somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদৃষ্ট (ছোটগল্প)

১০ ই মে, ২০২৫ দুপুর ২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাসা থেকে বের হওয়ার সময়ই আব্বার সাথে দেখা। আমাদের পুরাতন ঢাকার এই জীর্ণ পুরাতন বাড়ির একটাই ভালো দিক, মাঝখানে একটা পেয়ারা গাছ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল উঠান। পেয়ারা গাছের নীচে ভাঙ্গা মোড়ায় আমার আব্বা রশিদ সাহেব বসে আছেন দাঁড়িতে কলপ লাগিয়ে। গত মাস তিনেক ধরে তিনি আমার পেছনে লেগে আছেন চক মোগলটুলি’র তার ছাতার দোকানের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার জন্য। এতো কষ্ট করে বিবিএ এমবিএ করে চকবাজারে ছাতার দোকানী হওয়ার ইচ্ছে বা আগ্রহ কোনটাই আমার নাই। কিন্তু আব্বা কে বুঝাবে?

“এই সাত সকালে মাঞ্জা মাইরা কই যাইবার লাগছেন রাজপুত্তুর সাহেব।” আব্বা রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।

“আব্বা আজকে একটা ইন্টারভিউ আছে, সেইখানে যাইতাছি।”

“আপনেরে কইছি না, কুনু চাকরী বাকরী করার দরকার নাই। আমার দোকানের হাল ধরেন। কথা কি মাথায় যায় না?”

“আব্বা আমি দোকানে বসুম না। আমি কোন প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরী করুম।

“কোম্পানী কোম্পানী করবেন না আমার সামনে। কোম্পানীআলারা কি করে, হেরাও তো বিজনেসই করে। নিজের বাপের বিজনেস রাইখা আরেক হালার বিজনেসে গিয়ে কামলা খাটে আহাম্মক ছাড়া আর কেডায়?”

“আব্বা আমি যাই, দেরী হয়া যাইবো।”

“খাড়াও, এই যে চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে গেতাছো, এইটার বেতন কত?”

“আব্বা, ত্রিশ হাজার টাকা শুরুতে। সাথে লাঞ্চ আর ট্রান্সপোর্ট ফ্রি।”

“তুমি আমার দোকানে চাকরী কর। আমি তুমারে চল্লিশ হাজার দিমু। লগে তোমার ঐ লাঞ্চ আর ট্রান্সপোর্টও ফ্রি দিমু, আরও কিছু থাকলে তাও দিমু।”

আমি কথা না বাড়িয়ে বাড়ির মেইন দরজার দিকে পা বাড়ালাম। পেছন থেকে আব্বা’র শেষ বক্তব্য কানে ঢুকলো, “পড়ালেখা কইরা গাধা হইছে। এরে পড়ালেখা করানটাই ভুল হইছে।”

বাইরে আকাশে মেঘের ঘনঘটা, বৃষ্টি শুরু হতে পারে যে কোন সময়। বাসার সামনেই এলাকার একটা রিকশাওয়ালা দাঁড়িয়ে, তার রিকশায় উঠে বসলাম, গন্তব্য মতিঝিল। মানিব্যাগে হাত দিলাম, খুলে দেখি দুটি একশত টাকার নোটের সাথে কিছু ভাঙ্গতি টাকা। যাওয়া আসা হয়ে যাবে। আজকের ভাইভাটা ভালো হলে এখানে যদি চাকুরীটা হয়ে যায়, ভালোই হবে। বাসা থেকে যাতায়াত সুবিধা। পুরাতন ঢাকা থেকে গুলশান, বনানী, উত্তরায় অফিস করা অনেক প্যারার। আট-নয় ঘন্টা অফিস এর সাথে পাঁচ-ছয় ঘন্টা যাতায়াতে চলে যাবে।

