somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষের অদম্য কৌতূহল ও টেলিস্কোপ কথন

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুই পায়ের উপর ভর করে দাঁড়াতে শিখেই মানুষ তাকিয়েছে অসীম আকাশ পানে। চাঁদ, সূর্য্য হয়ে মানুষের দৃষ্টি চলে গেছে আরও বহুদূরের মিটমিটে তারাদের দিকে। অসীম রহস্যময় আকাশ সবসময়ই মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে, যত জানে, তারও বেশি জানতে চায়।
খালি চোখেই প্রাচীন মানুষেরা দিগন্ত থেকে দিগন্তে আকাশের বুকে তন্ন তন্ন করে চালিয়েছে তল্লাশী, হন্য হয়ে ছুটেছে জ্ঞানের সন্ধানে। খালি চোখে আকাশ পর্যবেক্ষণ করেই চিহ্নিত করেছে তারাদের, কতকগুলো তারাদের একসাথে করে নামকরণ করেছে বিভিন্ন তারামণ্ডলীর। পৌরণিক কাহিনীর পাতায় পাতায় স্থান করে নিয়েছে তারামণ্ডলী দিয়ে সাজানো ওরিয়ন, উরসা মেজর, এন্ড্রোমিডার মত কাল্পনিক সব চরিত্র।
তারাদের অবস্থান লক্ষ্য করেই প্রাচীন মানুষেরা সাগরে জাহাজ ভাসিয়ে বেড়িয়ে পড়েছিল অজানাকে জানতে।

একটা সময় খালিচোখে আকাশ পর্যবেক্ষণ আর পোষাল না, আকাশকে আরও কাছে না নিয়ে আসতে পারলে যেন কৌতূহল মিটছে না। কিন্তু এর জন্য মানুষকে অপেক্ষা করতে হয়েছে বহু শতাব্দী।
১৬০৮ সালে ফ্লেমিশ চশমা নির্মাতা হ্যানস লিপারসে সর্বপ্রথম লক্ষ্য করেন যে লেন্সের সাহায্য দূরের বস্তু কাছে দেখা যায়। খবর চলে যায় বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর কাছে । তিনিই হ্যানস লিপারসের আবিস্কার নিয়ে গবেষণা করে ১৮০৯ সালে সর্বপ্রথম এক পূর্ণাঙ্গ টেলিস্কোপ আবিস্কার করেন। এটা ছিল প্রতিসরণ টেলিস্কোপ, অর্থ্যাৎ লেন্সের ভিতর দিয়ে আলো প্রতিসরিত হয় বস্তুকে বিবর্ধিত করে। সেই টেলিস্কোপের সাহায্য রাতের বেলা আকাশে তাকিয়ে চমকে উঠলেন তিনি। এতদিন মানুষের ধারণা ছিল যে স্বর্গীয় সকল বস্তুই পৃথিবীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। কিন্তু গ্যালিলিও দেখলেন যে বৃহস্পতি গ্রহকে কেন্দ্র করে চারটি বস্তু আবর্তিত হচ্ছে। এই কথা প্রচার করা মাত্র ধর্মগুরুদের তোপের মুখে পড়লেন গ্যালিলিও। এরপরে আরও কত অত্যাচার সহ্য করতে হল তাকে, যাক সে কথা এখানে আলোচনা করব না।
এই প্রতিসরণ টেলিস্কোপের সাহায্য মানুষ আকাশ সম্পর্কে নতুন অনেক কিছুই জানতে পেল।
কিন্তু স্যার আইজ্যাক নিউটন এই টেলিস্কোপে সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। তার প্রয়োজন আরও উন্নত কিছুর। ১৬৬৮ সালে তিনি নিজেই খেটেখুটে সম্পূর্ণ নতুন এক টেলিস্কোপ আটিস্কার করলেন, যেটা আগেরটার মত প্রতিসরণ নয়। এখানে দুটো আয়নায় বস্তুর বিম্ব প্রতিফলিত হয়ে বিবর্ধিত হয় অর্থ্যাৎ প্রতিফলন টেলিস্কোপ। এর সাহায্য স্বর্গীয় বস্তুগুলো আরও ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হল।

