somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"শুক্কুরবারের খানানামা" - হানিফের বিরিয়ানি বনাম খান বাবুর্চির পাতলা খিচুড়ি

২৪ শে অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত সপ্তাহের শুক্রবারে দৌড়ের উপর একটা ট্যুর দিয়ে এসেছি নেত্রকোণার কলমাকান্দা-পাঁচগাঁও-লেঙ্গুরা হতে। তাই এই সপ্তাহের শুক্রবারের প্ল্যান বিশ্রাম নিয়ে আরামে একটা দিন কাটানো। সপ্তাহের ছয়দিনের কর্পোরেট কামলাগিরিতে দেহমনে ক্লান্তি আর বিষন্নতা ভর করে প্রতি সপ্তাহান্তেই। আজ দুপুরে এলাকার মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করে একটা কাজে গেলাম লালবাগ চৌরাস্তায়। সেখানের হানিফ বিরিয়ানির দোকান দেখে মনে হলো বহুদিন চেখে দেখা হয় না আমার সংক্ষিপ্ত পছন্দের তালিকায় থাকা হানিফের খাসির বিরিয়ানি। ঢুকে পড়লাম, হাত ধুয়ে টেবিলে বসার আগে আশেপাশের প্লেটে চোখ গেল, বিরিয়ানির চেহারা আর ঘ্রাণ এর সুবাসের অভাব একটু খটকা লাগলো।

হাফপ্লেট বিরিয়ানি অর্ডার করার পর একটা কোয়ার্টার প্লেটে করে যে পরিমাণ বিরিয়ানি দিলো, তা বিকেলের নাস্তা হিসেবে চলে, কিন্তু দুপুরের লাঞ্চ হিসেবে একেবারেই না। অনেকটা এমনিতে হাফপ্লেট নেয়ার পর কোয়ার্টার প্লেট হিসেবে যে বিরিয়ানি দেয়া হয় অনেকটা ততটুকু। পাঁচ টুকরো মাংস আসলো যার মধ্যে একটা হাড়, একটা চর্বি, একটা ছাটি (যা নরমালি ফেলে দেয় হয়) আর একটা গুরদার ছোট টুকরা। ওয়েটারকে কমপ্লেইন করতে বললো পালটে দিচ্ছি। পালটে যা নিয়ে আসলো তাতে গুরদার টুকরা উধাও হয়ে আরেকটা হাড়যুক্ত কিছু চলে আসলো। মন খারাপ হলো, অতিপ্রিয় বিরিয়ানির এরকম অবস্থা দেখে। হানিফের বিরিয়ানি প্রথম খেয়েছিলাম পঁচিশ টাকা প্লেট, নাজিরাবাজারের ওদের প্রথম এবং আদি দোকানে। সেই একপ্লেট বিরিয়ানি খাবার পর পেটে জায়গা থাকতো না; আর রাইস শেষ হয়ে যাবার পরেও পাতে দুই চার পিস মাংস রয়ে যেত। এখন তথাকথিত হাফ ১৬০ টাকা, ফুল ২৯০ টাকা আর স্পেশাল ৩২০ টাকা।যাই হোক কোন মতে খাবার শেষ করে মন এবং মেজাজ দুটোই খারাপ করে বের হলাম সেখান থেকে। বাসার দিকে হাটা শুরু করেও কি মনে করে সিদ্ধান্ত নিলাম ধানমন্ডির দিকে যাওয়ার। কিছুদিন আগে ফেসবুকে দেখলাম "খান বাবুর্চি" নামক একটা দোকান ধানমন্ডি ১৯ নাম্বারে, স্টার কাবাবের পেছনের গলিতে; পাতলা খিচুড়ি আর গরুর মাংস আলু দিয়ে ঝোল এর প্যাকেজ বিক্রি করে ১০০টাকায়!!! বছর দুয়েক আগে আমার অফিস ছিলো সেখানে, বছরখানেক সেখানে লাঞ্চের জন্য অনেক ভুগেছি। স্টার কাবাব নইলে সেই শংকর গিয়ে লাঞ্চ করেছি। কিন্তু খান সাহেবের বাবুর্চিখানা'র দেখাতো পাই নাই কখনো। তো রওনা হলাম সেদিকের পাণে।



সিটি কলেজের কাছে জ্যামে বসে দেখলাম সিটি কলেজের উলটো দিকের ফটপাতে সাদা লুঙ্গি, পাঞ্জাবী আর টুপি পড়া এক পৌঢ় কাঁচাহলুদ-আমলকি-কাঁচা তেতুল-কদবেল বিক্রি করছে। উনি একটা পাঁকা কদবেল ভেঙ্গে তা থেকে অল্প করে কদবেল নিয়ে প্রতিটি কাঁচা-আঁধপাঁকা কদবেল ছিদ্র করে মুখে ভরে দিচ্ছে এবং ছিদ্রের চারপাশে মেখে দিচ্ছে। দেখলে মনে হবে সেই কদবেলেরই অংশ। হায়রে দুর্নীতির স্টাইল। দেশের ফুটপাতের এসব দোকান থেকে হাজার কোটির কর্পোরেট হাউজের জুস-সস, তেল-চিনি সবকিছুতেই ভেজাল আর প্রতারণা...

