ইরাকের সাবেক রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হোসেন আম্রিকার সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর তার বিচার শুরু হয়। বিচারের আগে এবং বিচার চলাকালীন সময় এফ,বি, আই (FBI) [1] কে দ্বায়িত্ব দেয়া হয় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। এই জিজ্ঞাসাবাদের পুরো সময়টাতে এজেন্ট জর্জ পিরো (George Piro) [2] তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল, যিনি কিনা ছিলেন লেবাননের বংশদ্ভুত আমেরিকান নাগরিক। তাকে মূলত এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, তার চৌস্ত আরবিতে অনর্গল কথা বলার কারনে।
যাই হোক, জিজ্ঞাসাবাদের প্রথমদিকে, সাদ্দাম বলতেন, "পিরো, আমি ইরাকের রাষ্ট্রপতি; আমার সাথে কথা বলার সময় সম্মান দিয়ে কথা বলবে"। পিরো সাবেক এই রাষ্ট্রপতির কথা পুরো সময়টাতে রেখেছিলেন। কিন্তু পিরো যেটা রাখেন নি সেটা হলো সাদ্দাম হোসেনকে যে ঘরে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো সেই ঘরের আসবাবপত্র এবং সাদ্দামকে করা তার প্রশ্নের ধরন।
জিজ্ঞাসাবাদের প্রথমদিকে, আসবাবপত্র গুলো ছিলো, খুবই সাদামাটা, সাধারন কয়েদিদের মত এবং তখন সাদ্দাম হোসেনকে সে জিজ্ঞাসা করা হতো, তার বাল্যকাল, তার প্রেম, তার বিয়ে, তার বাচ্চা (উদে-কুশে), উন্নত ইরাক গড়ার পেছনের ফর্মূলা সম্পর্কে। এতে আসবাবপত্র, খাবারের পাত্র গুলো সাধারনমানের হলেও সাদ্দাম সুখের স্মৃতি গুলো ঝালিয়ে নিতে পারতেন এবং কোন অভিযোগ করতেন না এবং পিরোর প্রতি তার বিশ্বাসও বাড়তে থাকে।
দিন যত গড়াতে থাকে, সাদ্দাম হোসেন আর পিরোর সম্পর্কটা বাপ-বেটার মত হতে থাকে। সাদ্দামের ঘরের আসবাবপত্র, খাবারের পাত্র, পানির পাত্র ইত্যাদি রাজকীয় হতে থাকে। তিনি যেন, "অপারেশন ইরাকি ফ্রিডম" এর আগেকার সাদ্দাম। বিশাল ক্ষমতার কেন্দ্রে বসে, হুকুম করতেছেন।
কিন্তু মজাটা আসলে অন্যখানে, পিরোর প্রশ্নের ধরন, সাদ্দামের ঘরের আসবাবপত্রের সাথে বদলে যাচ্ছিল। সাদ্দাম হোসেনকে জেলখানায় যেদিন প্রথম সোফা দেয়া হয়, সেদিন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, "আপনি ইরাকের সংখ্যালঘুদেরকে কেন হত্যা করলেন?", "আপনি বিন-লাদেনকে চেনেন কিনা?", "কখনো একসাথে কাজ করেছেন কিনা?", "আপনার ডাব্লিউ এম ডি [3] গুলো কোথায় রাখা আছে?" ইত্যাদি।
এই মনস্ত্বাত্তিক খেলা গুলো, খুবই কাজে দেয়। সাদ্দাম কি উত্তর দিয়েছিল, সেগুলো আপনারা বিভিন্ন বই পুস্তকে পেইয়ে যাবেন।
লেখাটা লেখার উদ্দেশ্য সাদ্দাম হোসেন নয়। অবচেতন মন আমাদের পারিপার্শিক অবস্থানকে কিভাবে নিয়ন্ত্রন করে সেটাই মূখ্য বিষয়।
বাঙলাদেশ [4] দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম দেশ, যার ২০০০ কিলোমিটার রেডিয়াসের ভিতরে আর কোন মুসলিম দেশ নাই। যদিও বাঙলাদেশ বহুধর্ম, বহুমত, বহু সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে এবং সাংবিধানিকভাবে তাদেরকে রক্ষা করে।
