somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুযোগ-১

২৪ শে নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিরে আমার দুস্টু বাপজান! এই অদ্ভুত গোমোট অন্ধকারে এই নির্জন পুকুরঘাটে একা একা বসে এমন মেছু ভুতের মত অট্টহাসিতে ফেটে পরছিস কেন? কি হয়েছেরে আমার বুড়ো বাপজান?

না মা! কই কিছু নাতো? ভীষন হাসতে ইচ্ছে করছে, দম বন্ধ করা অট্ট হাসি যাকে বলে, ছোট বেলায় প্রাইমারী স্কুলে থাকতেই একদিন আমাদের শহীদুল্লাহ স্যারের কাছে শুনেছিলাম সব সময় হাসি খুশি থাকলে নাকি মন ভীষন প্রফুল্ল থাকে,হাসিখুশি ব্যক্তি মানেই নাকি, পরিপুর্ন একজন সুস্থ ব্যক্তি! ভীষন বিপর্যস্ত ব্যক্তিও বাঁচার আনন্দ খুঁজে এই হাসিতেই! হাসলে শরীরে নানা রকম শারীরবৃত্তিক পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে মুখ-মন্ডল ও শরীরের পেশি প্রসারিত-সঙ্কুচিত হয়, হৃদঘাত এবং রক্তচাপ পরিবর্তিত হয়, শ্বাসের গতি বেড়ে যায় এবং আমাদের শরীরের সর্বত্র অতিরিক্ত অক্সিজেন প্রবাহিত হয়!

হইছে হইছে! তোর ওই উনিভার্সিটি পরফেছর লটিফ আংকেল এর মত লেকচার দিয়ে দিয়ে আমার কান ঝালাপালা করতে হবে না! তোমার কি হয়েছে বাপজান তাই বলো! আমার কাছে কিছু লুকাতে চেয়োনা! শোন! তোমরা যতই বড় বড় য়ূনিভার্সিটি পাশ দাও না কেন, কোন মায়ের কাছেই তার সন্তানের মনের প্রকৃত অবস্থাটা লুকানো যায় না! বুঝেছ?

না মা! যতদূর মনে পরছে আমার স্যার অবশ্য অট্টহাসির প্রানরসায়ন নিয়ে তেমন কিছু বলেছিলেন বলে মনে পরছেনা একদমই! হাসি নিয়ে শরীরবৃত্তিক প্রান রসায়ন যাই বলুকনা কেন দেহের ভেতর আরোপ করা হাসিই মানুষকে সুস্থ বোধ করতে সাহায্য করে, নাকি এর পেছনে আরও অন্য কোন বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে তা আমার আজো জানা হলনা! তুমি তো অনেএএক কিছু জান মা! হাসি রহস্য নিয়ে এ ব্যাপারে কিছু বলনা মা!
এই যে তুমি, সেই তিন বছর বয়েসে নানাকে, ছয় বছর বয়সে নানীকেও হারাইছ, একমাত্র সতাল ভাইয়ের কাছে থেকে বড় হয়ে ১৩ বছর বয়েসে দ্বিগুনেরও বেশি বয়েসি আমার বাপজানের য়্যাত্ত বড় একটা সংসারের পুরো দায়িত্ব তুলে নিয়েছ নিজের কাধে, ৫৪ বছরের এই দীর্ঘ ইতিহাসে তুমি কোনদিন গোমরামুখে একটা মুহুর্ত কাটিয়েছ বলে চাচা চাচী, খালা, মামা, আব্বু বড় বোনেরা কেউ কোনদিন দেখেনি! এত হাসিমাখা প্রানচঞ্চল থাকার স্টামিনা কি করে কোত্থেকে পাও ফর্মুলাটা একটু বলনা প্লিজ!
বাবা মায়ের স্মৃতিতো খুব একটা মনে নেইরে আমার ছোট্ট বাপজান, একটু বড় হয়েই একটা ব্যাপার খুব সহজে বুঝে নিতে পেরেছিলাম "যারা সদা হাস্য সদা নির্মল, সদা প্রান চঞ্চল তাদের রসবোধ প্রখর হয়; তারা জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। হাসিখুশি ব্যক্তিকে বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজন এবং পরিবার-পরিজনেরাও খুউব পছন্দ করেন!

ঠিক শেরিফ কোলের মত! তাই না?

