আমার একটা চরম বদভ্যাস আছে ,বদ অভ্যাস বললে হয়তো কম বলা হবে।
নেশা বলা যেতে পারে।সেটা হল মাঝ রাতে ঢাকার রাস্তায় বিড়ি ফুকতে ফুকতে হাটতে থাকা ।
আগে প্রায় এই কাজটা করা হতো। এখন খুব একটা সময় হয় না ।গত বছর মার্চের লাস্ট উইক, রাত ১১.৩০ এর মত।
আমি রাস্তা দিয়ে হাটছি । মৎস ভবন পার হয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট এর কাছা কাছি আসতেই খেয়াল করলাম একটা মেয়ে কেমন বিচলিত ভঙ্গিতে এদিক সেদিক দেখছে । এক কদম আগাচ্ছে তো আরেক কদম পেছাচ্ছে। চেহারাটা খুব মলিন তবে সে যে আতঙ্কিত তা খুব স্পস্টই ছিলো ।অনেকটা ভাবলেশ ভঙ্গিতে বিড়ির পুটকিতে মূখ লাগিয়ে ধোয়া ছারছিলাম আর হাটছিলাম ।
হঠাত কানে শব্দ আসলো ভাইয়া শুনেন।
আমিও পালটা উত্তর দিলামঃ-
হুম ভাইয়া বল ।বলার সাথে সাথেই মেয়েটা কান্না করে দিলো ।
পৃথিবিতে সকল মানুষই কান্না করে । কেও লোক দেখানো কান্না করে, কেও লোক ফাসানো কান্না করে।
এক এক জনের কান্নার ধরন এক এক রকম হয়। কিন্তু নিষ্পাপ কান্না গুলো আলাদা করা যায়।
এইটুকু বুঝতে পারা যায় যে, এই কান্নার পেছোনে কোন অসত উদ্যেশ্য নাই। সেই বালিকার কান্নার ধরন টা ছিলো ঠিক ঐ রকমই। যেন কিছু হারিয়ে ফেলেছে ।
কাছে গিয়ে কোন কথা না বলেই হাতের ছোট পানির বোতলটা এগিয়ে দিলাম, ইশারা করলাম খাও ।
এবার তার কাছে জানতে চাইলাম কি হয়েছে ।
কি বলবে সে , আবার কান্না , আমিও কিছু না বলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাতে থাকা বিড়িটা ফুকছিলাম।
আর অপেক্ষা করছিলাম, কান্না থামার।
অবশেষে যা শুনলাম, সার সংক্ষেপ এই যেঃ-
এই দিকে এসে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছে , আরো বড় বিষয় হল সন্ধ্যা ৬টার দিকে তার ব্যাগ ছিন্তাইকারী মোটরছাইকেল থেকে টান দিয়ে নিয়ে গেছে, সেখানে টাকা, মোবাইল সহ আরো অনেক কিছুই ছিলো ।
মোবাইল না থাকায় কারো সাথেই যোগাজোগ করতেও পারছিলো না ।
সেই সন্ধ্যা থেকে বেচারী হাটতেছে। মীরপুর থেকে নাকি সে হাটতে হাটতে এখান পর্জন্ত এসেছে।
জিজ্ঞেস করলাম , কোথায় যাবা ভাই।
কান্না জরিত কন্ঠে উত্তর দিলো জুরাইন । বল্ল ভাইয়া একটু হেল্প করেন না ।
কিন্তু কিভাবে হেল্প করবো ?
আমিওতো জুরাইনের নাম শুনেছি অনেক , জাইনাই কোখোনো ।
আশ্বস্ত করার জন্য বললাম, হেল্প করতে পারি । তবে কান্না থামাতে হবে ।
কথা শুনে কান্না থামালো, হাত দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল
ভাইয়া আপনি কি সত্যি আমাকে পৌছায়ে দিবেন।
অবাক হয়ে লক্ষ করলাম ,
বাচ্চাদের মতো চোখ মুছতে থাকা আমার সামনে দাঁড়ানো মেয়েটা সত্যই অসম্ভব সুন্দর।
আচ্ছা এতক্ষন এই জিনিসটা আমার চোখে পড়লো না কেন ??
এখন যাবার পালা , রিকশা পাচ্ছিনা ।
অনেক কস্টে একটা রিকশা জোগার করলাম গুলিস্তান পর্জন্ত ।
গুলিস্তান এসে। আবার রিকশা নিলাম জুরাইন পর্জন্ত ।
জুরাইন যেয়ে আমার মোবাইল থেকে তার ভাইয়ার নাম্বারে ফোন দিয়ে বললাম,
বোনকে এসে নিয়ে যান। তখন রাত প্রায় ১টা ।
এই ফোন যে আমার কাল হবে কে জানতো তখন ।
সেই রাতে চলে আসার পর থেকে, গত একবছর যাবত , সেই বালিকার ফোনে আমি অতিষ্ঠ।
শুধু একটু দেখা করতে চায়। অবশেষে গতকাল তার সাথে মুভি দেখতে রাজি হলাম ।
বসুন্ধরায় গিয়ে দেখি বেচরা আমার জন্য টিকেট কেটে অপেক্ষা করছে ।
মুভির নাম Mission Impossible-5.
বাকি কথা গুলো তোলা রইলো ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৭