somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একট ছোট গল্প

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অল কোয়ায়েট ইন দ্যা এয়ারপ্লেন
মামুন খান


“ভাই কী একেবারেই যাইতেছেন , না-কি ছুটিতে?”
প্রশ্ন কর্তার দিকে তাকায় দ্রোহী। ভদ্রলোকের বয়স বছর তিরিশেক। বেটেমত, মুখ ভর্তি দাড়ি, পরনে টমি হিলফিগার টি-শার্ট, জিনসের প্যান্ট আর পায়ে একজোড়া কেড্‌স- নাইকি। ভদ্রলোক দ্রোহীর দীর্ঘ বিমান যাত্রার শেষ অংশের সহযাত্রী। কুয়ালালামপুর বিমান বন্দর থেকে মিনিট দশেক হলো বিমানটি আকাশে ডানা মেলেছে। মালয়েশিয়ান এয়ারের এই বিমানটিকে বিমান না বলে মুরগীর খোপ বললে বেশ মানানসই হয়। সিট গুলো নড়বড়ে। পুরো প্লেনে একটা মাত্র টিভি মনিটর। বিমানের এয়ার কন্ডিশনিং মনে হয় কাজ করছে না। ভেতরে ভাপসা গরম। আশ্চর্য্য! লসএঞ্জেলস থেকে কুয়ালালামপুর পর্যন্ত বিমানে যে সার্ভিস, তার সাথে কুয়ালালামপুর টু ঢাকা সার্ভিসের আসমান জমিন তফাৎ।
সহযাত্রী তার প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে নিজেই নিজের বৃত্তান্ত বলতে থাকে। “আমি একেবারেই যাইতেছি। পেটেভাতে বিদেশ থেকে পোষায় না। থাকলাম তো তিন বছর। এখন দেখি দেশে গিয়ে চারটা ডাল-ভাতের কোন রকম ব্যবস্থা করা যায় কি-না।“
মায়া হয় দ্রোহীর লোকটার জন্য। ভদ্রলোক হয়ত তাকেও মালয়েশিয়া ফেরৎ ভেবেছে- থাক ভাবুক। লোকটির ভুল ভাঙ্গানোর চেষ্টা করে না সে। ভুল ভাঙ্গালে হয়ত সারাটা ক্ষণ লোকটি তার ভাগ্যকে দোষারোপ করবে। দুঃখী মানুষকে সান্ত্বনা দিতে হলে নিজেকেও দুঃখী হিসেবে উপস্থাপন করতে হয়। দুঃখী মানুষের সমব্যথী কেবলমাত্র আরেকজন দুঃখী মানুষই হতে পারে। আর তাই সহযাত্রীকে আরও সান্ত্বনা দেবার উদ্দেশ্যে সে বলে, “ আমিও একেবারেই চলে যাচ্ছি। যে বেতন দেয় তার চেয়ে দেশেই অনেক ভাল।“
একই পথের যাত্রী পেয়ে লোকটির চেহারায় অপেক্ষাকৃত প্রশানতির আলো উদ্ভাসিত হয়। বিপুল উৎসাহে ভদ্রলোক তার কাহিনী বর্ণনা করতে থাকে। সেই যে বিদেশ আসার আগে জমি-জমা বিক্রি থেকে শুরু। তারপর একে একে আদম ব্যাপারীর টালবাহানা, বিদেশের মাটিতে পা দিয়েই শ্রীঘর বাস, মাস তিনেক পর মূক্তি পেয়ে এক কারখানায় পেটে ভাতে কাজ। দীর্ঘ এক বছর। এক বছর পর সাময়িক মূক্তি - - -, তারপর আরও কত কী। লোকটির কাহিনী শেষ হবার আগেই খাবার আসে। কথা বন্ধ করে ভদ্রলোক খাওয়ায় মনোনিবেশ করে। দ্রোহীর পেটে ক্ষুধা আছে। কিন্তু খেতে মন চাইছে না। খাবারে মনোযোগ না দিয়ে একটু চোখ বোজার চেষ্টা করে সে।
হায়রে সুখ। একটু খানি সুখের জন্য, একটু খানি ভাল থাকার জন্য মানুষ নিজের দেশ, ভিটা-মাটি, আত্নিয়-পরিজন ফেলে পাড়ি জমায় ভিনদেশে। সুখের মাটি ছোঁয়ার ভাগ্য আবার সবার হয় না। সাগরে মাছ ধরার ট্রলারে, মাল বোঝাই ট্রাকে, ধু ধু মরুতে অথবা গভীর অরন্যে বিষাক্ত সাপের দংশনে নীল হয়ে সুখের চিরনিদ্রায় শায়িত হয় অনেকে। আবার অনেকে সক্ষম হয় সেই মাটি ছুঁতে।