মতিঝিলের কাঁচে মোড়া সুউচ্চ ভবন, এর আঠারো তলায় অফিস, নাম “ডেকার্স এপারেলস লিমিটেড”। রিসিপশনে নাক বোঁচা শ্যামলা মত একটা মেয়ে বসে আছে; মেয়ে না মহিলা তা নিয়ে একটু দ্বিধা হতে পারে। কড়া প্রসাধনী চেহারার খুঁতগুলো আড়াল করতে না পারলেও বয়স নিয়ে একটা রহস্যর সৃষ্টি করেছে। তার কাছে গিয়ে তাকে জানালাম আজ আমার একটা ইন্টারভিউ আছে। মেয়েটি হেসে আমাকে রিসিপশনের ওয়েটিং এরিয়া দেখিয়ে দিয়ে বসতে বললো। মেয়েটার হাসি খুবই সুন্দর, হাসিটা তার চেহারার সকল ত্রুটি এক ঝটকায় বিদায় করে দিয়েছে। আমি লক্ষ্য করেছি দেখতে সুন্দর মেয়েগুলোর হাসি এবং কন্ঠ বেশীরভাগ সময়ই অসুন্দর হয়; আর উল্টোটা ঘটে দেখতে অতি সাধারণ, অনেক সময় অসুন্দর (কুৎসিত নয়, আমার কাছে কোন মানুষই দেখতে কুৎসিত হতে পারে না, মানুষ মাত্রই সৃষ্টির সুন্দরতম সৃষ্টি) মানুষের হাসি এবং কন্ঠস্বর শুনে চমকে যেতে হয়।

হাতঘড়িতে দেখলাম বেলা সোয়া দশটা, আমাকে দশটার সময় আসতে বলা হয়েছিলো। আমার অবশ্য কোন তাড়া নেই, চাকুরীটা হলেই হয়। আমাদের পৈতৃক ঐ ছাতার বিজনেসে নিজেকে জড়ানোর কোন ইচ্ছে আমার নেই। আমার আব্বা আমার পড়ালেখায় কখনোই সায় দেয় নাই, আম্মার কারণেই পড়ালেখা করতে পেরেছি। সেই এসএসসি’র পর থেকেই আব্বার ঘ্যানর ঘ্যানর ব্যবসার হাল ধরো আমার সাথে। এমবিএ'র রেজাল্ট এরপর থেকে গত তিন মাসে যা অসহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরে বাবা, এটা কি নৌকা না চাষের বলদ, যার হাল ধরবো। চক মোগলটুলি’র আটফিট বাই ছয়ফিটের দোকানে ছাতার হোলসেল ব্যবসা, যেখানে আমার করার মত কিছুই নাই। বিভিন্ন কোম্পানীর ডিলারশীপ নেয়া আছে, সেখান থেকে মাল আনো, পাইকারী ব্যবসায়ী’রা সারাদেশ থেকে আসে তাদের কাছে মাল বিক্রি করো, ট্রান্সপোর্টে উঠায়ে দিয়ে ডেলিভারী দাও, ব্যাংকে পেমেন্ট আসলো কি না সময় মতো তা নজরদারি করো, সময় মতো পার্টি পেমেন্ট ক্লিয়ার করো। সেই ব্যবসাও এখন পরতির দিকে। কোম্পানীগুলো এখন সারাদেশে নিজেদের ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার খুলছে, ফলে পুরাতন ঢাকার চক মোগলটুলির সেই আদি ব্যবসায়ীক গুরুত্ব এখন আর নেই। কিন্তু আমার আব্বাকে সেটা কে বুঝাবে?

একটা বেয়ারা এসে চা আর একগ্লাস পানি রেখে গেল। বেশীরভাগ অফিসে রঙ চা দেয়া হয়, এরা দিয়েছে দুধ চা, চায়ে চুমুক দিয়ে তৃপ্তি পেলাম, পারফেক্ট দুধ চা। ওয়েটিং এরিয়ার ডান পাশ দিয়ে আকাশ দেখা যাচ্ছে, আকাশ আরও কালো হয়েছে, যে কোন সময় বৃষ্টি শুরু হবে। গত কয়েকদিন ধরে খুব গরম পড়েছে, তাপপ্রবাহ নাকি চলছিলো। এই বৃষ্টিতে হয়তো স্বস্তি ফিরবে ঢাকার জনজীবনে।