যা দুস্ট শয়তান~ শরীফার কোলে আবার কে রে? ওর তো এখনো বিয়েই হয়নি! শোন শোন! শরীফা তো এবার য়্যুনুভার্সিটি বঅঅঅড় পাশ দিয়া দ্যাশের বাড়ীত বেড়াইতে আইবু~ ওর নাকি এটাই শেষ পড়া! আমি কি তোর জন্য ওর বড়চাচীর সাথে কথা কমু?

যাও মা! আআআর একটা কথাও কইবানা! এই আন্ধাইর মধ্যরাইতে এই নির্জন পুকুরঘাটে আইছি নিজের সাথে নিজে একটু কথা কমু বইলা! জাননা? তোমার পাজী দুস্টু এই বাদরটা তার অখন্ড আধারকে আপন কইরা নিয়া মাঝে মাঝে ইট্টু আধটু সত্যিকারের আবেগী মানুষ হইয়া একান্ত জগতটারে নতুন কইরা চিনে নিতে চায়? তোমরাই না সারা বছর অভিযোগ কর? সে নাকি দিনে দিনে কেমন যন্ত্রের মত যন্ত্রমানব হয়া যাইতাছে?
=====================================================
শিশুমনে গেথে যাওয়া সমাজ বিজ্ঞান ক্লাসে হাসির উপকারিতা নিয়ে শহীদুল্লাহ স্যারের বলা কথাগুলো আর বৈজ্ঞানিক ব্যাক্ষা যাই বলুক না কেন! আমার আজকের অট্টহাসির দুমড়ে মুচরে যাওয়া ইচ্ছেটা কোনভাবেই বৈজ্ঞানিক ব্যাক্ষার সুত্র ধরে নয়! আমার দুনিয়াতে আমার সবচেয়ে কাছের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু আমার মায়ের পর্যবেক্ষনে ভীষন ডানপিটে ভীষন দুস্ট স্বভাবের সদাহাস্য এই আমি নাকি যখন নিজের কাছে হেরে যাই তখন ঠিক মধ্যরাতে নিকষ কালো আধারকে সাক্ষী রেখে একা একা অট্যহাসিতে ফেটে পরি!

আমি চোখেমুখে দুঃচিন্তায় অভিমানি মায়েরে শুধাই, মা তুমি মিথ্যে বলোনাতো! আমার হাসতে মন চাইল তাই হাসলাম! ২৬-২৭ বছরের একটা বাদর কি তার চারিপাশে বেড়েউঠা কেউ আহ্লাদি, কেউ অবুঝ, কেউ সামান্য হাসিমুখো দুস্টুমির উপকরন হবার প্রত্যাশি, কেউ সত্যিসত্যি নিঃস অসহায় এই মানুষগুলোর সাথে নিজের ভেতরে, অনেএএএএক ভেতরে সজতনে লালন করা একান্ত নিঃস্ব একাকিত্ব চেহারাটা প্রকাশ করে নিজেকে সঁপে দিতে পারে অন্য আর দশ বারোটা স্বার্থপর বানরের মত? এই দেখ! আমি কি সুন্দর গল্প বলতে পারি!
======================================================

গল্প শুনবে মা? একটা কাঠবিড়েলি আর কুনু ব্যাঙ্গের গল্প? অথবা রাজকুমারী আর মজনুর গল্প?
নাকি ওই প্রজাপতি আর ঘাসফুলের গল্পটা বলব?

হা হা হা! প্রজাপতি আর ঘাসফুলের গল্পও হয় নাকি? এইটা আবার কেমন গল্পরে বাবা?

