somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতিকাতরতা নয়, সমাজ পরিবর্তনের চেতনা নিয়েই ২৮শে অক্টোবর ফিরে আসবে বার বার

০৭ ই নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ অক্টোবরের ২৮ তারিখ। তিন বছর আগের এই দিনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাত্ত আহ্বানে তার অনুসারীরা লগী বৈঠা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিল প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের উপর। অনেকের মত সেদিন আমাকেও ক'ফোটা রক্ত ঝড়াতে হয়েছিল। সকাল বেলা মায়ের হাতে গরম করে দেয়া পোলাও খেয়ে বেড়িয়েছিলাম পল্টনের উদ্দেশ্যে, সারাদিন আর খাবার সুযোগ হয়নি। সেদিন কারো পাকা ধানে মই দেইনি যে আমাকে আঘাত করা হবে। কারো সম্পদ নষ্ট করতে যাইনি। গিয়েছিলাম পূর্ব ঘোষিত এক সমাবেশে যোগদান করতে। তবু মার খেতে হয়েছে। যার চিন্হ আজো মাথায় এবং হাতে বয়ে বেড়াই। লগি বৈঠাধারী হাজার হাজার লীগ কর্মীর সামনে মাত্র আধাঘন্টাখানেক টিকতে পেরেছিলাম। ইতোমধ্যে রক্তে ভিজে গিয়েছিল পরিধানের শার্ট। একের পর এক ইট বুকে পিঠে লাগছিলো। ভেঙ্গে গিয়েছিল একটি আঙ্গুল। অতপর আমাকে ময়দান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। . . . বিকেলে যখন ব্যান্ডেজ নিয়ে উত্তপ্ত সেই পল্টন মসজিদ গলিতে ফিরলাম, দেখলাম এখোনো একের পর এক রক্তে ভেজা আহত ভাইকে আনা হচ্ছে। জানলাম, শহীদ মুজাহিদ ভাইকে ওরা শেষ করে দিয়েছে, যার সাথে সকালে একত্রে হাত ধরে হেঁটেছি, যিনি ছিলেন আমার দায়িত্বশীল।
সেদিন লগি বৈঠার আঘাতে নিহত হয়েছিল অনেক প্রাণ। আহত হয়েছিল শত শত যুবক পৌঢ়, বৃদ্ধ। হিসেব করে দেখলাম, সেদিন আমিই সবচেয়ে কম আহত হয়েছি। অতি প্রিয় 'জীবন' ভাইকে সেদিন ওরা দুদফা লগি বৈঠা দিয়ে পিটিয়েছে। আজো তার ক্ষতের দাগ সহজেই চোখে পড়ে। শ্রদ্ধেয় আমান ভাই ৭ দিন ছিলেন জীবন মৃত্যুর মাঝামাঝি, ডাক্তাররা ছেড়ে দিয়েছিল আশা, কফিন তৈরী হয়েছিল। জানাজার ইমাম নির্ধারিত হয়েছিল। শরীরের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে ওরা মারেনি। আজো অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখি জীবন্ত শহীদ আমান ভাইকে। ভাবি, আমাকে যদি ওভাবে মারা হতো, কল্পনা করি আমি রাস্তায় পড়ে আছি আর নেমে আসছে একের পর এক বৈঠার আঘাত, উহ ভাবতে পারিনা, শিউরে উঠি। সহ্য করতে পারবোনা বলেই হয়তো আল্লাহ সেদিন অল্পতেই আমাকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে এনেছিলেন।

লক্ষ কোটি দর্শকের সামনে প্রকাশ্যে যারা সেদিন মানুষ খুন করলো, তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি তুলে নিল সরকার। কথায় কথায় যারা গণতন্ত্র-আইনের শাষনের নামে খই ফোঁটায়, আইনের শাষণের প্রতি সেই আওয়ামী ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের কি অদ্ভুত পরিহাস। নিজের পিতার হত্যার বিচারের জন্য তোলপাড় করে নেয় বাংলাদেশ, আর মায়ের কোল খালি করা অপরাধীদের ছেড়ে দেয়- কি অদ্ভুত দ্বৈত নীতি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর। এ পৃথিবীর আদালতে এর বিচার হবে কিনা জানিনা, তবে আদালতে আখিরাতে সব বিচারকের বড় বিচারক মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ অবশ্যই এর বিচার করবেন। পৃথিবীর কোন শক্তি তার দরবার থেকে মামলা তুলে নেয়ার ক্শমতা রাখেনা।

..........