“মিঃ রাশেদুল হাসান, আপনি আসুন আমার সাথে।” রিসিপশনের মেয়েটি তাকে অনুসরণ করতে বললো। তার পিছু পিছু একটা করিডোর দিয়ে কিছুটা এগুতেই একটা মিটিং রুমের দরজা ইশারা করে ভেতরে ঢুকতে বললো। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম। একটা বড় মিটিং টেবিলের একপাশে চারজন মধ্যবয়সী লোক বসে আছে। তাদের একজন চেয়ার ইশারা করে আমাকে বসতে বললেন।

“প্লিজ ইন্ট্রুডিউস ইয়োরসেলফ”

“স্যার আমি রাশেদুল হাসান। আমার সম্পর্কে সব তথ্য স্যার আমার সিভিতে দেয়া আছে।”
প্রতিটি ভাইভা বোর্ডের লোকদেরই বুঝি ভ্রু কুঁচকানোর রোগ থাকে। আমার কথায় সবাই একযোগে ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালো।

“রাশেদ সাহেব, ইন্টারভিউ এর কিছু নর্মস থাকে। নিজের পরিচয় দিয়ে ক্যান্ডিডেটদের ইন্টারভিউ শুরু করতে হয়।”

“স্যার যদি কিছু মনে না করেন কিছু বলতে পারি?”

“বলুন”

“প্রথমত যে তথ্যগুলো আপনাদের সামনে সিভিতে দেয়া, যা আপনারা পড়েও দেখেছেন হয়তো, সেগুলো রিপিট করে আমার মুখ থেকে শোনাটা কি খুব জরুরী?। আর দ্বিতীয়ত, ইন্টারভিউ বোর্ডে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ক্যান্ডিডেট এর নিজের পরিচয় বিশদভাবে বলতে হয়; অথচ ভাইভা বোর্ডের মেম্বারদের সম্পর্কে ক্যান্ডিডেটকে কোন পরিচয় দেয়া হয় না প্রায় জায়গাতেই। আমি মনে করি, বরং উল্টোটা হলেই ভালো ছিলো। ভাইভার শুরুতেই ক্যান্ডিডেট বুঝতে পারতো তার সামনে বসা মানুষগুলো কারা এবং প্রতিষ্ঠানে তাদের অবস্থান এবং ভূমিকা কি?”

মাঝখানে বসা সবচাইতে বয়স্ক ভদ্রলোক, মৃদু হেসে বললেন, “ভালো বলেছেন, এমনটা হলে মন্দ হয় না।”

কর্ণার থেকে বসা প্রথমজন তাদের চারজনের সবার পরিচয় দিলেন। তার কথায় মনে হলো তিনি কিছুটা বিরক্ত আমার উপর। সাথে আমার মনে হলো চারজনের মধ্যে পদবী বলে উনি সবচাইতে জুনিয়র এখানে।

“ধন্যবাদ স্যার। আমি রাশেদুল হাসান, স্থায়ী নিবাস পুরাতন ঢাকার চাম্পাতলী লেন। বাবা একজন ব্যবসায়ী, ছাতার ব্যবসা। আমি জগন্নাথ কলেজ থেকে বিবিএ এবং এমবিএ করে চাকুরীর খোঁজ করছি।” বলে হাসি মুখে তাদের দিকে তাকালাম।

“পুরাতন ঢাকার লোকদের তো বিজনেস করায় ঝোঁক, আপনি চাকুরী করতে চাচ্ছেন কেন?” এবার কথা বললেন মাঝখানে বসা দ্বিতীয় ব্যক্তিটি।

“আমার ঝোঁক চাকুরীর দিকে, তাই”। আমার উত্তর শুনে প্রশ্নকর্তা কিছুটা অপ্রস্তুত হলেন বলে মনে হলো। আমি তার দিকে মিষ্টি করে একটা হাসি দিলাম।

“আপনি তো আগে কোথাও জব করেন নাই, আমাদের এটা আরএমজি সেক্টর, এখানে সাধারণত অনভিজ্ঞ লোকদের নেয়া হয় না। যদি আপনাকে সিলেক্ট করি আমরা, আপনি কি পারবেন নিজেকে দ্রুত খাপ খাওয়াতে?”

