২১,৯৩৭ বর্গ কিলোমিটার [১] আয়তনের দেশ ইসরাইল [২]। যার অধিকাংশ জনসংখ্যা মূসা (আঃ) [৩] প্রদর্শিত ধর্ম বিশ্বাস অনুসরন করে এবং তাঁদেরকে ইহুদি বলা হয় [৭] । যা্রা পরবর্তীতে, হযরত ঈসা (আঃ) [৪] এবং মুহাম্মদ (সঃ) [৫] এর অত্যাধুনিক ধর্ম বিশ্বাস গ্রহন না করে, তাওরাত (তোরাহ) [৬] অনুসারে নিজেরদের প্রত্যাহিক জীবন ধারন করে থাকে এবং ইসরাইল ই একমাত্র রাষ্ট্র যার রাষ্ট্র ধর্ম ইহুদি (জিউ)[৭]।
যাই হোক ধর্ম এখানে মোটেও আলোচ্য বিষয় নয়। আমরা মুসলিম ও খ্রিষ্টানরা যারা ধর্ম যুদ্ধ [৮] নিয়ে সবসময়ই উজ্জিবীত এবং শংকিত থাকি তারা ইসরাইলের শক্তি সম্পর্কে সম্ভবত ধারনা না রেখেই এ সমস্ত আলোচনা ও যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করি। তবে আধুনিক যুদ্ধে যুক্তিতর্ক ও ঐশ্বরিক কোন কিছু যে আসবে না, সেটা মৃত্যুর আগে ইরাকের সাদ্দাম হোসেন [৯] ও লিবিয়ার মুয়াম্মার গাদ্দাফি [১০] খুব ভালো করে বুঝে গেছেন।
ইসরাইল রাষ্ট্রের মূল চালিকা শক্তি কি?
গবেষণা রে ভাই গবেষণা। ইসরাইল ই পৃথিবীর একমাত্র রাষ্ট্র যার সরকার তার জিডিপির (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) মোট ৪.৩% অর্থ (পৃথিবীতে সর্বোচ্চ) (২০১৫ সালের ডাটা) ব্যায় করে রিসার্চ এন্ড ডেভলেপমেন্টে। এর পরের অবস্থান দক্ষীন কোরিয়ার (৪.২৯২%) (২০১৪ সালের রিপোর্ট), তারপরই জাপানের (৩.১৪৭%) (২০১৬ সালের রিপোর্ট) [১১]।
২০১৮ সালের হিসাব মতে ৮৪ লক্ষের [১] মত জনসংখ্যার ইসরায়েল দেশটির সরকার ও বড় কর্পোরেশন গুলোর শুধু রিসার্চ এন্ড ডেভলেপমেন্ট বাজেট ছিল ১২.৭ বিলিয়ন ডলার [১১]। যেটা বাংলাদেশের ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটের এক-পঞ্চমাংশ (১/৫) [১২]। ইসরাইলের শুধু রিসার্চ এন্ড ডেভলেপমেন্ট এর ৫ বছরের বাজেট দিয়ে ১ বছর বাংলাদেশের সকল সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন, ডেভলপমেন্ট, এবং মেইনটেইন্যান্স করা সম্ভব। বোঝেন অবস্থা!!
তবে মুসলিম বিশ্ব যে রিসার্চ এন্ড ডেভলেপমেন্ট বাজেট বরাদ্দ দিচ্ছে না ব্যাপারটা এমন না। মুসলিম বিশ্বের মধ্যে এই বাজেট বরাদ্দে সবচেয়ে এগিয়ে আছে, তুরস্ক ( ১৫.৩ বিলিয়ন ডলার) (জিডিপির ১.০০৭%); তারপরের অবস্থান মালেশিয়ার (১০ বিলিয়ন ডলার) (জিডিপির ১.৩%); এরপরে যথাক্রমে, মিশর (৬.২ বিলিয়ন ডলার); আরব আমিরাত (৪.২৮ বিলিয়ন ডলার); পাকিস্থান (২.৪ বিলিয়ন ডলার); ইন্দোনেশিয়া (২.০ বিলিয়ন ডলার); সৌদি আরব (১.৮ বিলিয়ন ডলার), মরোক্কো (১.৫ বিলিয়ন ডলার); কাতার (১.৩ বিলিয়ন ডলার) [১১]।
এবার আসেন বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা সম্পর্কিত তথ্যে,
এযাবত কাল পর্যন্ত ইসরায়েল দেশ থেকে ৩৭৬৫০৬ টি বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা প্রকাশ করা করেছে। তবে মজার ব্যাপার হলো, দেশটি থেকে প্রকাশিত হওয়া আর্টিকেল ও বই গুলো এত পরিমান উদ্ধৃত করণ (Cite) করা হয়েছে যেটার র্যাংকিং (আর্টিকেলের সংখ্যা ও উদ্ধৃত করণ সংখ্যা হিসাবে), সুইজারল্যান্ড (২৭.৩৮), নেদারল্যান্ড (২৬.৪৬), ডেনমার্ক (২৫.৭৩) সুইডেন (২৪.৯৮), আমেরিকা (২৪.৬৬) এর পরেই ইসরাইলের (২৩.২০) অবস্থান [১৩,১৪]। এর অর্থ হলো ইসরইলের গবেষনা প্রতিষ্ঠান থেকে করা রিসার্চ গুলা হাই ভ্যালুড এবং সায়েন্টিফিক সোসাইটিতে ইম্প্যাক্ট ফেলার মত মূল্যবান।
আকাশে যুদ্ধ বিমান সাই করে উড়ে চলে যাওয়া দেখতে মজা কার না লাগে? তবে এই উড়ার পিছনে কত শত পাবলিশড পেপার ও পেটেন্টের হেল্প নেয়া হয়েছে তা কল্পনা করা যাবে না। ইসরাইল এই রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্টে বিনিয়োগ করে আজ অন্যতম পরাশক্তি।
এই মুহুর্তে যদি মুসলিম বিশ্ব ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোন ধরনের হঠকারিতা প্রদর্শন করতে যায়, তবে অবস্থা ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের [১৫] (সিক্স ডে ওয়ার) চেয়ে বহু গুন ভয়াবহ হবে। মুসলিম বিশ্বের উচিত তাদের স্ব-স্ব দেশে রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্টে বিনিয়োগ করা। যুদ্ধ করার চেয়ে, যুদ্ধ যে করতে পারি এবং ইসরায়েলের ভিতরে আতংক সৃষ্টি করতে পারাটা অনেক কাজে দেবে।
সূত্রসমূহঃ
১। সিআইএ ফ্যাক্ট বুক (ইসরাইল)
২। ইসরাইল ৩। মূসা (আঃ) ৪। ঈসা (আঃ) ৫। মুহাম্মদ (সঃ) ৬। তো্রাহ- ৭। জিউ ৮। ধর্ম যুদ্ধ ৯। সাদ্দাম হোসেন ১০। মুয়াম্মার গাদ্দাফি ১১ রিসার্চ এন্ড ডেভলেপমেন্ট বাজেট ১২ বাংলাদেশের বাজেট (২০১৯-২০২০) ১৩। গবেষনায় বিশ্ব র্যাংকিং ১৪। গবেষনায় ইসরাইলের র্যাংকিং ১৫। ৬ দিনের যুদ্ধ