somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঝোঁক-তুবড়ি

০৯ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ধোঁয়া-ধোঁয়া গন্ধ। তীব্র ধূপ-ধোঁয়া। নাঃ! ঐটা পেট্রোলের গন্ধ। গন্ধটা এঁচোড়-প্যাঁচর কীটের মতো চোখ দিয়ে এঁকে বেঁকে ঢুকে নাক জ্বালা করে ভেতরটায় গিয়ে খামচে-আঁচড়ে বিষাক্ত করে দিচ্ছে। আজকে সময়ের চেয়ে অনেক আগেই এসে পড়েছি! হুট হাট চোখের সামনে সাঁ-আ-আ-আ-আ-আ করে বুনো মাদক নেয়া মহিষের মতো ইয়া মুশকো-জোয়ান গাড়িগুলো যাচ্ছে। হাল-টানা ক্লান্ত গরুর মতো ঝুঁকে ঝুঁকে রিক্সাওয়ালাও যাচ্ছে ওগুলোর ফাঁকে-ফোকরে। একটু দূরের আধ-ভাঙা আইল্যান্ডে তিনটা কাছাকাছি বয়সের খড়খড়ে ছেলেমেয়ে। এরা এখন থেকেই লাল-কমলা বাতির ইশারায় ফুল-চকলেটের পাশাপাশি নিজেদেরকেও একটু একটু করে বিকিয়ে দেয়ার কায়দা রপ্ত করে এখন দিন শেষের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির বেহিসাবে কু-প্রাপ্তবয়স্কদের খিস্তি-খেঁউড় ছোটাচ্ছে। তার-ও একটু দূরে এদের নড়বড়ে মা। "মা" - কারণ তার হাতে তিন প্যাকেট হোটেল-উচ্ছিষ্ট, যা হেঁটে হেঁটে তার-ই মতো নড়বড়ে আইল্যান্ডটার দিকেই আসছে। প্যাকেটগুলো আছড়ে পড়তেই ক্ষুধার্ত শাবকেরা হিসেব ছেড়ে নিজ নিজ ভোগে কামড় বসায়। ক্ষুধা বড় ভয়ংকর লকলকে জীব। এর মৃত্যু তো নেই-ই, আর যখন-তখন ঘাই দিয়ে ওঠে। অমন-ই এক ঘাই-পাওয়া কনস্টেবল তার নোংরা চকচকে নখ বাগিয়ে "মা"-টাকে ছোঁ মেরে তার লক্কড়-ঝক্কর লরিটাতে তুলে পাশের মুখ হা-করা কালো গলিটাতে ঢুকে যায়। ত্রিমূর্তি একবার নিজেদের মধ্য নিয়মিত চাহনি বিনিময়ের পর বাকি ভোগে মন দেয়। এরপর যারযার দৈনিক আয় চটচটে হাফ-প্যান্টের শক্ত-গেরোতে চালান করে নিজেদের টুকরির ভেতর ঢুকে যায় ওরা।

ঠিক এ সময়টায় তিনি আসেন। উনাকে খুব বেশি অসহায় লাগে আমার। একে দেখতেই আমি আসি। রোজ রোজ আসি। আমরা এক-ই সাথে খাই, ঘুমোই... জীবন গড়াই। প্রতি সন্ধ্যায় আমি আর তিনি এক-ই সাথে বেরোই। আমি খুঁজি আমার ছানাদের আর উনি উনার। ছানাগুলো বড় খেয়ালী। উনার শাবকেরা টুকরি নিয়ে আইল্যান্ডে আইল্যান্ডে ঘুরে বেড়ায়। অমন আধভাঙা আইল্যান্ডের কি অভাব এ বিশাল শহরে? কতো খোঁজা যায়! কিন্তু এ মানুষটা দিনশেষে ঠিকঠিক বের করে ফেলে ওগুলোকে! কতোরকম মানুষ দেখলাম... তারসাথে দেখলাম কতোরকম মানুষের ক্ষুধা! তবে এ ক্ষুধাটা একেবারে আলাদা! ... শাবক দেখার ক্ষুধা, একটু ছুঁয়ে দেখার ক্ষুধা। মানুষটা ফিসফিসিয়ে নিজের মনে একেবারে ঘুমিয়ে কাদা হয়ে যাওয়া ছানাগুলোকে কি যেন বললো! আমি তিড়িং-বিড়িং আরেকটু এগিয়ে গেলে বুঝি সে তাদের কি এক যুদ্ধের ইতিহাস বলে। এমনিতে তো আর তারে সবাই পাগল বলে না! ঐ আবোল-তাবোল ইতিহাস শেষ হলে ইনি ঠিক তার শাবকগুলোর মতোই কুণ্ডলী পাকিয়ে তাদের টুকরির পাশে শুয়ে পড়েন। আমিও এভাবে খুঁজে বেড়াই আমার চারটে ছানাকে। তারা উড়তে শেখার পরপর-ই কবে কোথায় চলে গেছে তার বিন্দুমাত্র খোঁজ কোথাও পাই না। আমি তন্নতন্ন খুঁজি, কিন্তু কোত্থাও পাই না! এই মানুষটার একপেশে মিলন দেখতে আমি তাই এমন অধীর হই, অস্থির হই। চোখ একটু লেগে এসেছিলো আমারো, কিন্তু কান বড় সজাগ আমার! পা-টিপে যাওয়া বেড়ালের নিঃশ্বাসের শব্দও কান এড়ায় নি কখনো। কুচকুচে কালি ছড়ানো আকাশটা ধোঁয়া-রঙা হতে না হতেই টুকরিগুলো জেগে ওঠে। পাশের গলি থেকে রাত-জাগা "মা" টলমলে পা নিয়ে বের হয়ে ঐ মানুষটাকে দেখেই চোখ-ইশারা দেয় ছানাদের। তিনটা টুকরি নড়েচড়ে ওঠে, ঠিক যেন ডিমভেঙে বের হয় ছানাগুলো! শক্ত আড়মোড়া মচমচ ভেঙে - ওরা, আর ওদের মা ঐ মানুষটার লাশের মতো ঘুম-দেহটা আলতো ঠেলে পার হয়ে নতুন গন্তব্যের খোঁজে হনহনায়। পেছনে থেকে যায় তাদের থকথকে হিসহিসে বিরক্তি আর অদ্ভুত ক্ষুধার্ত একজন মানুষ!

















***************************************************************************************

ছবি ক্রেডিট : ফয়সাল মাসুম [আমার অসম্ভব শ্রদ্ধেয় এবং প্রিয় একজন ফটোগ্রাফার। তাঁর প্রতিটা ছবি-ই অনেক প্রশ্ন, গল্প বা একেকটা সময় হয়ে দাঁড়ায় আমার সামনে। আমি একেবারে তাজ্জব বনে যাই!!]
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:২৩
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×