মন চাইলো বলি, “স্যার সব অভিজ্ঞ লোকই শুরুতে অনভিজ্ঞ থাকে। তাই অনভিজ্ঞ লোক ছাড়া কোন সেক্টরেরই অভিজ্ঞ লোক তৈরী করা সম্ভব না। অনভিজ্ঞরাই সময়ের সাথে সাথে অভিজ্ঞ হয়ে উঠবে”। কিন্তু শুরুতেই এদের মনঃক্ষুণ্ণ করেছি, এরকম কথা এখন না বলাই শ্রেয় বলে মনে করলাম।

“স্যার আমার বিশ্বাস আমি পারবো।”

“দেখুন সাধারণ একটা কোম্পানীর একাউন্টস সেকশনের কাজের সাথে আরএমজি সেক্টরের একাউন্টস সেকশন এর কাজের ডিফারেন্স রয়েছে।”

“স্যার আমার কাছে একাউন্টিং আর মানুষ, দুটোই একই রকম। প্রতিটি মানুষই কিন্তু একই রকম দেখতে, দুটি চোখ, দুটি কান, হাত-পা মাথা নিয়ে গড়া একটা অবয়ব। আবার প্রতিটি মানুষই ভিন্ন, তাদের চেহারা, স্বভাব, আচার আচরণে। একইভাবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের একাউন্টসও কিন্তু তেমনই। ডেবিট ক্রেডিট, জার্নাল-লেজার, ট্রায়াল ব্যালেন্স-ফাইনান্সিয়াল রিপোর্ট সব একই নিয়মে চলে। কিন্তু প্রতিটি ইন্ডাস্ট্রি, প্রতিটি কোম্পানীতে এর ট্রিটমেন্ট এর ভিন্নতার কারণে একটা স্বাতন্ত্রতা লাভ করে। শুরুতেই যদি কোম্পানীর এই স্বাতন্ত্রতার খুঁটিনাটি বিষয় বুঝে নেয়া যায়, তাহলে যে কোন কোম্পানীর একাউন্টসই যে কোন একাউন্টিং জানা লোক হ্যান্ডেল করতে পারবে বলে আমি মনে করি। যেমন মানুষের মাঝে স্বামী-স্ত্রী, দুটি অচেনা আজানা মানুষ একত্রিত হয়ে দুজনকে সবচাইতে ভালোভাবে বুঝতে এবং জানতে শিখে যায়।”

এক নাগাড়ে এতোগুলো কথা বলে আমি আমার সামনে বসে থাকা চারজনের দিকে তাকালাম। তাদের চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে না, আমার কথায় তারা সহমত কি না? সবচেয়ে কর্ণারে জানালার দিকের একজন দেখলাম চশমার কাঁচ পরিষ্কার করছেন হাতে থাকা রুমাল দিয়ে। আমার কথাগুলো বুঝি তার চশমার কাঁচে আটকে আছে।

“আপনি বক্তা ভালো। কিন্তু রাশেদ সাহেব একাউন্টস তো বক্তৃতায় চলে না, চলে বাস্তবতার কাজে।”

“আপনার কথা সত্য স্যার। কিন্তু সমস্যা হলো ইন্টারভিউতো বক্তব্যেরই জায়গা, এখানে কাজ দেখানো কিভাবে সম্ভব বলেন….”।

ইন্টারভিউ বোর্ডে একাউন্টস এন্ড ফাইন্যান্সের ডিরেক্টর ভদ্রলোক বসে আছেন, তিনি রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে সুউচ্চ ভবনের কাঁচভেদ করে বাইরের মেঘলা আকাশ দেখছিলেন। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। এতক্ষণ তিনি কোন কথা বলেন নাই, এবার তিনি গলা খাকারি দিয়ে আমার দিকে তাকালেন।

