
আজ রাত সাড়ে আটটার দিকে বাথরুম থেকে বের হয়ে জুতা খুলে রাখার সময় মনে হলো দরজার নিচে কিছু একটা নড়ছে। ভালো করে তাকিয়ে দেখি একটি সাপ নড়াচড়া করছে। রুপা(আমার স্ত্রী)কে বললাম দ্রুত একটা লাঠি জাতীয় কিছু দিতে। রুপা রান্নাঘর থেকে লাঠি খুঁজে আনতে কিছুটা সময় লেগে গেলো। এর মধ্যে সাপটি আমার নজর এড়িয়ে অন্য কোথাও চলে গিয়েছে। বাথরুমের সর্বত্র সকলে মিলে তন্নতন্ন করে খুঁজে কোথাও পেলাম না। ঘরের ভিতর লুকিয়ে থাকা সাপ আছে জেনে ঘুমানো যায় কি? আমার ছেলে অপ্রতিম দাদা-দাদির কাছে ছিলো। সাপের কথা শুনে দাদার সাথে এসে ঘুরে আবার চলে গিয়েছে।তখন থেকেই মনটা খচখচ করছিল। বাড়িতে ভিক্সল ছিলো, যাতে প্রচুর পরিমাণে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড থাকে। বাথরুমের পিভিসি দরজার নিচে প্রচুর পরিমাণে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ঢেলে দিয়ে জানালা-দরজা সব বন্ধ করে দিলাম। প্রায় তিন ঘণ্টা পর ভাবলাম একটু খুঁজে দেখা দরকার আসলে সাপটি ঠিক কোথায় আছে? কিভাবে বেরিয়ে গেলো, কারও নজরে পড়লো না? বের হওয়ার কোনো পথই দেখতে পাচ্ছি না। বাড়ির পিছনে বড় পুকুর, পশ্চিম দিকে অনেক গাছপালা ও কবরস্থান। তারপরও এই শহরে ঘরের ভিতরে সাপ! এটি কল্পনাও করতে পারছি না। রাত্রে সাড়ে এগারোটার দিকে বাথরুমের দরজা খুলে আবার ভিতরে ঢুকলাম। ভিক্সলের গন্ধে নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়া দায়। নাক চেপে অনেকক্ষণ বাথরুমের ভেতরের সব জায়গা ভালো করে দেখলাম। সাপের কোনো অস্তিত্বই অনুভব করতে পারলাম না। বাথরুম থেকে বেরিয়ে দরজা লাগানোর সময় মনে হলো দরজার রাবারগুলো একটু ভালো করে দেখি। হঠাৎ খেয়াল করলাম, দরজার রাবার একটু উঁচু-নিচু মনে হচ্ছে। গভীরভাবে তাকিয়ে বুঝলাম, সাপটি দরজার রাবারের সাথে লম্বা হয়ে একেবারে মিশে আছে। এবার আর লাঠি আনতে সময় নষ্ট করা যাবে না। রুপাকে বললাম, "দ্রুত লাঠি নিয়ে এসো, সাপ পাওয়া গেছে।" রূপা দেরি না করে এবার শাবল নিয়ে দিলো এক খোঁচা। সাপটি লাফ দিয়ে দরজার রাবার থেকে মেঝেতে পড়লো। রুপা অনবরত সাপের মাথায় বাড়ি মারতে থাকলো। সাপটি নেতিয়ে পড়লো। খবর পেয়ে ছেলে আবার দাদার সাথে হাজির। এসেই সে তার আম্মুকে বকছে, মেরো না, "মেরো না ওতো আমাদের কোন ক্ষতি করেনি, তুমি একটি প্রাণ কেন মারছো?"

সত্যিই তো সাপটি আমাদের কোন ক্ষতি করেনি। তবুও ক্ষতির আশঙ্কায় আতঙ্কে আমরা তাকে মেরে ফেললাম। আজ সারাদিন ঘূর্ণিঝড় "বুলবুল" এর প্রভাবে সাতক্ষীরায় বৃষ্টি হচ্ছে। সাপটি হয়ত আশ্রয়হীন হয়ে আমাদের ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলো। আমরা যেন কাউকে আশ্রয়হীন হতে না দিই।


অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


