somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্পঃমুক্তি

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম সন্তানের পর চার বছরের মাথায় দ্বিতীয় সন্তান হল রুহির।

পরপর দুই ছেলে সন্তানের জননী হয়েও রুহির মনে একফোঁটা শান্তি নেই।ছোটটি দেখতে শুনতে ফর্সা,বাপের রঙই পেয়েছে।কিন্তু ও যখন একটু বড় হল কেমন যেন একটা অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করতে লাগল রুহি।কোলে নিলে কেমন ভ্যাবলার মত চেয়ে থাকে,মুখ দিয়ে লালা ঝরে ক্রমাগত,চোখের দৃষ্টি কেমন যেন।নেহাত ছোট বাচ্চা,বড় হতে হতে ঠিক হয়ে যাবে-আশেপাশের লোকজন তাই বলল।বলাবাহুল্য,এসব সূক্ষ্ণ ব্যাপারগুলি কেবল মায়েদের চোখেই পড়ে।

-আম্মা,ভাত!

চমকে উঠে রুহি।রান্নাঘরে পিঁড়িতে বসে মাছ কুটছিল।ছোট ছোট মাছগুলো কোটা যে কি ঝামেলা। হাত দিয়ে কপালের চুল গুলো সরিয়ে পেছন ফিরে তাকালো রুহি।সোহান দাঁড়িয়ে আছে চৌকাঠে।ও কথা বলছে মায়ের সাথে,কিন্তু দৃষ্টি ছাদে।মুখ হাঁ।মাঝেমাঝেই নিজের ছোটছেলের এই দশা দেখে রুহির বুকের ভিতরটা কান্নায় ভরে উঠে।

'আয়'- বলে মাছধরা হাতেই ছেলেকে বুকে টেনে নেয়।শাড়ি দিয়ে ছেলের মুখের লালা মুছে দেয়। ছেলে মায়ের কোলে থেকেও কেমন দিশেহারা দিশেহারা ভাব
'ভাত খাব,আম্মা!'
'ভাত হচ্ছে বাবা,একটু আগে না কলা দিলাম?'

সে কথা সোহানের কানে যায় না যেন।তাকে যেন ভাতই খেতে হবে।এরকমই করে ও।এত খিদে ওর ঐ ছোট্ট পেটটিতে কোত্থেকে যে আসে,মা হয়েও মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে পড়ে রুহি।

বাজারে গিয়েছিল রুহি।দুই ছেলেকে ঘরে রেখে।ওদের বাবা বিদেশ থাকেন।বছরে আসেন দুয়েকবার।

বড়সড় থলি হাতে দরজার কাছে আসতেই কানে আসল তারস্বরে কান্না।

রুহান দরজা খুলে দিল।পাশে দাঁড়িয়ে সোহান কাঁদছে।মাকে দেখতে পেয়ে যেন কান্নার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিল।
'আমাকে মারছে।আম্মা!'-কান্নার ফাঁকে ফাঁকে বড় ভাইয়ের প্রতি সমস্ত রাগ অভিযোগ রুহিকে বর্ণণা করল।
'ওকে মারলা কেন,রুহান?'
'আমার সব বইয়ে পানি ফেলে ভিজিয়ে দিছে ও'

রুহান কে কিছু বলল না আর,সোহান কে টানতে টানতে নিয়ে গেল ভিতরে।চোখের পানি শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে দিল।তারপর,ব্যাগ থেকে একটা মিমির প্যাকেট বের করে দিল ছেলেকে।চোখে পানি নিয়েই হেসে ফেলল সোহান।মিমির প্যাকেট খোলার চেষ্টা করছে মনোযোগ দিয়ে।ছেলেটার হাঁটুর দিকে নজর দিল রুহি।ফুলে আছে।এটা খারাপ অসুখ।রুহির এক আত্নীয় বড় ডাক্তার।বলেছে,রেয়ার ডিজিস।আরো কত কিছু বলেছে।সবকথা সহ্য হয় নি রুহির।

###

সেদিন মেজাজ ঠিক রাখতে পারেনি রুহি।সোহান কে সবার সামনেই বেদম মারতে শুরু করল।

'আর পারি না আমি এই ছেলেকে নিয়ে।কথা বলতে পারেনা,হাঁটতে পারে না।সারাদিন খাই আর খাই'- বলতে বলতে মারল সোহানকে।একসময় নিজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ল।বসে রইল চুপচাপ।

দুইছেলেকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিল বড়খালার বাসায়।দুপুরে সেখানে খেতে গিয়েই সোহান বায়না ধরল,তাকে আরো মাংস দিতে হবে।সে কথা অনেক লজ্জা করে বলেছিল রুহি।তারপর,ছেলের প্লেটে আরো তিন-চার টুকরা মাংস দিয়ে বসিয়ে দিল খেতে। সেই মাংস খাবার পর আবার ঘ্যানঘ্যান করতে লাগল।গৃহস্থ রীতিমত বিরক্ত,রুহি জানে। প্রথমে হালকা বকা দিল,তারপর একটু কড়াভাবে শাসন।বোঝাল অনেক।সোহান গিয়ে তার খাবার জায়গায় বসে জোরে হাত নাড়িয়ে দিল,ব্যস,প্লেট আর গ্লাস টেবিল থেকে তৎক্ষণাৎ পড়ে গিয়ে এই দৃশ্যের সূচনা।

'আর পারিনা আমি এই ছেলেকে নিয়ে,আল্লাহ!আমাকে মুক্তি দাও'

ছেলেকে মারার পর নিশ্চয়ই খারাপ লেগেছিল রুহির।কষ্ট তার নিজের জন্য নয়,নিজের পেটের সন্তানের কষ্টই সে সহ্য করতে পারছে না আর। সেই খারাপ লাগা প্রকাশ করতে পারেনি। এই কষ্ট থেকেই হয়ত মুক্তি খোঁজে।

মুক্তি পেয়েছে একসময় রুহি। তের বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচেছিল সোহান।ডাক্তার আগেই বলেছিল এই ছেলে বেশিদিন বাঁচবে না।

গরুর মাংস,কলা কিংবা গরম ধোঁয়া ওঠা ভাত দেখে সবার অলক্ষ্যে এখনো কাঁদে রুহি।সোহানের খুব প্রিয় ছিল।
(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:০৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×