somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

য়নাগল্প

২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"আমি কখনো আয়না দেখি নি। নিজের ঠোঁট-নাক-কান কেমন তা হাতড়ে-আঁচড়ে যতোটুক বুঝতাম, ওতেই দিন চলে যেতো। ওর চেয়ে বেশি বোঝার চেষ্টাই করি নি কখনো। কি দরকার নিজেকে এতো চেনার? যতোই চিনবো ততোই তো অসহ্য লাগবে। কখনো কখনো কিছু নতুন বা পুরনো আঁচড়ের ছাপ হয়তো ঢেকে যেতো সময়ের পরতে পরতে। আমি বুঝতেও পারি নি। অচেনা আমার সাথে একটা মোটামোটি সখ্য করে দিন কাটাতাম। "

"হঠাৎ হঠাৎ যে পানিতে নিজের ছায়া দেখি নি তাও কিন্তু না। দেখতাম আর চমকে উঠতাম, ভয় পেতাম। ছায়ার চোখটা আমার দিকে বড়বড় করে তাকাতো। ভেতরের সব দেখতে চাইতো বোধ হয়। আমার সেই ঠাণ্ডা দৃষ্টিতে গা শিরশির করতো। মনে হতো প্রচণ্ড শীতে একটুকরো বরফ আমার খোলাপিঠ বেয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে; গলছে, জমছে, চেপে বসছে। আমি কাঁপতাম। কাঁপতে কাঁপতে পা দিয়ে পানি এলোমেলো করে ঝাপসা করে দিতাম ছায়াটার চোখ। পিঠ থেকে বরফ অদৃশ্য হয়ে যেতো সাথে সাথে; কিন্তু ঠাণ্ডাটা চলে যেতো না। আমি আগুনের উপর নিজেকে মেলে ধরতাম। পিঠ বাঁকিয়ে হাঁটুতে মাথা গুঁজে নিজেকে গুটিয়ে বসতাম গরম আঁচে। শীতটাও নিজেকে গুটিয়ে আনতো আমার মতো। একটু পর শীত বাষ্প হয়ে গেলে আমি আবার আয়নাহীন পৃথিবীতে ফিরতাম।"

"অনেকের চোখেও নিজেকে দেখেছি। চকচকে পানি টলটল চোখের ভেতরে আমার মুখটাও উঁকি দিতো। আমি আয়না-চোখে লুকিয়ে লুকিয়ে নিজেকে দেখতাম। ওর চোখের টলটলে কষ্ট অগ্রাহ্য করে নিজের কষ্ট-হতাশা খুঁজতাম। খুঁজে না পেলে স্বস্তি পেতাম, আর একটু পশলা বৃষ্টি দেখলে ওটার প্রতিকার খুঁজতাম। ওর চোখটা আমার একটুখানি সান্ত্বনার জন্য টলটল করতো, আকুতি করতো। গুঙিয়ে উঠতো মাঝে মাঝে। আমার ভেতরে ওসব অহেতুক কিছুই ঢোকে নি। আর ঢোকে নি বলে আমার কখনো এতোটুকু অনুতাপ হয়নি তো! আমি ভাল-ই ছিলাম সবসময়। ঐ কষ্টে-পাওয়া আয়না-চোখটা বন্ধ হয়ে গেলে আমি আমার মতো স্বপ্ন দেখা শুরু করতাম।"

"এতো ধরনের আয়না দেখেও নিজেকে কখনো ভাল লাগে নি। সিনডেরেলার দুষ্টু মা'র মতো মনে হয় নি, আমি-ই সবচেয়ে সুন্দর। বরং শতশত ক্ষত-আঁচড়-জ্বলা-পোড়া মুখটা দেখে বোবা হয়ে যেতাম। মুখটা ঘষে-মুছে দাগ মুছতে গিয়ে আরো দগদগে করে দিতাম।"

"আমার আয়নাহীন জীবনে হঠাৎ খুব নক্সাকরা একেবারে রূপকথার গোলগাল একটা আয়না এসে পরলো। ওতে তাকালে স-ও-ব দাগ মুছে যেতো। অদ্ভুত এক আলো-আভায় ভেসে যেতাম আমি। বরফ করে দেয়া চোখটা কেমন হরিণের মতো মায়া নিয়ে তাকাতো। দাগে ভরা গালটা কেমন নিটোল হয়ে গেলো। আয়নাটা ছাড়া কিছুই বুঝতাম না আমি। মুখ হাতড়ে একটু আঁচড় পেলেই আয়নার সামনে বসতাম আমি। ওমনি দাগ মুছে একেবারে তাজা পাঁপড়ির মতো নরোম হয়ে যেতো!"

"আজকে হঠাৎ আমার আয়নাটা ঝনঝঝন ভেঙে পড়লো।"
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:২৩
১১টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×