কেউ বা এক সাগর পাড়ি দেয় আবার কেউ বা সাত সাগর আর তের নদী পাড়ি দেয় দ্রোহীর মত। তারপর শুরু হয় যুদ্ধ। সুখে থাকার যুদ্ধ। প্রিয় জনের মুখে হাসি কল্পনার মানসচক্ষে অবলোকন করার যুদ্ধ। কিন্তু যুদ্ধ আর সুখ পরস্পর বিরোধী দুটি শব্দ। একটি তেল তো অন্যটি পানি। মিশ খায় না কখনই। পাশের লোকটির সাথে দ্রোহীর গুণগত কোন পার্থক্য নেই। পার্থক্য যা আছে তা শুধু বাহ্যিক। দু’জনের সুখ বা দুখ, জীবনের লক্ষ্য আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যে যুদ্ধ সেই যুদ্ধ দুই ভিন্ন ফ্লেভারের। অথবা বলা যায় ইনগ্রিডিয়েন্ট এক, মোড়ক ভিন্ন । কেউ সুখী না। দ্রোহী সুখী না, তার সহযোগী সুখী না। সুখী না বিজনেস ক্লাশের ভি আই পি ট্রিটমেন্ট উপভোগ করা পেট মোটা শিল্পপতিটি। বিমান ভর্তি যাত্রীদের কেউ সুখী না। কুয়ালালামপুর বিমান বন্দরে ফেলে আসা সেই করুণ জীর্ণদশার লোকগুলো সুখী না। অথবা রবীন্দ্রনাথের সেই কিনু গোয়ালার গলি - -, আমি ছাড়া ঘরে থাকে আর একটা জীব- - - এক ভাড়াতেই - - - সেটা টিকটিকি।
তবে মানুষ আদ্যপান্ত সুখী না হলেও কখনও কখনও, কালে ভদ্রে সুখী হয় বটে। এই যেমন দ্রোহী এই মুহূর্তে সুখী। ভীষণ রকমের সুখী। আর কিছুক্ষণ পরে সে ফেলে আসা অতীতকে হাত দিয়ে স্পর্শ করতে পারবে, হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারবে। চাইলে দ্রবিভূত করে দিতে পারবে নিজেকে ফিরে পাওয়ার অনাবিল আনন্দের বাড়াবাড়ি রকমের সুখে।
দশ বছর পর!মানে ত্রিশ কোটি তিপ্পান্ন লক্ষ ষাট হাজার সেকেন্ড পর আবার সেই পুরোনো গন্ধ, বর্ণ, পরিচিত নগর আর তার নাগরিক। বিমানবন্দর থেকে এয়ারপোর্ট ধরে মহাখালী, মহাখালী থেকে সাতরাস্তা হয়ে ফার্মগেইট, ফার্মগেইট থেকে গুলিস্তান হয়ে নবাবপুর রোড ধরলেই পুরোনো ঢাকা। পুরোনো ঢাকার এক অচেনা, অখ্যাত, নোংরা-পূতিগন্ধময় গলিতে প্রায় শত বছরের পূরোনো তামাদি হয়ে যাওয়া এক বাড়ি। ঢাকা শহরের গোড়া পত্তনে এই বাড়িটির অথবা এই বাড়ির মানুষগুলোর কোন ভুমিকা নেই। ভূমিকা নেই রাজনীতিতে, সংস্কৃতিতে, ধর্মে অথবা অধর্মে। এসব দিক বিবেচনা করলে এই বাড়িটির বা এই বাড়ির মানুষগুলোর কোন মূল্যই থাকতে পারে না। কিন্তু দ্রোহীর বিবেচনায় এই বাড়ি বা বাড়ির মানুষগুলোর মূল্য মনুষ্য সৃষ্ট কোন মুদ্রা বা একক দিয়ে নিরুপন করা সম্ভব না।
একান্ত আপনজন বলতে দ্রোহীর মা, বড় ভাই - - -
লেডিজ এন্ড জেন্টলমেন - - -, স্পীকারে পাইলটের কণ্ঠ।
বিমানটা অসম্ভব রকমের ঝাকি খাচ্ছে। যাত্রীদের মধ্যে মৃদু গুঞ্জন। পাইলট ইংরেজীতে নাতীদীর্ঘ একটা ঘোষনা দিল। পাইলটের বক্তব্য বাংলা অনুবাদ করলে অনেকটা এরকম দাঁড়ায়ঃ
