somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবার দক্ষিণ ভারতে ভ্রমণ - শুরুর গল্প

১৬ ই নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মধ্যরাতে উবারে ডাকা প্রাইভেট কারটি করে ছুটে চলেছি হাওড়া ব্রীজ ছাড়িয়ে কলকাতা শহরকে পেছনে রেখে ইছাপুরের দিকে, ঘড়িতে রাত একটার বেশী বাজে তখন। গাড়ীর এসি বন্ধ করে জানালার কাঁচ নামিয়ে দিয়ে নিস্তব্ধ রাতের নীরবতা ভঙ্গ করে ছুটে চলার মাঝে ভাবছিলাম শুরুতেই ঝঞ্ঝাট, গতবারের ভারত ভ্রমণের মত এবারও না প্যারাময় হয়ে যায় পুরো ট্রিপটি। গতবার ছিলো দলগত ভ্রমণ, এবার সম্পূর্ণরূপে একা, ভারতে প্রথম সলো ট্রিপে বের হয়ে রাত দশটার পরে পৌঁছেছি কলকাতা এয়ারপোর্টে, এরপর কলকাতা পৌঁছে শুরু হল ঝামেলা। অবশ্য বিশাল এক ঝামেলা ঢাকা এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর আগেই হতে পারতো, ভাগ্য গুণে বেঁচে গেছি।

২০১৬ এর ডিসেম্বর মাসের শেষ নাগাদ প্ল্যান ছিলো উড়িষ্যা ভ্রমণের, কিন্তু নানান কারনে তা সম্ভব হয় নাই, হুট করেই নতুন চাকুরীতে যোগদান, ফলে প্রবেশনারি পিরিয়ডে ঐচ্ছিক ছুটি না থাকার "মানব সম্পদ বিভাগ" এর আইনি মারপ্যাচের কবলে পড়ে ঘোরাঘুরির র‍্যালী ঝিমিয়ে পড়েছিলো। মে মাসের দিকে জানলাম আসন্ন ২০১৭ সালের ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে অফিশিয়াল ছুটি থাকবে প্রায় এক সপ্তাহ! সাথে সাথে মাথায় ভ্রমণের পোকাগুলো কিলবিল করা শুরু করে দিলো। ঈদুল ফিতরের আসন্ন সেই ছুটিতে পরিকল্পনা করে ফেললাম নয়দিনের একটা লম্বা সলো ট্রিপের দক্ষিণ ভারতের কর্নাটক এবং তামিলনাড়ু প্রদেশের জনপ্রিয় কিছু এলাকায়, রুট অনেকটা এইরকম ছিলঃ ঢাকা-কলকাতা-চেন্নাই-কোদাইকানাল-উটি-কুনুর-কোড়গু-মাইসুর-বেংগালুরু-কলকাতা-ঢাকা।

প্রথমে কিন্তু প্ল্যান ছিলো না সলো ট্রিপ করার, আশেপাশে খোঁজ করলাম কিছু সঙ্গী সাথী পাওয়া যায় কি না। নতুন চাকুরীতে ব্যস্ততা বেশী ছিলো, ফলে এই ব্যাপারে তেমন দৌড়ঝাঁপ করতে না পেরে শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিলাম একাই এবার না হয় বের হবো ভারত ভ্রমণে, একটা নতুন অভিজ্ঞতা হবে না হয়। প্ল্যান ফাইনাল করতে গিয়ে পড়লাম "সাধ এবং সাধ্যের সমন্বয়" এর অভাবে। ছুটি আছে আট দিন, কিন্তু আমার রুট অনুযায়ী ভ্রমণ করলে বাই এয়ারে ঢাকা-চেন্নাই যাওয়া এবং বেঙ্গালুরু-ঢাকা আসা ধরেও ১০-১২ দিন সময়ের প্রয়োজন। কি আর করা, মন খারাপ করে প্ল্যান থেকে কুনুর আর কোড়গু ছেঁটে ফেলে প্ল্যান রিসাফল করে ঢাকা-কলকাতা-চেন্নাই যাওয়া আর ফেরার পথে বেংগালুরু-কলকাতা-ঢাকা এয়ার টিকেট করলাম এয়ার ইন্ডিয়ায়। সাথে নির্ধারিত তারিখগুলোর জন্য প্রতিটি জায়গায় বুকিং ডট কম হতে দিলাম হোটেল বুকিং।