“দেখুন রাশেদ সাহেব, একাউন্টিং এর বেসিক হলো জার্নাল, যে জার্নাল সঠিকভাবে করতে জানে, সে সবকিছুই সঠিকভাবে করতে জানে। ঠিক কি না?” আমার দিকে ভদ্রলোক ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলেন।

“পুরোপুরি সঠিক না স্যার। একাউন্টিং চলে তার এসাম্পশনস, প্রিন্সিপাল আর কন্সট্রেন্টস এর উপর ভিত্তি করে। তাই এগুলোর উপর যার পরিপূর্ণ ধারণা নাই, তার জার্নাল সঠিক না হবার সম্ভাবনা থেকে যায়।”

“একটু ব্যাখ্যা করবেন?” ভদ্রলোক বিরক্তি এবং রাগী, এই দুইয়ের মিশ্রণে অদ্ভুত একটা চাহনি দিয়ে আমার দিকে তাকালেন।

“অবশ্যই স্যার। আচ্ছা ধরুন একটা স্কুলের সামনে দুজন ফেরিওয়ালা, ঝালমুড়ি আর আইসক্রিম বিক্রি করছে। ঝালমুড়ি বিক্রেতা আইসক্রিম বিক্রেতাকে বললো, আমি তোমাকে এক ঠোঙ্গা ঝালমুড়ি দিচ্ছি, তার বদলে তুমি আমাকে একটা আইসক্রিম দাও। আইসক্রিম বিক্রেতা রাজী হল এবং তারা ঝালমুড়ি-আইসক্রিম বিনিময় করলো। এখন বলুন ঝালমুড়ি বিক্রেতার হিসাব বহিতে কি জার্নাল হবে? যদিও বাস্তবে তাদের কোন হিসাব বহি থাকে না।”

“হা হা হা, কি সব বাচ্চাদের প্রশ্ন করছেন। কোম্পানীর একাউন্টস ঝালমুড়ি-আইসক্রিম বিক্রি নয়।”

“তারপরও বলুন না এই লেনদেনের জার্নাল কি হবে?”

“খুবই সহজ, আইসক্রিম ডেবিট ঝালমুড়ি ক্রেডিট…”

“সরি স্যার হয় নাই। এটার কোন জার্নাল হবে না। কারণ মনিটারি এসাম্পশন বলে টাকার অংকে পরিমাপযোগ্য না হলে কোন লেনদেন একাউন্টস বুকে হিট করবে না। এখানে ঝালমুড়ি বা আইসক্রিম এর মূল্য টাকার অংকে বলা নাই। আমি দুঃখিত স্যার, ভাইভা নিতে এসে আপনার ভাইবা নিয়ে নিলাম” বলে আমি উচ্চস্বরে হো হো করে হেসে দিলাম।

মাঝখানের বয়স্ক লোকটি মুখ গম্ভীর করে বললেন, “রাশেদ সাহেব, আপনি আসুন। যদি আপনি সিলেক্ট হন পরে আমরা আপনাকে জানিয়ে দিবো।”

“ধন্যবাদ স্যার, আমাকে আজকের এই ভাইভায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়ার জন্য। আর আমার কোন কথায় বেয়াদবী হলে বা আপনারা দুঃখ পেয়ে থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।”
সালাম দিয়ে আমি মিটিং রুম থেকে বের হয়ে এলাম। রিসিপশনের মেয়েটির সাথে অফিস থেকে বের হওয়ার সময় চোখাচোখি হয়ে গেল, একটা সুন্দর হাসি দিয়ে লিফটের দিকে এগিয়ে গেলাম। একবার মনে হলো মেয়েটির নাম জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিলো, আর তাকে বলে দিতাম, “আপনি কি জানেন, আপনার হাসিটা অনেক বেশী সুন্দর।”