ভদ্রমহিলা এবং মহোদয়গন। কোন এক অজানা কারণ বশতঃ বিমানটির একটা এঞ্জিন বিকল হয়ে গেছে। তবে এয়ার বাস ৩০০ -এর বৈশিষ্ট হচ্ছে যে, এর একটা এঞ্জিন বিকল হলেও বাকীটা দিয়ে নিরাপদে অবতরন করা সম্ভব। আমরা ইতমধ্যে বাংলাদেশের আকাশ সীমায় প্রবেশ করেছি। আর মিনিট দশেকের মধ্যে বিমানবন্দরের রানওয়ে দেখতে পাব। এসময় বিমানটি প্রচন্ড ঝাঁকুনি খেতে পারে। তবে আপনারা চিৎকার চেচামেচি না করে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকুন যাতে আমরা নিরাপদে অবতরন করতে পারি। আমরা বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাউয়ারের সঙ্গে অনবরত যোগাযোগ রাখছি। আপনারা যার যার আসনে সীট বেলট বেঁধে বসে থাকুন। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুণ।
হায় আল্লাহ্‌। শেষ, সব শেষ। সমস্ত আশা-ভরসা, স্বপ্ন-বাস্তবতা, মান-অভিমান, প্রেম-ভালবাসা, মিলন-বিরহ, যুদ্ধ এবং শান্তি- সবকিছুর সলীল সমাধী ঘটতে যাচ্ছে আর কিছুক্ষণের মধ্যে। পাইলট যতই বলুক না কেন- এক এঞ্জিনে ভর করে প্লেন মাটিতে নামতে পারবে, আসলে সব বাক ওয়াস। মৃত্যুর আগে বেঁচে থাকার শেষ যুদ্ধের মিথ্যা আস্ফালন।
বিমানের প্রতিট যাত্রীর মধ্য স্পষ্ট মৃত্যু ভয় দেখতে পায় দ্রোহী। আঁটসাঁট করে সিট বেল্ট বেধে, দুই হাতে চেয়ারের হাতল শক্ত করে ধরে বসে আছে সবাই। মুখ থেকে টর্নেডোর মত ছুটছে দোয়া দরুদ, যে যা পারে। সামনে মৃত্যু দূত- আজ্রাইল। অথচ মরতে চায় না কেউ। বাঁচতে চায়, সবাই বাচতে চায়। বেঁচে থাকার প্রাণান্ত আকাঙ্ক্ষায় মানুষগুলো যেন দোয়া-দরুদ নয়, আজ্রাইলকে অবিরাম তিরস্কার করছে। পিছু হটে যাও আজ্রাইল, আমরা মরতে চাই না।
সদ্য বিবাহিত নব বধূকে রেখে যে যুবক সাগর পারি দিয়েছিল, প্রবাসের যন্ত্রনাদায়ক দীর্ঘ জীবনের ইতি টেনে আজ তার ঘরে ফেরার পালা।
‘আচ্ছা এই তোমার আসার সময় হলো? সেই যে প্রিয়তমার লজ্জা রাঙ্গা মুখটা দেখেছিলাম, সে যে কী লজ্জা। চেহারাটা এখন আর ঠিকমত মনে পরে না। আবছা, আবছা, ধোয়া, ধোয়া। আমি আমার নববধূর লজ্জা রাঙ্গা মুখটা আরেকবার অন্ততঃ দেখতে চাই। সরে যাও আজ্রাইল, সরে যাও।’
সন্তান জন্মের ঠিক তিন মাস আগে যে বাবা পারি জমিয়েছিল বিদেশে, সেই বাবা আজ ফিরছে মেয়ের জন্য ব্যাগ ভর্তি খেলনা আর চকোলেট নিয়ে।
‘তোমার ভেতর কী দয়া-মায়া কিছুই নেই? আমার দু’বছরের মেয়েটা এখনও তার বাবাকে দেখেনি। সারাদিন নাকি বাবা বাবা বলে ডাকে। আকাশে প্লেন দেখলেই বলে ঐ যে বাবা। আমি আমার মেয়ের মুখ থেকে একটিবারের জন্য বাবা ডাক শুনতে চাই। সরে যাও আজ্রাইল।’
জননীর নিজ হাতে সেলাই করা পুরোনো কাপড়ের কাঁথা সুটকেসে ভরে জীবিকার তাগিদে ঘর ছেড়েছিল টগবগে এক যুবক। মায়ের কষ্ট দূর করার জন্য সে কি তার পরিশ্রম। হাড় ভাঙ্গা খাটুনি শেষে সেই কাঁথা মুরি দিয়ে, রাতের বেলায় ঘুম, শান্তির ঘুম!