ঈদের দ্বিতীয় দিন বিকেল পাঁচটা নাগাদ রওনা দিলাম পুরাতন ঢাকার বাসা হতে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে, রাস্তাঘাট ফাঁকাই ছিলো, সাড়ে ছয়টার মধ্যে এয়ারপোর্ট পৌঁছে গেলাম। সাতটার মধ্যে বোর্ডিং পাস, ইমিগ্রেশন শেষ করে ওয়েটিং লাউঞ্জে বসে রইলাম, ফ্লাইট রাত ০৯:২০ এ। গান শুনে আর বসে থেকে অলস সময় পার করে প্লেনে উঠে নিজের আসনটি খুঁজে পেতে দেখি আমার সিট পড়েছে ইমার্জেন্সি এক্সিটের আগের সারিতে, সোজা হয়ে বসে থাকতে হল, সাথে মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে আমার সামনের সিটের লুজ কন্ট্রোল, মানে সিট ভাংগা। যাত্রী মহোদয় অত্যন্ত ভদ্রলোক, বারবার বলা সত্ত্বেও উনি আরামে হেলান দিচ্ছিলেন, আর সিট এসে ঠেকছিল আমার হাটুতে। কয়েকবার বলার পরেও কবি নীরব, অতিশয় ভদ্দরলোক কি না! ফলে আমিও ক্ষ্যান্ত দিলাম।

ভারতীয় সময় দশটা নাগাদ প্লেন কলকাতায় ল্যান্ড করলে পরে এয়ারপোর্ট থেকে ইমিগ্রেশন শেষ করে লাগেজ নিয়ে বের হলাম রাত সাড়ে দশটায়। এয়ারপোর্ট হতে কলকাতার কানেক্টিং বাস সার্ভিস বুঝি বন্ধ হয়ে গেছে, তাই ৬০০ রুপি ভাড়ায় ট্যাক্সি ঠিক করে পার্ক সার্কাস রোডের কোয়েস্ট মলের পেছনে "খান গেস্ট হাউস" এর উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলাম। বুকিং ডট কম থেকে বুক করেছিলাম এই হোটেল, এরা কোন এডভান্স মানি ডিডাক্ট করে নাই ক্রেডিট কার্ড থেকে। আমি কিছুটা সন্দিহান থাকায় যাত্রার দিন সকালবেলা ২৫ টাকা মিনিট খরচ করে মোবাইল হতে কল করে ওদের সাথে কথা বলে আমি ওভার কনফার্ম হইয়াছিলাম, রুম বুকিং দিয়াছিলাম ২০ দিন আগে। সেখানে পৌঁছে শুনি আমার বুকিং করা রুম অন্য কাউকে ভাড়া দিয়ে দেয়া হয়েছে, অনেক অনুরোধ করলাম কোন একটা ব্যবস্থা করার।

ঈদের মৌসুম হওয়াতে এবং গত বছর গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ভ্রমণ এর অভিজ্ঞতা হতে জানি এতো রাতে কোন হোটেল পাওয়া দুষ্কর, রাত তখন প্রায় বারোটা। যেহেতু আমার শুধুমাত্র রাতটা কাটাতে হবে, পরেরদিন দুপুরে আমার ফ্লাইট কলকাতা হতে চেন্নাই, তাই তাদের অনুরোধ করলাম প্রয়োজনে রিসিপশনে বসে থেকে রাতটা পার করে দেয়া যায় কি না; কিন্তু তারা কোন মতেই রাজী হলো না। প্রথমে কিছুটা উত্তেজিত হয়ে রাগারাগি করলেও, রিসিপশনের ছেলেটার অপরাগতার কারণ বুঝতে পেরে তাকে বললাম, কোন একটা হোটেল ম্যানেজ করে দিতে, আজকের রাতের জন্য। সে নানান জায়গায় ফোন করে একটা হোটেল এর ব্যবস্থা করে দিলো; "হোটেল সিগমা" - বেতর, ইছাপুর, হাওড়া'য়। :((

এরপর উবারে গাড়ী খোঁজাখুঁজি করে একটা ড্রাইভার যোগাড় করে দিল "খান গেস্ট হাউজ" এর লোকেরাই। রাত একটা বাজে গুগল ম্যাপে খুঁজে খুঁজে আমি আর উবার ড্রাইভার রওনা দিলাম 'হোটেল সিগমা'র উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণ গাড়ী চলার পর একটু ধাতস্থ হতে মনে পড়লো এখনো পেটে কোন দানাপানি পড়ে নাই। তাই ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করলাম "রাতের খাবার কিনে নেয়া যায় কি না এতো রাতে কোথাও হতে"? ড্রাইভার জানালো অবশ্যই পাওয়া যাবে, তবে একটু গাড়ী ঘুরাতে হবে। আমি সম্মতি দিতেই গাড়ী ঘুরিয়ে নিয়ে গেল কার্ল মার্কস স্মরণীর প্রসিদ্ধ "ইন্ডিয়া - রেস্টুরেন্ট এন্ড ক্যটারিং" এ। এত রাতেও খোলা, মানুষজন খাচ্ছে। এখান থেকে মাটন বিরিয়ানি কিনে প্রায় আদ্ধেক কলকাতা ;) মধ্য রাতে গাড়ীতে বসে হাওয়া খেতে খেতে চললাম হোটেলের পাণে।

