakeMyTrip সহ বেশ কয়েকটি ট্রাভেল শপ, সেখানে খোঁজ করে দেখি টিকেটের প্রাইস কিছুটা বেশি চায়। এয়ারপোর্টের এক গার্ডকে জিজ্ঞাসা করলাম এয়ারপোর্ট হতে বাস ডিপো সহজে কিভাবে যাওয়া যাবে? সে এয়ারপোর্ট এর লাগোয়া মেট্রো রেল দেখিয়ে দিলে হাঁটা শুরু করলাম সেদিক পাণে।











চেন্নাই এয়ারপোর্ট থেকে প্রায় পনেরো কিলোমিটার দূরে কোয়িম্বেদু নামক স্থানের বাস ডিপো হতেই মূলত বাসগুলো ছেড়ে যায়, তাই আমি সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে মেট্রো করে রওনা দিলাম। কোয়িম্বেদু মেট্রো স্টেশন থেকে মিনিট পাঁচেক এরও কম সময়ের হাঁটা দূরত্বে বাস ডিপো। সেখানে গিয়ে "Parveen Travels" এর কাউন্টার খুঁজে সেখান হতে স্লিপার কোচের টিকেট কেটে নিলাম প্রায় দুইশত রুপী কমে, যা চেয়েছিলো বিমানবন্দরের লাগোয়া ট্রাভেল শপগুলোতে। বাস ছাড়তে তখনও অনেক দেরী, পেটে ছুঁচোর ডাক শুনে বাস কাউন্টারে ব্যাগ রেখে পাশেই একটা চায়ের দোকান হতে হালকা চা-নাস্তা করে নিলাম। সাথে রাতে খাওয়ার জন্য কিছু ড্রাই ফুড আর জুস কিনে নিলাম। রাত আটটা নাগাদ বাস ছেড়ে গেল চেন্নাই থেকে কোদাইকানাল এর উদ্দেশ্যে।











সেবারই প্রথম আমার স্লিপার কোচে বাস জার্নি, বাস ছেড়ে যেতে নিজের স্লিপিং চেম্বারে আরামে শরীর এলিয়ে দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ গান শুনে সময় কাটিয়ে এক সময় ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু এতো সহজে যে ঘুম আসার নয়, তাই বাসের কাঁচ ভেদ করে রাতের চেন্নাই শহর ছেড়ে মহাসড়ক ধরে কোদাইকানাল এর পথের পাণে চেয়ে রইলাম বহুটা সময়। এভাবেই কখন যেন ঘুমের জগতে হারিয়ে গেলাম। ঘুম যখন গভীর এমন সময়ে হুট করে ঘুম ভেঙ্গে গেল দুলুনিতে। স্লিপিং কোচে এটাতো মহা বিরক্তিকর ব্যাপার! গাড়ী যখন টার্ন করছে, বা হালকা পাহাড়ি রাস্তায় মুভ করছে, তখন গাড়ীর মুভমেন্টের সাথে সাথে দুই ফিট প্রস্থের সিঙ্গেল স্লিপার সিটে আমার শত কেজি ওজনের নাদুস নুদুস শরীরখানি বাঁক খেয়ে উপর হতে নীচে পড়ার উপক্রম হল, পড়ে যে যায় নাই, এই ভাগ্য। আসলে ভাগ্যও নয়, সিটের মাঝ বরাবর থাকা ধাতব বেরিকেড এর কল্যাণে সে যাত্রায় রক্ষা পেলাম। =p~

এভাবে দুলুনিতে এক সময় শরীর ব্যাটাও বিরক্ত হয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেল, তাইতো কোন সময় ঘুমিয়ে গেলাম টের পাই নাই। এক সময় বাসের কন্ডাক্টর এর হাঁকডাকে ঘুম ভাঙ্গলে দেখি চলে এসেছি কোদাইকানাল। সবে মাত্র রাতের আঁধারের চাদর সরিয়ে ধরণীতে ভোরের প্রথম স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে পড়েছে চারিধারে...

আবার দক্ষিণ ভারতে ভ্রমণ -TDTK (Tour D Tamilnadu & Karnataka)
পর্ব - ০২
ভ্রমণকালঃ জুন-জুলাই, ২০১৭


এই সিরিজের সকল পোস্টঃ
* আবার দক্ষিণ ভারতে ভ্রমণ - শুরুর গল্প
* চলে এলাম কোদাইকানাল

এক পোস্টে ভারত ভ্রমণের সকল পোস্টঃ বোকা মানুষের ভারত ভ্রমণ এর গল্পকথা
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:৫০
৪টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাঘ আর কুকুরের গল্প......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৩২

বাঘ আর কুকুর দুটোই হিংস্র এবং সাহসী প্রাণী। বাঘ, কুকুর যতই হিস্র হোক মানুষের কাছে ওরা নেহায়েতই পোষ মেনে যায়। আমাদের সমাজে, রাজনীতিতে অনেক নেতাদের 'বাঘের বাচ্চা' বলে বিরাটত্ব জাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমরা উকিলরা কেউ চিন্ময়ের পক্ষে দাঁড়াবো না , না এবং না

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২




সাবাস বাংলাদেশের উকিল । ...বাকিটুকু পড়ুন

আগরতলায় হাইকমিশনে হামলা কাকতালীয় না কি পরিকল্পিত?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩২

গতকাল (২ ডিসেম্বর) ভোরে আগরতলার হিন্দু সংগ্রাম সমিতির বিক্ষোভকারীদের দ্বারা বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে হিংসাত্মক বিক্ষোভের পর ন্যাক্কারজনকভাবে আক্রমণ করে। বিভিন্ন তথ্যে চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত যে বিক্ষোভকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের সাথে যুদ্ধ করে ভারত লাভবান হবে বলে মনে করি না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০



আমাদের দেশে অনেক মুসলিম থাকে আর ভারতে থাকে অনেক হিন্দু। ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম যুদ্ধে মুসলিমদের সাফল্য হতাশা জনক নয়। সেজন্য মুসলিমরা ভারতীয় উপমহাদেশ সাড়ে সাতশত বছর শাসন করেছে।মুসলিমরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূস গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড - শেখ হাসিনা।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৩৬


৫ই আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পলায়নের পর বাংলাদেশের ক্ষমতা গ্রহণ করা নতুন সরকার কে বিপদে ফেলতে একের পর এক রেকর্ড ফোন কল ফাঁস করতে থাকেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×