‘আমি আমার মা’কে দেখিনা কত দিন হলো! মায়ের হাতের পরশ, ঘুম পাড়ানি গান, মা মা গন্ধ- - -’
মালয়েশিয়ায় সদ্য সেকেন্ড হোম সওদা করে দেশে ফিরছে বিজনেস ক্লাশের শিল্পপতিটি।
“হে খোদা, জীবনে অনেক অনেক পেয়েছি। চারিদিকে যা কিছু দেখেছি তাই নিজের করে নিয়েছি। হারাম, হালাল বাছ বিচার করিনি। এই মুহূর্তে আমি শুধু আমার প্রাণ টুকু ভিক্ষে চাইছি। চাইনা আমার বাড়ি, গাড়ি, মিল, কারখানা, সেকেন্ড হোম- এগুলো কচিএতদিন ভেবেছিআমার, আমার, শুধুই আমার। এখন বুঝতে পারছি এসবের কোন কিছুই আমার না। আমার প্রাণটাই শুধু আমার। আমি শুধু বেঁচে থাকতে চাই।“
না না মালাকুল মউত, আমরা মরতে চাই না, বাঁচতে চাই। শুধুই বাঁচতে চাই।
ঝাঁকুনি আগের চাইতে বেশী মনে হচ্ছে। প্রচন্ড বেগে দানব বাতাসের ঝাপটা এসে যান্ত্রিক পাখিটার বক্ষে বার বার আঘাতের পর আঘাত হানছে। সেই সাথে গর্‌ গর্‌- ডাইনোসরের শেষ চিৎকার। এইত, এইত, এখনি হয়ত একটা ডানা খসে পরবে পাখীটার, তারপর আরেকটা, তারপর- - -

মায়ের মুখটা ভেসে ওঠে দ্রোহীর নয়নপটে। সাথে সাথে ঝাপসা হয়ে আসে সেই মুখছবি। টপ টপ অশ্রু ধারা দু’ কপোল বেয়ে গড়িয়ে পরে। অন্য অনেকের সাথে সেও সমস্বরে বলতে থাকে- “ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল্লাল্লাহ। “
ঝাঁকুনি আর শব্দের মাত্রা উত্তরাত্তর বাড়ছে। শক্ত করে সিটের হাতল ধরা, দুচোখে অশ্রু ধারা। মা, বাবা, ভাই, বোন, শৈশব, ফেলে আসা স্মৃতি সব ফ্ল্যাশ ব্যাকে সামনে এসে যায় কয়েক সেকেন্ডে। এবারে চোখ বনদ্ধ করে সে, আর মনে মনে বলে, “হে রাব্বুল আলামিন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমিই আমার মহান সৃষ্টিকর্তা, বিচার দিনের মালিক। মুহাম্মদ (সঃ) তোমার পাঠানো শেষ নবী এবং রাসূল। তুমি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নাই। তোমার দরবারে শোকর জানাই- ক’দিনের জন্যে হলেও মানুষ রুপে পৃথিবীতে পাঠিয়েছ বলে। আমার ছোট্ট এই জীবনে বেঁচে থাকার জন্য যত অন্যায় করেছি, সজ্ঞানে অথবা অজ্ঞানে- তার সব তুমি ক্ষমা করে দাও আল্লাহ্‌। মাটি থেকে তৈরী করেছ আমাদের, মাটিতেই মিশিয়ে দেবে আবার, এটাই সত্য-ধ্রূব সত্য । সেই সত্যকে গ্রহণ করার জন্য আমি প্রস্তুত, আমি তৈরী আল্লাহ্‌।“