ওই যে, বাংলার বারো ভুইয়াদের এক ভুইয়া ছিলনা দৌলত গাজী? তার কাছ থেকে কৌশলে ছিনিয়ে নেয়া মুর্শিদকুলী খার দিউয়ান চতুর বলরাম রায়ের ভাওয়াল পরগনা? ইতিহাসের গতিধারায় তৎকালীন পূর্ববঙ্গের প্রভাবশালী জমিদার রাজেন্দ্র নারায়ণ রায়ের সুন্দরী প্রিয়তমা স্ত্রী রানী বিলাস মনির শুভ আগমন উপলক্ষে নামকরনকৃত শীতলক্ষাপারের এক ছায়াসুনিবীড় বিড়াআআট বটগাছতলা রানীগঞ্জের অদুরেই এক গাছগাছালী ঘেড়া বিলপারের ছোট্ট এক গা? সেই গায়ে বাস করত রঙ্গীন ডানা ওয়ালা এক ছোওওট্ট প্রজাপতি, সারাক্ষণ তার চোখেমুখে ছড়িয়ে থাকত এক অদ্ভুত মায়াবি হাসি! সদা হাসিমুখ সদা প্রান চঞ্চলতায় ভরপুর প্রজাপতিটা মনের সুখে উড়ে উড়ে ঘুড়ে বেড়াত এপাড়া, ওপাড়া! এ তল্লাটে ও তল্লাটে ঘুড়ে সারাআআআ গায়ের সঅঅঅব খোকাখুকির সাথে তার সে কি---- ভাব!
ঘুম থেকে উঠই তার কঅঅত্ত ব্যাস্ততা! বিলপাড়ের টুনটুনির ঘরে আজ কি রান্না হল, কাঠালবাগানের কাঠবিড়েলি আজ কয়টা পাকা পেয়ারা কামড়ে দিয়েছে, নদীর ঘাটের ওই বিশাল কেওয়া গাছের ময়না বুবুর ছোটবোন টিয়াবেগমের মনটা কি আজো দুঃখ ভরাক্রান্ত? য়্যাত্ত য়্যাত্ব খবর প্রজাপতি ছাড়া আর কেইবা রাখে?

এমনি করে চলছিল তার দিন হাওয়ায় ভেসে, হেসে হেসে, নিয়তি কি আর সামাআআআন্য একটা প্রজাপতির য়্যাত্ত সুখ সইতে পারে? ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! কেড়ে নিল তার পৃথিবীতে একমাত্র অবলম্বন প্রিয় বাবাকে!
হঠাত করেই সে বুঝতে শিখল

"হই হই রই রই
যতই করুক টই টই
চারিপাশে সবাই আপন
তবু আপন কেউতো নই"

মায়ের বুঝিয়ে দেয়া নতুন দায়িত্ব কাধে নিয়ে নতুন করে নতুন পৃথীবিতে বেড়িয়ে পড়ল নতুন অন্য খোজার সন্ধানে, খুব অল্প দিনের মাঝেই হাসি হাসি মুখে উদ্যমী প্রান চঞ্চলতাকে সঞ্চয় করে জয় করে নিল তার মনিবদের! খুব সতর্ক খুব চৌকোষ বিচক্ষনতায় প্রজাপতির চারিপাশ মুখরিত! দিনে দিনে প্রজাপতির আপন ভুবনটা বড় হতে থাকে! নিত্য নতুন বন্ধুর সাথে তার হয় পরিচয়! নতুন নতুন মনিবের সাথে তার হয় ভাব বিনিময়!

সকাল থেকে সন্ধা অবধি খা বাড়ি, মিয়া বাড়ী, ভুইয়া বাড়ী হয়ে এ গা ওই গা দুউউর গায়ের কতজন কতপ্রয়োজনে ডেকে যায় সুহাসি প্রজাপতিটারে! কারো জাল বুনে দেয়া কারো বাড়ী রাঙ্গিয়ে দিয়ে আসা কত শত কাজে ভীষন ব্যাস্ততায় এমনি করে কেটে যায় তারদিন, দিন গড়িয়ে মাস, মাস গড়িয়ে বছর!

শীতের কোন এক শেষ বিকেলে ঘাসফড়িংটি উড়ে উড়ে চলে গেল দূ---রে, অনেক দূরে, টিপরা রাজ্যের রওশনাবাদ পরগনার কোন এক মেঠো পথ ধরে বিলের ধার ঘেষে এগিয়ে চলা এক সবুজ গায়ে। তখন ছিল শীতের শুরু, একেবেকে এগিয়ে চলা গেয়ো পথের দুধারে মৌ মৌ হলদে শর্ষেক্ষেতের পাশে আচমকা চোখ আটকে যায় ঘাসফড়িংয়ের! অদ্ভুত মায়াবী একটা ছোট্ট-সাদা ঘাসফুলের উপর! প্রজাপতিটা অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন মোহাচ্ছন্নের মত সদ্যই ফুটে উঠা শিশিরভেজা ঘাসফুলটার দিকে


আনমনে গেয়ে উঠে গান
তুমি চাইলে বৃস্টি...
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:১৩
৫০টি মন্তব্য ৪৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×