বাংলাদেশে দিনে দিনে আশংকা জনক হারে বাড়ছে ক্যান্সার রোগী।চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা ক্যান্সারকে বলে থাকেন মাল্টি ফ্যান্টরিয়াল ডিজিস যার অর্থ হচ্ছে কোন মানুষের ক্যান্সার হওয়া বা না হওয়া অনেক গুলো ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে, যেমন জিনেটিক্স, চারপাশের পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি। কিন্তু তার পরও ৮টি নিয়ম মেনে চললে আপনার ক্যান্সার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে।
১। ধুমপান বন্ধঃ
বোস্টন ক্যান্সার ইন্সটিটিউটের মেডিকেল অনকোলজিস্ট জেনিফার লিজিবেল বলেন,’’ক্যান্সার এর সবচেয়ে ভয়াবহ ঝুঁকির কারণ হল ধুমপান করা। সিগারেটের ধোয়ায় অনেক কারসিনোজেনিক পদার্থ থাকে যার কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার, মেয়েদের ক্ষেত্রে জরায়ুমুখের ক্যান্সার হতে পারে।
২। নিয়ন্ত্রিত ওজনঃ
স্থুলত্ব শরীরে ফ্রি র্যাডীকেল এর পরিমাণ বাড়িয়ে দেই যা আমাদের শরীরের সেল কে ড্যামেজ করে যার পরিণাম হল ক্যান্সার। চিকিৎসকেরা শরীরের অতিরিক্ত চর্বি বিশেষ করে তলপেটের চর্বি কমানোর কথা বলেন। অতিরিক্ত স্থুলতা যেমন ক্যান্সার ঝুঁকি বাড়ায় তেমনি হার্ট ডিজিজের সম্ভাবনাও বাড়ায়। পুরুষের কোমরের মাপ সর্বোচ্চ ৩৭ এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩১ রাখা আদর্শ।
৩। নিয়মিত ব্যায়াম করাঃ
জার্নাল অফ আমেরিকান মেডিকেল এসোসিয়েশন এ সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয় নিয়মিত ব্যায়াম করলে ১৩ ধরনের ক্যান্সার এর ঝুঁকি কমে যায়, যার মধ্যে রয়েছে ব্রেস্ট, বোন ম্যার, কোলন, কিডনি, লিভার, ফুসফুস, মুত্রথলির ক্যান্সার।প্রতিদিন ১ ঘন্টা সম্ভব না হলে ৩০ মিনিট হাটলে ক্যান্সার ঝুঁকি অনেককাংশে কমে যায়।
৪। নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসঃ
দুঃখ জনক হলেও সত্যি আমাদের তরুণ সমাজ দিনে দিনে ফাস্ট ফুডের দিকে বেশি ঝুঁকছে । এর ফলে যেমন স্থুলতা একটি সমস্যায় পরিণত হয়েছে একই সাথে বাড়ছে ক্যান্সার ঝুঁকি। ফাস্ট ফুড শরীরের ওজন বাড়িয়ে দেয় কিন্তু কমিয়ে দেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। রেড মিট বা লাল মাংশ এবং পোড়া মাংশ খাওয়া কমাতে হবে। ফ্রেশ ফল এবং ফ্রেশ সবজি ক্ষেতে হবে। যা একই সাথে কমাবে স্থুলত্ব এবং ক্যান্সার ঝুঁকি।
৫।মদ্যপান পরিহার করাঃ
মদ্যপান কিছু ক্যান্সার এর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেই যেমন লিভার, সারভাইকাল ক্যান্সার। তাই এখনই মদ্যপান পরিহার করা উচিত।
৬।তীব্র সূর্য রশ্মি পরিহার করাঃ
তীব্র সূর্য রশ্মিতে থাকে আল্ট্রা ভায়োলেট বা অতিবেগুনি রশ্মি যা স্কিন ক্যান্সার এর প্রধান কারণ। বাইরে গেলে সান প্রোটেকশন ক্রীম ব্যাবহার করা উচিত । তবে সেগুলো দীর্ঘ সময় ব্যাবহার না করায় শ্রেয়। সেক্ষেত্রে কালো ছাতা,ক্যাপ, ভেজা রুমাল, ফুল হাতা জামা ব্যাবহার করা উচিত।
৭। টিকা গ্রহনঃ
আমাদের স্বস্তির কারণ বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে ক্যান্সার এর টিকা সাধারণ জনগনের মধ্যে প্রচলন করেছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস বি ভ্যাক্সিন এবং ৯-২৫ বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে সারভাইকাল ক্যন্সারের ভ্যাক্সিন দেয়া হচ্ছে।
৮। হোম হ্যাজার্ড কমানোঃ
এনিলিন ডাই নামের একরকম রঞ্জক মূত্রথলীর ক্যান্সার করে, খাদ্যে ব্যাবহৃত ফরমালিন / পচন রোধক পদার্থ পাকস্থলীর ক্যান্সার করে, চুলের কলব ত্বকের ক্যান্সার করতে পারে, পরোক্ষ ধুমপান (প্যাসিভ স্মোকিং) ফুস্ফুসের ক্যান্সার করে। এ ধরনের পরিবেশ বা পদার্থ থেকে দূরে থাকলে আমরা ক্যান্সার ঝুঁকি অনেকাংশে কমাতে পারি।