ইন্ডিয়ার স্পেস রিসার্চের ইতিহাস খুব বেশি দিনের না। জওহরলাল নেহেরু ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ইনকোস্পার ( Indian National Committee for Space Research (INCOSPAR)। সেই প্রতিষ্ঠানই পরে নাম পালটে হয়ে যায় ইসরো (ISRO)। যা এখন বহু পুরাতন স্পেস রিসার্চ প্রতিষ্ঠান যেমন আমেরিকার নাসা (NASA), রাশিয়ার রসকমস (ROSCOSMOS) এর সাথে টিক্কা দেয়ার চেষ্টা করছে। ইন্ডিয়ার ইসরো, নাসার মঙ্গল মিশনের চেয়ে কমপক্ষে ৫০ গুন কম খরচে এবং একবারের চেষ্টায়ই মঙ্গল অভিযান করেছে। যা সারা বিশ্বের কাছে একেবারেই তাক লাগানো একটা ব্যাপার ছিল। ২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর যখন ইন্ডিয়ার পাঠানো "দ্যা মাঙ্গলিয়ান" মঙ্গলের অরবিটে ঢোকে তখন নাসার মঙ্গল মিশন "কিউওরিসিটি" তাকে "নামাস্তে" বলে চিয়ার্স করেছিল। সারা পৃথিবী জেনে গেছিল ভারতের এই সাফল্যের কথা। আমি নিজেও চিয়ার্স করেছিলাম। আমি ইসরোকে কনগ্রাচুলেট করেছিলাম। এর মধ্যেই ইসরো (Indian Space Research Organisation) (ISRO) ৮২ টা স্পেস ক্রাফট মিশন, ৫৪টা লউঞ্জ মিশন, ৭৯ টা বিদেশি স্যাটেলাইট, ৮টা স্টুডেন্ট গবেষণা স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে। সাফল্যের ঝুড়িতে আজ আবার নতুন একটা ইতিহাস যুক্ত হয়েছে তাদের।
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬, সকাল ৯ঃ ১২ মিনিটে ইসরো সিঙ্গেল ফ্লাইটে ৮টা স্যাটেলাইট লউঞ্জ করে বিশ্বকে আবার তাক লাগিয়েছে। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো এই ৮টা স্যাটেলাইট তারা দুটো ভিন্ন অরবিটে প্লেস করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। যার ভিতর SCATSAT-1 নামক আবহাওয়া পর্যবেক্ষনের জন্য, PRATHAM টা মুম্বাইয়ের আই আই টির (IIT) জন্য, PISAT বেঙ্গালুর ইউনিভার্সিটির জন্য, আলজেরিয়ার জন্য তিনটি (LSAT-1B, 2B and 1N) কানাডার জন্য একটি (NLS-19) এবং আমেরিকার জন্য একটি (Pathfinder-1) স্যাটেলাইট ছিল। একই ফ্লাইটে দুটো ভিন্ন অরবিটে ৮ টা স্যাটেলাইট পাঠানো ইতিহাস সৃষ্টি করার মতই ব্যাপার। ইসরোর বর্তমান যে অবস্থা তাতে এই সংস্থা বুলেট গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আরো যাবে।
অন্যদিকে আমাদের বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট প্রজেক্টটা এখনো মহাকাশের চেহারা দেখতে পায়নি। আমাদের নামে মাত্র একটা স্পেস রিসার্চ সংস্থা আছে। স্পারসো (SPARSO)। এই সংস্থা আবার বিভিন্ন দেশের থেকে টাকা দিয়ে কিনে আনা স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করে অবহাওয়া ও অন্যান্য ব্যাপারে প্রিডিকশন করে থাকে। যাতে করে সরকারের কোটি কোটি টাকা নষ্ট হয়। বঙ্গবন্ধু ১ লউঞ্জ হলে হয়ত এই টাকা গুলা বাঁচবে। কিন্তু ভারতের ইসরোর মত কার্যক্ষম স্পেস রিসার্চ প্রতিষ্ঠা না করতে পারলে হয়ত অনেক গবেষণা থেকে আমরা পিছিয়ে থাকব। আমাদের দেশই যখন একটা স্যাটেলাইটের মালিক হতে পারল না তখন ভারতের আই আই টি (IIT) বা বেঙ্গালুর ইউনিভার্সিটি একটা করে স্যাটেলাইটের মালিক। ভাবুন তো একবার, আমাদের দেশীয় ছাত্র আর আই আই টি (IIT) বা বেঙ্গালুর ইউনিভার্সিটির ছাত্র কি একই মানের শিখবে? দৃষ্টি ভঙ্গি কি এক হবে? কলিজা কি ওদের মত বড় হবে?
না এক মানের হবে না। একটা দেশ যখন এগিয়ে যায় তার সবচেয়ে বড় ঘাটতি থাকে রিসার্চে। ইন্ডিয়া সেটা বুঝেছে। তাই ইন্ডিয়া তার রিসার্চ বাজেট বাড়িয়েছে। ২০১৫ সালে ইন্ডিয়ার রিসার্চ বাজেটই ছিল ৬৬.৫ বিলিয়ন ডলার। যা আমার দেশের বার্ষিক বাজেটের চেয়েও বেশি। এই অর্থ আগামী বছরে হয়ত আরো বাড়বে। এবং আগামীতে আরো বাড়তেই থাকবে। আমাদের দেশে স্পেস রিসার্চ তো দূরে থাক সাধারন এগ্রিকালচার রিসার্চের জন্যই বরাদ্দ পাওয়া অনেক কষ্টের ব্যাপার। আমার কেন জানি মনে হয় আমরা ইন্ডিয়ার থেকে রিসার্চে ১০০০ বছর পিছিয়ে আছি। তাই মাঝে মাঝে মনে হয় ইন্ডিয়া যখন বৃহস্পতিতে মানুষবাহী মিশন পাঠাবে তখন আমরা হয়ত বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট বা অন্যান্য রিসার্চ রিলেটেড টেকনোলজির জন্য বিশ্বের দুয়ারে দুয়ারে হাত পেতে বেড়াবো।
কনগ্রাচুলেশন ইসরো।
ছবিগুলা ইসরোর ওয়েবপেজ থেকে নেয়া।
তথ্যসূত্রঃ
লউঞ্জ নিউজ ১
লউঞ্জ নিউজ ২
লউঞ্জ নিউজ ৩
লউঞ্জ নিউজ ৪
ইন্ডিয়ার মারস মিশন
ইসরো
স্পেস এজেন্সির লিস্ট
ইন্ডিয়ার রিসার্চ বাজেট
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৫