পার্ট দুই তে বলেছি সুন্দরবনের জলপথগুলোর কথা। এবার ভেতরটা দেখাই। ওপরের ছবিটা সুন্দরবনের একটা অন্ধগলি। এখানে শ্বাসমূল দেখতে পাবেন। জোয়ার আসলে গাছের সবুজ মাথাগুলো ছাড়া সব ডুবে যায়।
সুন্দরবনের অন্যতম বিশেষত্ব শ্বাসমূল, গোলপাতা আর স্যাতস্যাতে বালুমাটি। ওর উপর দিয়ে চিকন সাঁকো করা থাকে। সেখান দিয়ে হেঁটে ঘুরতে হয় বনের ভেতর।
সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে হেঁটে গেলে কচিখালি বিচ পাওয়া যাবে। কক্সবাজারের সাথে এই বিচটার ভিন্নতা হলো এই বিচে একেবারেই কাঁদামাটি। তবে বিচের ওপর ঢেউয়ের মতো আছে ধবধবে সাদা বক আর সামুদ্রিক পাখি, অজস্র ধবধবে সাদা শামুক আর ঝিনুক... অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য!
সুন্দরবনের একাংশ সিডরে একেবারে মুচড়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপ দেখলে অদ্ভুত হাহাকার লাগে...
এরপর কটকা বিচে গিয়েছিলাম। এই বিচ কক্সবাজারের মতোই একদম! খোলামেলা আর বিশাল!
এরপর গিয়েছিলাম একটা অভয়ারণ্য আর প্রজনন কেন্দ্রে। এখানে বানর, কুমির আর হরিণের অবাধ বিচরন আর নিশ্চিন্ত জীবনের নিশ্চয়তা থাকার কথা হলেও হরিণগুলো ক্ষুধার্ত থাকে, খাবার পায় না। বড় তারবেড়ায় আটকানো থাকে। বানরেরা একমাত্র গাছে গাছে ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়ায়। একটা কাঠের চিকন ব্রিজ আছে বনের ভেতর। ওটার উপর দিয়ে বনে ঘোরা যায়। ওটায় হাঁটলে আশেপাশে অসংখ্য বানর এসে হাজির হয়। হরিণদের-ও ছেড়ে দেয়া হয় বনে মাঝে মাঝে। তবে রক্ষনাবেক্ষণে অনেক সংস্কার প্রয়োজন এদের। চলুন ঘুরিয়ে আনি আপনাদের ওখান থেকে এবার...
আমরা গিয়েছিলাম শীতের সকালে। তাই কুমিরেরা রোদ পোহাচ্ছিল। বানর দেখুন আরামে খাঁচায় ঘুম দিয়েছে!
সুন্দরবনের এতোকিছু দেখবেন আর পিঁপড়া দেখবেন না কেন?এখন একজন সুন্দরী পিঁপড়া দেখুন। এরা ফুলের মধু খায়...
এরপর আমরা নৌকা আর স্পিডবোট নিয়ে সুন্দরবনের আনাচকানাচ ঘুরেছি অনেক।
হরিণ দেখেছি বনে, বন্য শূয়োর দেখেছি আর শেয়াল দেখেছি। নৌকা খুব গভীরে গেলে ইঞ্জিন বন্ধ করে দিতেন মাঝি। ছবি তুলতে পারি নি কারন নৌকা বা স্পিডবোট থামে নি। কিন্তু তখন হাজার-হাজার পাখি আর বিচিত্র প্রজাপতি আর ফড়িং দেখেছি। এতো রঙের পাখি-প্রজাপতি-ফড়িং আগে দেখিনি! কিচিরমিচিরে কান ঝালাপালা! এরপর একটা হুংকার-ও শুনেছি। মাঝি আর গানম্যানরা বাঘ ভেবে নৌকা তাড়াতাড়ি লঞ্চে নিয়ে গেছেন। কিন্তু পরেও আবিষ্কার হয় নি যে ওটা কিসের হুংকার! এটুক বলতে পারি যে এমন গা শিহরণ দেয়া ট্যুর আমার জীবনে প্রথম! এতো এতো অভিজ্ঞতা একসাথে অন্যকোথাও পাই নি!
এটা আমার সুন্দরবন থেকে মংলা ফেরার পথে শেষ সূর্যাস্ত। প্রচন্ড মন খারাপ হয়েছিল। একেবারেই আটপৌরে জীবন ছেড়ে অমন একটা জিপসী জীবন কেমন যেন অন্যরকম অসাধারণ!
এরপর মংলা পোর্ট আর তারপর বিরক্তিকর মেশিন-জীবন ঢাকায় ফিরে আসা! ঢাকায় এসেও ৩-৪ দিন লঞ্চের দুলুনি পেয়েছি ভেতরে। সকালে ঘুমভেঙে জানালা দিয়ে তাকালে অশেষ সমুদ্রের নীল পাই নি, অদ্ভুত সুন্দর সোনালী জলমাখা সূর্য পাই নি! তখন বুঝেছি কী আশ্চর্য একটা সময় পেরিয়ে এলাম!
অনেকেই কক্সবাজার গিয়েছেন কিন্তু সুন্দরবন যাওয়া হয়ে ওঠেনি। তাদের জন্য আমার এই তিন সিরিজ-পোস্ট। আপনারা কিছুটা হলেও ধারনা পাবেন সুন্দরবন কেমন। একটু তো দেখলেন! এবার তাড়াতাড়ি ভোট করে ফেলুন তো! এক্ষুণী!!
পার্ট এক
পার্ট দুই
**ছবি সংক্রান্ত কথা : এখানের আপলোডেড ছবিগুলো সিলেকটিভ, অনেক রিসাইজড আর লো-কোয়ালিটির। নাহলে একসাথে আপলোড করতে পারতাম না। কেউ ঝকঝকে ভার্সন দেখতে আগ্রহী হলে আপনার ফ্লিকার একাউন্ট লিংক বা ইমেইল এ্যাডরেস দিবেন। আমি অরিজিনাল ছবি দেখাতে পারবো তাহলে। সবাইকে ধন্যবাদ।**
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:৩৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