বাইরে বের হয়ে দেখি তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। চাকুরীটা হচ্ছে না বুঝাই যাচ্ছে, আমার কথাবার্তায় তারা মহা বিরক্ত ছিলো, তা স্পষ্ট ছিলো তাদের অভিব্যক্তিতে। হুট করে আমার যে কি হলো, বুঝলাম না। চাকরীটা হয়ে যাক, খুব করে চাচ্ছিলাম। কিন্তু ভাইভা বোর্ডে আমার মুখ দিয়ে এমন কথাবার্তা বের হওয়ায় আমি নিজেই এখন অবাক হচ্ছি; আমার হয়েছিলোটা কি? বৃষ্টির মাঝেই আমি একটা রিকশা নিলাম চক মোগলটুলির উদ্দেশ্যে। আব্বাকে চমকে দিতে রওনা হলাম তার দোকানের দিকে। হুট করে হাজির হয়ে তাকে বলবো, “তোমার দোকানে চাকরী করতে ইন্টারভিউ দিতে এলাম। ইন্টারভিউ নেয়ার সময় হবে তোমার…”

=============================================================================

সপ্তাহখানেক সময়ে আমি ছাতার ব্যবসার সাথে ভালোই নিজেকে জড়িয়ে ফেললাম। আমিও খুশী, আমার আব্বাও খুশী। এরকম সময়ে হুট করে একদিন বাসার ঠিকানায় চিঠি এলো “ডেকার্স এপারেলস লিমিটেড” থেকে। আমাকে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ একাউন্টস পদে সিলেক্ট করেছে, বেতন পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা, সাথে ট্রান্সপোর্টেশন আর লাঞ্চ এলাউন্স আলাদা। চিঠি নিয়ে আমি আমাদের পুরাতন দোতলা বাড়ির মোটা প্রাচীরে ঘেরা ছাঁদে চলে গেলাম। সন্ধ্যার পরপর আলো আঁধারির আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে একটা অট্টহাসি দিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৩
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিচারের জায়গা না পেলে মানুষ প্রেত হয়ে ওঠে

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ১২ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:৩৯


(সামাজিক অবিচার, রাষ্ট্রীয় অনুপস্থিতি এবং আন্ডারওয়ার্ল্ড কাঠামোর মধ্যে সাধারণ মানুষ কীভাবে হারিয়ে যায়।)

মানুষ যখন বারবার অবিচারের শিকার হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

=একদিন এসো সন্ধ্যে ফুরোলেই=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১২ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৫



ভালোবাসা ছড়ানো পাতায় পাতায়, সবুজাভ স্নিগ্ধ প্রহর আমার
এখানে উঁকি দিলেই মুগ্ধতারা চুয়ে পড়ে টুপটাপ;
ধূসর রঙ প্রজাপতিরাও এখানে রঙিন ডানায় উড়ে,
কেবল অনুভূতির দোর দিতে হয় খুলে, চোখগুলো রাখতে হয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

চীনের জে-১০ যুদ্ধবিমান কোনো চকচকে ল্যাব বা বিলাসবহুল ফ্যাক্টরিতে জন্মায়নি

লিখেছেন নাঈম আহমেদ, ১২ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২৬

চীনের জে-১০ এর পেছনেও রয়েছে সেই ত্যাগ আর সংকল্পের গল্প—
১: গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) দলের অক্লান্ত পরিশ্রম।
২: বাইসাইকেলে চেপে কাজে যাচ্ছেন প্রধান প্রকৌশলী সু চিশৌ।
৩: প্রথম উড্ডয়নের পর কেঁদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Bangladesh bans ousted PM's Awami League under terrorism law

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ১২ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫৬





হায়রে এরেই বলে কর্মফল। ১৭ টা বছর গুম , খুনের মাধ্যমে এক ভয়ের রাজ্য তৈরী করে কেড়ে নেয়া হয়েছিল মানুষের বাকশক্তি। চোখ, কান, মুখ থাকতেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিন গেলে আর দিন আসে না ভাটা যদি লয় যৌবন

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১২ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:২৬


এমন কোনো ইস্যু আছে, যা নিয়ে জাতি পুরোপুরি একমত? ৫০%ও একমত এমন কোনো বিষয় চোখে পড়ে না। একপক্ষ রবীন্দ্রনাথের গান জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মনেপ্রাণে ধারণ করে, আরেক পক্ষ বদলাতে চায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×