২৮শে অক্টোবর যেসব অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত লোকের হাতে লগি বৈঠা তুলে লেলিয়ে দেয়া হয়েছিল আমাদের উপর, আমরা তাদেরকে কখোনো শত্রু ভাবিনা। তাদেরকে ভুল বুঝানো হয়েছে। যুগ যুগ ধরে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইসলাম বলেতে বুঝেছে শুধুমাত্র কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব, যাকাত। কারণ তারা ইসলামের দাওয়াত পেয়েছে প্রধানত অলি আওলিয়া পীর দরবেশদের মাধ্যমে, তারা দেখেছে খানকাহ, মসজিদ। ইসলামের এই নির্বিরোধ রূপটিই তাদের সামনে এসেছে। কিন্তু এ জনপদে ইসলাম একটি বিজয়ী জীবন ব্যবস্থা হিসেবে তাদের সামনে কখোনো আসেনি। ইসলামের রাষ্ট্রীয় রূপ, কিংবা রাজনৈতিক রূপ তাদের সামনে কখোনো না বাস্তবে এসেছে, না শিক্ষাব্যবস্থায় এসেছে। ফলে ইসলাম সম্পর্কে সুচতুর ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠী এদেশের সহজ সরল মানুষকে বারংবার বিভ্রান্ত করেছে। ইসলামকে জীবন ও সমাজের সর্বপর্যায়ে প্রতিষ্ঠাকামীদের বিরুদ্ধে তাদেরকে উত্তেজিত করেছে, তাদের মতামত ক্রয় করেছে। সর্বশেষ ২৮শে অক্টোবর আরেকবার তাদেরকে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে কিছু ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠাকামীদের পেছনে। আমি নিশ্চিত, এই সহজ সরল মাটির মানুষগুলোর সামনে যদি ইসলামের কল্যাণময় রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা, রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার দায়িত্বের কথা, সুন্দরভাবে সহজ করে যুক্তি দিয়ে উপস্থাপন করা যায়, তারা সহসাই চটকদার বুলি আওড়ানো প্রতারক ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী তথা ধর্মহীনদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। যেদিন এদেশের মানুষের সামনে আল্লাহর এই জমিনে সর্বপর্যায়ে কেবল তাঁরই প্রভুত্ব ও দাসত্বের কল্যাণকামীতার কথা, প্রয়োজনীয়তার কথা সুন্দরভাবে তুলে ধরতে পারবো, গ্রহণ করাতে পারবো, সেদিনই আমার প্রতি ফোটা রক্তের বদলা নেয়া হবে বলে ধরে নেব। ২৮ তারিখের শহীদদের শাহাদাতের্ ঋণ শোধ করতে পেরেছি বলে ধরে নেব। সেদিনই সবচেয়ে বেশি তৃপ্ত হব যেদিন অস্ত্র হাতে আমার উদ্দেশ্যে ধাবমান পা‌‌‌গুলো কুরআনের দাওয়াত নিয়ে ছুটে বেড়াবে আমারই নেতা হয়ে। তার পূর্ব পর্যন্ত বুকের ভেতরে প্রজ্জলিত 'প্রতিশোধের' আগুন জ্বলতেই থাকবে। আল্লাহ আমাকে তার কুরআন নিজে বুঝে আমল করে অন্যের নিকট উপস্থাপনার যোগ্যতা দান করুন আজকের দিনে এটাই মহান রবের নিকট প্রার্থনা।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:২৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×