১৯৭১ সালে সার্বভৌমত্ব পাবার পর, দেশটির প্রথম চাহিদা ছিল, খাবার সাথে ছিল কৃষি পন্য, শিল্প প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রপাতি; যার বেশির ভাগ আসত দান ও বৈদেশিক সাহায্য থেকে। তখন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন হতো, খাবারে জন্য, অনুন্নত অবকাঠামোর জন্য।
২০২০ সালে প্রথম বারের মত, সেই সকল দাতাদেশের বিভিন্ন মানদন্ডে যোজন যোজন এগিয়ে গেছে বাঙলাদেশ। সার্বভৌমত্ব পাবার এত বছর পর দেশটির জনগনের চাহিদা ও আন্দোলনের ধরন বদলেছে ব্যাপক ভাবে। খাবারের জন্য আন্দোলন করা সেই জনগনই আজ আন্দোলন করতেছে, ধর্ষন [5], চাকরিতে কোটা পদ্ধতির অবনমন [6], বিচার বর্হিভুত হত্যাকান্ড বন্ধ [7] এবং বিভিন্ন যুগোপযোগী বিষয় নিয়ে। বিষয়গুলো আপনি হয়ত কখনো উপলব্ধিই করেন নাই, কারন আপনার অবচেতন মন পেছনের বিষয় গুলো ভুলিয়ে, বর্তমান ও নিকট ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে।
আমার কাছে বিষয় গুলো খুবই আধুনিক মনে হয়েছে, এবং দেশটির মানদন্ড যেকোন তথাকথিত দাতা দেশ থেকে এগিয়ে আছে সেটা বুঝতে আর বাকি নাই।
উল্লেখ্য যে, আজ যে যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরন কথায় কথায় উচ্চারন করেন এবং তুলনা করেন কিছু উযবুক ধরনের মানুষ। তাদের হয়ত জানাই নাই যে, যুক্তরাষ্ট্র তার সার্বভৌমত্ব পাবার পর ১০০ বছর পর্যন্ত গৃহযুদ্ধে লিপ্ত ছিল [8]। সেই হিসাবে বাঙলাদেশ নতুন দেশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের (সার্বভৌমত্ব পাবার ৫০ বছরের সময়কার) তুলনায় অনেক এগিয়ে আছে, এবং এগিয়ে যাবে।
ইসরাইল, আরব উপদ্বীপে একমাত্র ইহুদি দেশ, এবং দেশটির নাম বারবার উচ্চারন করা হয়, তার উচ্চ-প্রযুক্তি, মেধা, যুদ্ধাস্ত্র, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, বিবাদে জড়িয়ে জেতার জন্য [9]। ইসরাইলের তুলনায়, বাঙলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র মুসলিম দেশ, এবং দেশটি যে ভাবে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করছে, এবং ভবিষ্যেও করবে সেটা এই অঞ্চলে যে কোন দেশের কাছে ঈর্ষার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে এবং দাঁড়াবে।
সে হিসাবে ভবিষ্যতে, বাঙলাদেশকে যদি কোন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রযুক্তি বিশ্লেষক বলেন দক্ষিণ এশিয়ার ক্যান্সার, আমি মোটেও অবাক হব না বরং গর্বে বুকটা ফুলে উঠবে।
জয় বাঙলাদেশ ,বাঙলাদেশ জিন্দাবাদ।
[1]. Click This Link
[2]. https://en.wikipedia.org/wiki/George_Piro
[3]. Click This Link
[4]. https://en.wikipedia.org/wiki/Bangladesh
[5]. Click This Link
[6]. Click This Link
[7]. Click This Link
[8]. Click This Link
[9]. https://www.britannica.com/place/Israel
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৯