অসম্ভব হালকা লাগছে শরীর। মৃত্যুর আগে কী শরীর হালকা লাগে? কে জানে। মনে হয় প্লেনটা নীচে নামছে। হ্যা তাইতো। একেবারে যাকে বলে ফ্রী ফলিং। গাছ থেকে আপেল পরে মাটিতে- নিউটনি শক্তি না মধ্যাকর্ষন শক্তি কি যেন বলে ছাই মনে আসছে না। আপেল পরে সাত ফীট ওপর থেকে আর প্লেনটি পরছে- - -
মাটি স্পর্শ করেছে চাকা। ধপাস, বু ম ম ম----। হ্যা এইতো স্পষ্ট টের পাওয়া যাচ্ছে। ঘর্‌ র র্‌ , সো সো সো, ক্যার্‌ র্‌ - ডাইনোসরের শেষ আর্তনাদ। অনন্ত কাল যেন চলতে থাকে সেই আর্তনাদ।
বিমান ভর্তি যাত্রীদের বঁচে থাকার তীব্র চাহিদাই হোক, দোয়া-দরুদের ধারালো আক্রমনেই হোক, আর বিমান চালকের দক্ষতার কারণেই হোক- আজ্রাইলের ওপর আল্লাহ্‌ পাক অন্তর্বর্তিকালীন নিষেধাজ্ঞা জারী করায় আজ্রাইল পিছু হটতে বাধ্য হয়। বিমানটি যখন পুরোপুরি থেমে যায়, ভেতরে তখন পিন পতন নিস্তব্ধতা, কারো মুখে টু শব্দ টিও নেই অল কোয়ায়েট ইন দ্যা এয়ারপ্লেন।
এই জগতে বেঁচে থাকার যত আনন্দ আছে তার সবটুকু লুকিয়ে আছে শুধু শ্বাস নেওয়া আর নিঃশ্বাস ছাড়ার মধ্যে। অক্সিজেন নেওয়া আর কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করা। ব্যাস! আর কিছু না। অক্সিজেন আর কার্বন ডাই-অক্সাইডের এই লেনদেনের পেছনে রয়েছে এক মহা পরিচালকের হাত। যতক্ষণ এই লেনদেন সচল থাকে ততক্ষণই প্রতিট মানুষের উচিৎ সেই পরিচালকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো। অন্য কিছুর প্রতি কারও কোন মোহ থাকা উচিৎ নয়। কিন্তু যা উচিৎ, মানুষ তা করে না। মৃত্যু উপত্যকা থেকে ফিরে আসা এই বিমানের যাত্রীরাও এর ব্যতিক্রম না। শুধু নিঃশ্বাসটুকু সচল রাখার জন্য এতক্ষণ যে মানুষ গুলোর আকুতি ছিল, নিঃশ্বাসের নিশ্চয়তা পেয়েই মুহূর্তে সেই মানুষ গুলো যেন আশান্ত হয়ে ওঠে। হুড়মুড়িয়ে ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়ানো, ইমিগ্রেশন পার হয়ে লাগেজ বেল্টের চার পাশে হুমড়ি খেয়ে পরা, সেই সাথে চিৎকার, চেচামেচি। তবে চিৎকারের মাত্রা অতটা জোরালো নয়। দ্রোহীও এর ব্যতিক্রম না। বেঁচেই যখন আছে তখন আর লাগেজ ফেলে রাখা কেন? ইমিগ্রেশন পার হয়ে ধীরে ধীরে লাগেজ বেলটের দিকে এগিয়ে যায় সে।
Toronto
[email protected]


সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:৩৮
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×