ছোটবেলায় খুব রাগ হত নিশ্চয় যখন মা-বাবা বলতেন , " অত টিভি দেখা ঠিক না।" অথবা ঘুমের আগে সারাদিনের কাজ বা পড়াটা শেষ করে রিমোট টা নিয়ে বসেছেন কেবল। অমনি এক ঝটকায় হাত থেকে কেড়ে নিয়ে মা বলতেন,"ঘুমের আগে অত টিভি দেখতে নেই।" আবার অনেকের সখ কম্পিউটারে গেম খেলা। সেটাতেও বিপত্তি বাধাতেন আমাদের বাবা মা। মনে মনে কয়েকবার রাগও হয়ত করে ফেলেছেন মায়ের সাথে। "আরে, মাত্র ৫ মিনিট টিভি দেখলাম, আর এর মধ্যেই!"
কিন্তু এখন ঘুমের আগে মোবাইলে ফেসবুক টাইমলাইন স্ক্রল করতে করতে মনে হয়, এখন যদি মা এসে মোবাইল টা কেড়ে নিয়ে বলত ঘুমা। কতই না ভাল হত! কেন? আসুন বলছি।
আমরা যখন কোন কিছু দেখি তখন আমাদের মস্তিষ্কে এগুলো ছবি হিসেবে যায়, এক্ষেত্রে ছবি তোলে আমাদের চোখ। সেগুলো মস্তিষ্কে গিয়ে বিশ্লেষণ হয় ফলাফল আমরা কোন কিছু দেখি।
সেরকমই, যখন আমরা মোবাইল হাতে নিয়ে ঘুমাতে যায়, তখন টাইমলাইন স্ক্রল করার মাধ্যমে আমাদের চোখ কয়েকশ ছবি তোলে যেগুলো প্রসেস হতে থাকে আমাদের মস্তিষ্কে।
আমরা ঘুমাতে এসেছি কিন্তু আমরা মস্তিষ্ককে দিয়ে কাজ করাচ্ছি।
যখন আমাদের মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। দরকার একটা অসাধারণ ঘুমের। ঘুমের আগে আমাদের মস্তিষ্ক মেলাটোনিন নামক একধরণের রাসায়নিক পদার্থ ক্ষরণ করে যা মস্তিষ্কের বিভিন্য অংশকে ঘুম পাড়ায়।
কিন্তু ফেসবুকের টাইমলাইন স্ক্রল করে কয়েকশ ছবি মস্তিষ্কে পাঠিয়ে মস্তিষ্কের এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে বাধা দিচ্ছি। যার ফলাফল আর কিছুই না। বিছানায় শুয়ে ১-২ ঘন্টা এপাশ ওপাশ করতে হয়। পরের দিন কাজ করতে গিয়ে মাথা ঝিম ঝিম করতে থাকে। কোন কাজেই মনোযোগ দিতে পপারি না। মেজাজ হয়ে যায় চিড়চিড়ে।
যারা এটুকুতে সন্তুষ্ট নন তাদের জন্য আরো বলি, বলা হয় যতটুকু সময় আপনি ঘুমের আগে স্মার্ট স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকবেন, আপনার ঘুমের মান ততই খারাপ হতে থাকবে। আমাদের মস্তিষ্কে গ্লিয়াল সেল নামে এক ধরণের কোষ আছে, যারা ঘুমের মধ্যে মস্তিষ্কের বর্জ পরিষ্কার করে। ঘুমের আগে মোবাইল ব্যাবহার এই গ্লিয়াল সেল কে নিউরনের বর্জ পরিষ্কার করতে বাধা দেই। এই জমে থাকা বর্জ পরবর্তিতে আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষতির কারণ হতে পারে, এমনকি স্মৃতি শক্তির ব্যাঘাত ঘটায়।
তাই হাজার মন খারাপ করলেও এই নেশার বস্তু টা হাতে নিয়ে এখন মনে হয় আগে মা হয়ত ঠিকই করেছিল।