গত ২৫ আগস্ট রোহিজ্ঞাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকেই বিপুল সংখক রোহিংগা শরনার্থী হিসেবে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ঘড়বাড়ি ছাড়া করতে চলেছে বর্বর নির্যাতন।
অনেকেই ইতিহাস টেনে ১৯৭১ আর ২০১৭ কে মিলানোর চেষ্টা করেছেন।
১৯৭১ সালে বাংলায় পাকিস্তানী বাহিনী অভিযান শুরু করলে লাখের ও বেশি মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়।
কিন্তু কখনও কি প্রশ্ন করেছেন নিজেকে কতজন বাঙ্গালী বার্মায় আশ্রয় নিয়েছিল?
বা কি ভুমিকা ছিল রোহিজ্ঞাদের ভূমিকা ১৯৭১ সালে?
আমরা উত্তর হয়ত নিজেরাও জানি, তাই হয়ত এ নিয়ে বেশি মাথা ঘামায় না।
আমি আপনার এক টুকরো মূল্যবান সময় চেয়ে নেব, আসুন দেখে নি ১৯৭১ সালে কি ছিল।বার্মার ভূমিকা?
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের প্রতি বার্মার আচরণ ছিল বৈরী। পাকিস্তানি প্রবল আক্রমনের মুখে ও দুর্গম পথের কারণে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকেরা সিদ্ধান্ত নেন যে, তাঁরা বার্মা যাবেন, সেখানে সরকার প্রতিনিধির সাথে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন, তাদের কে বোঝাবেন বাঙ্গালী জাতির দীর্ঘ দিনের মুক্তির তীব্র আকাঙ্ক্ষা, অস্ত্র এবং আশ্রয়ের জন্য সাহায্য চাইবেন। এরমধ্যেই পাকিস্তানিদের সংঘটিত বর্বর গণহত্যার কারনে প্রচুর বাঙালি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বার্মা যেতে থাকে।
কিন্তু ঠিক বিপরিত রুপটাই দেখালেন বর্মিজ রা। বার্মা কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দেয়, শরণার্থী বাঙালিদের তারা আশ্রয় দেবে। তবে, শরণার্থীদের ক্যাম্পে অন্তরীণ থাকতে হবে। খাদ্য-চিকিৎসা-নিরাপত্তার ব্যবস্থা বার্মা সরকার করতে পারবে না। বার্মা সরকারের সেই অসহযোগিতামূলক আচরণ পেয়ে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরা সেদিন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন।
শরণার্থীদের ক্যাম্পগুলোতে বাঙ্গালীদের গ্যাটো বানিয়ে রাখা হয়। খাদ্য, চিকিৎসার কোন সরকারি ব্যবস্থা সেখানে ছিল না। বার্মায় বাঙালি শরণার্থীদের জীবন ছিল বন্দী, নির্মম। এই দুঃসহ পরিস্থিতি সইতে না পেরে কেউ কেউ আরাকানের জঙ্গলে পালিয়ে যান।
প্রকৃত পক্ষে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বার্মা পাকিস্তানের বন্ধু রাষ্ট্র ছিল। পাকিস্তানকে জ্বালানি বিক্রয় এর মাধ্যমে তারা পাকিস্তান সরকারকে বরাবর সহযোগীতা করে আসছিল।
পশ্চিমবঙ্গের অমৃতবাজার পত্রিকার একটি রিপোর্টে (মার্চ ২৮, ১৯৭১) বলা হয়- বার্মা বাংলাদেশে যুদ্ধরত পাকিস্তান বিমানবাহিনীর জ্বালানি সরবরাহ করছে।
বার্মার সাথে পাকিস্তানের গোলাবারুদ ও জ্বালানি সরবরাহ চুক্তির কথা ফ্রন্টিয়ার পত্রিকার এপ্রিল ১০, ১৯৭১ এর সম্পাদকীয়তেও বলা হয়েছে।
অনেকেই হয়ত চাঁদি চুলাকাচ্ছেন।
না বার্মা আমাদের আলোচনার বিষয় নয়।
রোহিঙ্গারাও ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। শুধু তাই নয় বাঙালি শরণার্থীদের 'সন্দেহজনক অস্ত্রধারী' হিসেবে বিবেচনা করত।
পাকিস্তান সরকার নানান সময়ে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের আশ্রয় দিয়েছিল ও পৃষ্টপোষকতা করেছিল। তাই বরাবরই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেই রোহিংগারা।রোহিঙ্গারা বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাঙ্গ করে 'মূর্তি বাহিনী' বলে ডাকতো।
সে সময় আরাকানে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চলের মসজিদে পাকিস্তানের বিজয়ের জন্য দোয়া করা হতো।
বাঙালি শরণার্থীদের সাথে রোহিঙ্গাদের আচরণ ছিল রূঢ়।
বার্মায় সাম্প্রদায়িক চাপে থাকা সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা মুসলিম সেন্টিমেন্ট হতে পাকিস্তানের পক্ষে ছিল, পাকিস্তানের মদদপুষ্ট রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছে, আরাকানে আশ্রয় নেয়া বাঙালি শরণার্থীদের সাথে রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ ভালো ব্যবহার করেনি।