somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের জাতিসত্ত্বার পরিচয় আগে পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন

১৩ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১০:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের জাতীয় পরিচয় আমরা 'বাংলাদেশী'- এতে আমাদের অনেকেরই আপত্তি ও বিরক্তি। কারণ সীমানার ভিত্তিতে আমরা বাংলাদেশী হলেও বিবিধ বহুপাক্ষিক মিলগত কারণে ভুখণ্ডগত সীমানা পেরিয়ে আমাদের বড় পরিচয়- আমরা 'বাঙ্গালী'। যেহেতু, বাংলা ভাষা বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়েছে, সুতরাং আমাদের জাতিসত্তার পরিচয়ও ভুখন্ডের সীমানা ছাড়িয়ে বাঙ্গালী হয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের জাতিসত্তার পরিচয় কি ভাষাতেই আটকে থাকবে? সীমানা যখন পেরুলোই, তখন সে পরিচয় আরো বড় হতে দোষ কোথায়? আমরা বরং বলতে পারি আমরা এশিয়ান। এশিয়ার মানুষগুলোর বিশ্বাস, জীবনধারা ও মূল্যবোধে অনেকগুলো কমন ও স্বতন্ত্র বিষয় রয়েছে। পারিবারিক মূল্যবোধ, খাদ্যাভ্যাস, ভুখন্ডগত নৈকট্য- ইত্যাদি অনেক বিষয়েই ঘোরতর মিল রয়েছে। সুতরাং আজ থেকে আমাদের পরিচয় আমরা বাংলাদেশী না হয়ে, বাঙ্গালী না হয়ে, 'এশিয়ান' হোক। আমরা আরো বড় হই, আরো বিস্তৃত হই, আরো ব্যাপক হই।

এখানেও আপত্তি। আমরা আমাদের মনটাকে আরো বড় করিনা কেন? আমরা আমাদের জাতিসত্বার পরিচয় কেন ভূখন্ডে বা ভাষায় সীমাবদ্ধ রাখবো? যে লোকের ভাষা বাংলা না, সে তো কখোনোই বাঙ্গালী হতে পারবেনা। যে এশিয়ায় জন্মেনি- সেও তো ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমাদের জাতিসত্তায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেনা। এ আমরা কেমন নির্মম জাতি, আমাদের শ্রেষ্ঠত্বে অন্তর্ভুক্ত হতে যখন অন্যদের জন্য দরোজা বন্ধ?
তারচেয়ে আমরা সকলে মানুষ- এটিই আমাদের বড় পরিচয়। আমরা একই পৃথিবীর বাসিন্দা সকলেই এক জাতি। আমরা দেহ সৌষ্ঠবে একই রকম। আমাদের জীবনের সূচনা ও শেষ একই রকম, আমাদের জীবন জীবিকা ও কর্মকাণ্ডের মধ্যে অমিলের চেয়ে মিলই বেশি। সুতরাং আমরা পৃথিবীর মানুষগুলো একই জাতি এটিই আমাদের জাতিসত্ত্বার পরিচয় হোক।

এ লেখকের কুপমন্ডুকতায় এতক্ষণ দুএকজন পাঠক বিরক্ত হয়ে উঠছেন সন্দেহ নেই। আমরা মানুষ না জানে কে? কেউ কি অস্বীকার করছে যে আমরা মানুষ না? আমরা মানুষ তাই বলে কি এই মানুষদের মধ্যে কমন বিষয়গুলোর অধিকারীরা স্বতন্ত্র হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে পারবোনা? আমরা মানুষ এ কথা নির্দ্বিধায় স্বীকার করেই আমরা একটি স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বার পরিচয় দিতে পারবোনা কেন?

দুঃখিত। আসুন আমরা মানুষ জাতি অস্বীকার না করেও কমন বিষয়গুলো নিয়ে স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বার পরিচয় স্বীকার করে নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সে পরিচয় নির্ধারণের ভিত্তি কি হবে? কেউ বলেন ভাষা, কেউ ভুখন্ড, কেউ রক্ত সম্পর্ক, কেউ জীবনাচার- আবার কেউ বলেন 'বিশ্বাস'। আমি বিশ্বাসের কথাই বলছি। সবচেয়ে ব্যাপকতর, যৌক্তিক, সুগভীর ও ইনসাফপূর্ণ বিভাজনের ভিত্তি হতে পারে বিশ্বাস। বিশ্বাসের দিক থেকে যারা এই বিশ্বজগতের স্রষ্টাকে স্বীকার করেন তারা এক জাতি, আর অস্বীকারকারীরা অন্য জাতি। যারা স্রষ্টার সার্বভৌমত্ত্বের ঘোষণা দেন, বিশ্ব পরিচালনায় কেবলমাত্র তার একনায়কতন্ত্রকে মেনে নেয়ার ঘোষণা দেন- তারা এক জাতি। যারা অস্বীকার করেন তাদের থেকে তারা পৃথক।


সারকথাঃ
সুতরাং আমাদের জাতি সত্ত্বার পরিচয় নির্ধারিত হবে বিশ্বাসের ভিত্তিতে। এরই ভিত্তিতে পৃথিবীতে জাতি সত্ত্বার প্রধান পরিচয়সমূহ হচ্ছে মুসলিম, কি খ্রিস্টান কি ইহুদী কিংবা অংশীবাদী। বড় যে প্রশ্নটি থেকে যায়, তাহলে কি আমাদের অন্য পরিচয়গুলো মুছে ফেলতে হবে? মোটেই না। বিশ্বাসের ভিত্তিতে জাতীয় পরিচয় নির্ধারিত হবার পর, অন্য যে কোন পরিচয় আমরা ধারণ করতে পারি। ভাষার ভিত্তিতে আমরা বাঙ্গালী হতে পারি, সীমানার ভিত্তিতে আমরা বাংলাদেশী হতে পারি, এলাকার ভিত্তিতে আমরা 'নোয়াখাইল্যা' কিংবা 'বরিশাইল্যা' হতেই পারি। রক্ত সম্পর্কের ভিত্তিতে আমরা চৌধুরী কিংবা সরদার হতেই পারি। হতে পারি বুয়েটিয়ান কিংবা নটরডেমিয়ান। কিন্তু শর্ত একটাই বড় পরিচয় অস্বীকার করে ছোট পরিচয়কে আকড়ে থাকার সুযোগ নেই। আমি বাংগালী কি এশিয়ান কি নোয়াখালী, - আমার মূল পরিচয়ের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যদি কেউ আমাকে এগুলো হতে বলে আমি জোর প্রতিবাদের সাথে তা অস্বীকার করি।

উৎসব, আনন্দ কিংবা কর্তব্য নির্ধারণে আমরা আমাদের জাতিসত্ত্বার মূল পরিচয়কে ক্ষতিগ্রস্থ করে না বসি।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১০:৪৮
১৮টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×