কিন্তু মানুষ সন্তুষ্ট হল না তাতে, আরও ভালভাবে আকাশকে দেখা চাই। মানুষ ভাবলো, মহাকাশ থেকে আগত অনেক আলোক রশ্মি ভুপৃষ্ঠ পর্যন্ত পৌঁছায় না, যদি আরও উপরে অর্থ্যাৎ কোন পর্বতের চূড়ায় টেলিস্কোপ স্থাপন করা যায়, তাহলে আরও বেশি জানা সম্ভব হবে। যেই ভাবা সেই কাজ, ১৯১৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার উইলসন পর্বতের চূড়ায় স্থাপন করা হল ৮ ফিট ব্যাসের হুকার টেলিস্কোপ। এই টেলিস্কোপের সাহায্যই মানুষ সর্বপ্রথম মহাবিশ্বের প্রসারণ বুঝতে পারল।

উপরোক্ত টেলিস্কোপগুলো শুধু দৃশ্যমান তরঙ্গদৈর্য্যর আলোই ধরতে পারত, অদৃশ্য যেমন অতিবেগুনী রশ্মি, অবলোহিত রশ্মি, এক্সরে ইত্যাদি রশ্মিগুলো ধরতে পারত না। কিন্তু এগুলো ধরতে না পারলে মহাকাশের এক বিড়াট রহস্য অজানাই থেকে যাবে। মানুষ তাই এসব বেতার তরঙ্গ ধরার টেলিস্কোপ বানিয়ে ফেলল, যাকে বলে রেডিও টেলিস্কোপ। যার সাহায্য উন্মোচিত হতে থাকল মহাকাশের অদৃশ্য সব বস্তুগুলো। জানার ক্ষমতাও বেড়ে গেল বহুগুণ। সবচেয়ে বড় রেডিও টেলিস্কোপ হচ্ছে ১০০০ ফিট।যা Arecibo, Puerto Rico তে অবস্থিত এবং ওই দীপের পাহারের চুড়ায় স্থাপন করা হয়েছে।এটা স্বয়ংক্রিয় ভাবে পৃথিবীকে প্রদক্ষিন করে যখন পৃথিবী তার অংশ পরিবর্তন করে।

তবুও জানার স্পৃহা শেষ হল না মানুষের। চিন্তাকরে দেখা গেল যে অনেক তরঙ্গই পৃথিবীর উপর দিয়ে যায়, বায়ুমণ্ডলে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে অনেক রশ্মি পৃথিবী অবধি পৌঁছায় না। কিন্তু ঐ রশ্মিগুলো ধরতে না পারলে জীবনটাই বৃথা। তাহলে কি করা যায়? এক কাজ করা যাক, এতদিনের সব টেলিস্কোপ তো পৃথিবীতে স্থাপন করা হয়েছে, এবার পৃথিবীর কক্ষপথে একটা টেলিস্কোপ বসালে কেমন হয়! যুগান্তকারী আইডিয়া নিসঃন্দেহে।
১৯৬২ সালে এরিয়াল-১ নামক টেলিস্কোপ উৎক্ষেপণ করা হল। পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপিত এটাই প্রথম কোন টেলিস্কোপ।
কিন্তু এই টেলিস্কোপের ক্ষমতায়ও মানুষ সন্তুষ্ট হল না, আরও শক্তিশালী, আরও উন্নত টেলিস্কোপ পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হল। অবশেষে ১৯৯০ সালের ২৪ শে এপ্রিল মহাকাশে পাঠানো হল আরও উন্নতমানের টেলিস্কোপ। বিজ্ঞানী এডুইন হ্যাবলের সন্মানে এই টেলিস্কোপের নাম দেওয়া হল হ্যাবল টেলিস্কোপ। যার পর্যবেক্ষণের উপর ভর করেই আধুনিক জ্যোর্তিপদার্থ বিজ্ঞান এগিয়ে যাচ্ছে।
এতেও মানুষের কৌতূহলের শেষ হচ্ছে না, হ্যাবল টেলিস্কোপের চেয়ে এক হাজারগুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন স্পেস টেলিস্কোপ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজ্ঞানীরা।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২৩
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×