হোটেলের কাছাকাছি এলাকায় পৌঁছেও হোটেল খুঁজে পাচ্ছিলাম না। একটা বাড়ীর সদর দরজার রক'এর উপর তিন চারজন বছর পঁচিশের যুবক বসে এত্ত রাতে আড্ডাবাজি করছিলো, তাদের প্রথমবার পথের হদিশ জিজ্ঞাসা করে কিছুক্ষণ ঘুরে ফের সেখানে পৌঁছে হতাশ হলাম। এভাবে প্রায় মিনিট দশেক ঘুরে অবশেষে রাত প্রায় দু'টা নাগাদ হোটেল সিগমায় এসে পৌঁছলাম। হোটেলের রিসিপশনে ঢুকে দেখি আমার জন্য একজন বসে আছে। আমি পৌঁছামাত্র গেস্ট রেজিস্টারে আমার নাম পরিচয় স্বাক্ষর লিখে নিয়ে আমাকে আমার রুমে নিয়ে গেল। মাত্র সত্তর স্কয়ার ফিটের রুমটি আগে থেকেই এসি চালিয়ে ঠান্ডা করে রেখেছে, এতো হ্যাপার পর এটা ভালো লাগলো। রুমে ঢুকে প্রথমেই একটা শাওয়ার নিয়ে দেহ এবং মন দুটোকেই একটু ফ্রেশ করে নিলাম। এরপর পথে কিনে আনা "ইন্ডিয়া - রেস্টুরেন্ট এন্ড ক্যটারিং" এর মাটন বিরিয়ানি খেয়ে যখন ঘুমাতে যাবো, ঘড়িতে তখন রাত আড়াইটা! পরদিন সারা সকাল রেস্ট, দুপুরের ফ্লাইটে রওনা হব চেন্নাই; ক্লান্ত দেহ নিয়ে দ্রুতই ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলাম।

আমার মত টুরিস্টদের ভ্রমণেও থ্রিল আছে, ট্রাভেলার ভাইয়ারা ;) :P হ্যাপী ট্রাভেলিং। সিরিজের সাথেই থাকুন।

আবার দক্ষিণ ভারতে ভ্রমণ -TDTK (Tour D Tamilnadu & Karnataka)
পর্ব - ০১
ভ্রমণকালঃ জুন-জুলাই, ২০১৭


এক পোস্টে ভারত ভ্রমণের সকল পোস্টঃ বোকা মানুষের ভারত ভ্রমণ এর গল্পকথা
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাঘ আর কুকুরের গল্প......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৩২

বাঘ আর কুকুর দুটোই হিংস্র এবং সাহসী প্রাণী। বাঘ, কুকুর যতই হিস্র হোক মানুষের কাছে ওরা নেহায়েতই পোষ মেনে যায়। আমাদের সমাজে, রাজনীতিতে অনেক নেতাদের 'বাঘের বাচ্চা' বলে বিরাটত্ব জাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমরা উকিলরা কেউ চিন্ময়ের পক্ষে দাঁড়াবো না , না এবং না

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২




সাবাস বাংলাদেশের উকিল । ...বাকিটুকু পড়ুন

আগরতলায় হাইকমিশনে হামলা কাকতালীয় না কি পরিকল্পিত?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩২

গতকাল (২ ডিসেম্বর) ভোরে আগরতলার হিন্দু সংগ্রাম সমিতির বিক্ষোভকারীদের দ্বারা বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে হিংসাত্মক বিক্ষোভের পর ন্যাক্কারজনকভাবে আক্রমণ করে। বিভিন্ন তথ্যে চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত যে বিক্ষোভকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের সাথে যুদ্ধ করে ভারত লাভবান হবে বলে মনে করি না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০



আমাদের দেশে অনেক মুসলিম থাকে আর ভারতে থাকে অনেক হিন্দু। ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম যুদ্ধে মুসলিমদের সাফল্য হতাশা জনক নয়। সেজন্য মুসলিমরা ভারতীয় উপমহাদেশ সাড়ে সাতশত বছর শাসন করেছে।মুসলিমরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূস গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড - শেখ হাসিনা।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৩৬


৫ই আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পলায়নের পর বাংলাদেশের ক্ষমতা গ্রহণ করা নতুন সরকার কে বিপদে ফেলতে একের পর এক রেকর্ড ফোন কল ফাঁস করতে থাকেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×