যাই হোক, ধানমন্ডি ১৯ পৌঁছে স্টার কাবাবের পেছনে খোঁজ করে খুঁজে পেলাম খান সাহেবের দোকান। আরে!!! এই দোকানটা আগে চা-কফির একটা ছোট দোকান ছিলো, সাথে ফ্রেঞ্জফ্রাই, পিজা জাতীয় কিছু প্রিরেডি ফাস্টফুড আইটেম ছিলো। কলেজ-ভার্সিটি ফাঁকি দেয়া কপোত-কপোতিদের দেখতাম আড্ডা দিচ্ছে দুপুরে খেতে যাওয়ার সময়। স্কলারস স্কুল এন্ড কলেজের সাথেই লাগোয়া দোকান। দোকানের গেটআপ কিছুটা বদলেছেন। ভেতরে ঢুকতে দেখলাম, কয়েকজন কাস্টমার আছে, সবাই পাতলা খিচুড়ি গরুর মাংসের প্যাকেজ খাচ্ছে। যে ছেলে হাড়ি থেকে খাবার দিচ্ছে, তাকে জানালাম সেই লালবাগ থেকে এসেছি তাদের পাতলা খিচুড়ি খেতে। হাত ধোঁয়ার পরে মনে হলো এই খিচুড়ি হাত দিয়ে নয়, চামচ দিয়ে খেতে হবে। নিজ হাতে একটা চামচ অতি উত্তমরূপে ধুয়ে নিলাম, আমি হোটেল রেস্টুরেন্টের চামচ পারতপক্ষে ব্যবহার করি না।

যাই হোক প্লেট ভরা খিচুড়ি চলে আসলো; এক টুকরা আলুর সাথে ৫০-৭০ গ্রাম সাইজের একটা সলিড মাংসের টুকরো যার একপাশে নরম চর্বিযুক্ত। দু'তিনটা ভাজা শুকনো মরিচের দেখা পেলাম, আর খিচুড়িতে চাল-ডালের সাথে ছোট্ট ছোট্ট করে টুকরো করা আলু আর গাজরের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। খুবই সুস্বাদু ছিলো খাবারটি। দোকানের ক্যাশে বসে ছিলেন দোকানের মালিক নিজে। কথা বলে জানলাম উনার আরও দু'তিনটি খাবারের দোকানের ব্যবসা আছে। লালবাগ থেকে এসেছি শুনে জানালেন লালবাগের মদিনা হোটেলের কাছের আতশখানার বিখ্যাত ডজ কোম্পানির পরিবার তার আত্মীয়। উনাকে বললাম, ভাই খাবার চমৎকার ছিলো, শুধু উপরে যদি এক চামচ ঘি ছড়িয়ে দেয়া যেত... তাহলে লা-জওয়ার হতো। উনি হেসে দিলেন। দোকান হতে বের হয়ে রওনা দিলাম নীলক্ষেতের দিকে, কিছু বই কেনা দরকার। আর চোখ রইলো চারিপাশের দোকানগুলোর দিকে; "ঠান্ডা কাঁচের বোতলের কোকাকোলা পাণ করতে হবে" মাথার ভেতর এই পোকা কিলবিল করতে লাগলো। আর করবেই বা না কেন? বিরিয়ানির পর খিচুড়ি, দুপুরের পেটপূজো একটু বেশীই হয়ে গেল না? ;)

খানাখাদ্য: পাতলা খিচুড়ি উইথ আলুঝোলের গরুর মাংস
দোকানের নাম: খান বাবুর্চি
দাম: ১০০ টাকা (দামে নয়, মানে বিশ্বাস রাখুন।
রেটিং: খিচুড়ি ৯/১০, গরুর মাংস ৮/১০, দাম ১০/১০+

উল্লেখ্য যে, দোকান এয়ারকন্ডিশনড এবং গরুর মাংস কেনা হয় "বেঙ্গল মিটস থেকে"।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩১
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×