যত পারিস মানুষ ধর
এই মানুষ গড়ার কারখানা হচ্ছে সৎসঙ্গের যুগপুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্র প্রবর্তিত সৎসঙ্গ । সৎসঙ্গের যাত্রা বহু আগে। কালের বিবর্তনে বর্তমান পর্যায়ে সৎসঙ্গ কে দীর্ঘ বাধা-বিপত্তি ও বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। আধুনিক সভ্যতার সাথে তাল মিলিয়ে বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে সৎসঙ্গ কে এগিয়ে নিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র যে আদর্শ রেখে গেছেন তা সময়োপযোগী প্রমাণিত হয়েছে ইতোমধ্যে।
ইতিহাসঃ সৎসঙ্গের ইতিহাস সে তো অনেক প্রাচীন। সৃষ্টির আদি থেকেই সৎসঙ্গ হয়ে আসছে। সৎ এর সহিত সংযুক্ত হওয়া মানেই সাধারণ অর্থে সৎসঙ্গ । আর সৎসঙ্গের সাথে যারা জড়িত তারাই তো প্রকৃত অর্থে সৎসঙ্গী। এই সৎসঙ্গের প্রাণ পুরুষ পরম দয়াল শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সেই সৎসঙ্গ কে একটি আধুনিক, বিজ্ঞান সম্মত, জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বশেষে সকল মানুষের মিলন ক্ষেত্রে পরিণত করতে রূপকার হিসেবে আবির্ভূত হন। সেই থেকে সৎসঙ্গের যাত্রা শুরু হয়ে তা আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
মন্দিরের প্রার্থনালায়ঃ
চট্টগ্রামে সৎসঙ্গের যাত্রা শুরুঃ চট্টগ্রামের সর্বত্র সৎসঙ্গের যাত্রা শুরুর পূর্বে মুষ্টিমেয় কয়েকজন তৎকালীন প্রথিতযশা সামাজিক ব্যক্তিত্ব তথা ধর্মপ্রাণ সৎসঙ্গী ১৯৪৭খ্রীঃ এর দিকে বর্তমান বক্সিরহাটস্থ অনন্ত মলিকের দোকানে সৎসঙ্গ অধিবেশনে মিলিত হতেন। পরবর্তীতে গোসাইল ডাঙ্গায় ভূবন মোহন কানুনগোয়, জে.সি কানুনগোয় এর বাড়ীতেও অধিবেশন শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে সৎসঙ্গী উদ্যোক্তারা ১৯৫০-৫১ খ্রীঃ এর দিকে চট্টগ্রাম শহরে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। তখনকার দিনে মাত্র ৫০/- টাকা ভাড়ার বিনিময়ে ফিরিঙ্গী বাজার শিববাড়ীতে সৎসঙ্গের কার্যক্রম শুরু হলেও পরবর্তীতে ভাড়া বৃদ্ধি পেয়ে ৭৫/- টাকায় উন্নীত হয়। শুরুর দিকে অনেক বাধা-বিপত্তি ও প্রতিকূলতার ভিতর দিয়ে সৎসঙ্গের কার্যক্রম চালাতে হতো। ১৯৬৪-৬৫খ্রীঃ এর দিকে চট্টগ্রাম সৎসঙ্গে যুক্ত হন হিন্দু সমাজের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সর্বশ্রী চন্দ্রনাথ চক্রবর্ত্তী, যাদবনাথ, সুরেন্দ্রনাথ চক্রবর্ত্তী, ফণীন্দ্রকুমার নাথ, মনোরঞ্জন দে, সুখেন্দু বিকাশ চৌধুরী, মানিক লাল ঘোষ ও রনজিত চৌধুরী। পরবর্তীতে তাঁদের সাথে যোগ দেন অমূল্য রঞ্জন দাশ, মনমোহন চক্রবর্ত্তী। তাঁরা দেওয়ানজী পুকুর পাড়ে স্থানীয় সমাজ হিতৈষী ব্যক্তিত্ব শ্রী কৃষ্ণ গোপাল সেনের কাছ হতে তৎকালীন ১২০০০/- (বার হাজার) টাকায় তিন গন্ডা জায়গা ক্রয় করে টিনের ছাউনি, বাঁশের বেড়ার ঘরের ভিতর সৎসঙ্গ আশ্রম ফিরিঙ্গীবাজারস্থ শিব বাড়ী হতে স্থানান্তর করেন। পরে একতলা পাকা দালানের মাধ্যমে আশ্রমের মোটামুটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়ার চেষ্ঠা করা হয়। ১৯৭১ এর রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে সৎসঙ্গ আশ্রম সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করে দেওয়ার পরও পরবর্তীতে সৎসঙ্গীদের আপ্রাণ প্রচেষ্ঠায় ১৯৭২খ্রীঃ আশ্রমটি পুনঃনির্মাণ করা হয়। এসময় তৼকালীন সরকারের কাছ থেকে কিছু সরকারী অনুদানও পাওয়া সম্ভব হয়। ১৯৭৫খ্রীঃ এর দিকে কয়েক জনের প্রচেষ্ঠায় আরও দেড় গন্ডা জায়গা ক্রয় করা হয় ঐ আশ্রমের পাশেই। মোট জায়গার পরিমান দাঁড়ায় ৬ গন্ডা। এই জায়গার উপর নব কলেবরে আশ্রম প্রতিষ্ঠার বৃহৼ পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়। এমতাবস্থায় জেলা সৎসঙ্গের কর্মকর্তা রনজিত কুমার চৌধুরী, সুধীর বিকাশ দেব ও রাজগোপাল ভৌমিক (সঃপ্রঃঋঃ) বৃহৎ সৎসঙ্গ আশ্রম প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় উলেখ করে পাশাপাশি আরো জায়গা ক্রয়ের ব্যাপারে স্থানীয় ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করেন। এই পর্যায়ে স্থানীয় সমাজসেবী আশুতোষ চৌধুরী (লালু বাবু) যিনি তৼকালীন দেওয়ানজী পুকুরের মালিক তাঁর সাথে যোগাযোগ করে পুকুর সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা কৃষ্ণগোপাল সেন (কাঁলা চান বাবু) এর সহযোগিতায় মালিক আশুতোষ চৌধুরী বনাম এডভোকেট নির্মলেন্দু দত্তের নেতৃত্বে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে দীর্ঘ আইনগত সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে বহুদিনের পূঞ্জিভূত সমস্যার নিষ্পত্তি হয়। সমস্যা নিষ্পত্তিতে আশুতোষ চৌধুরী সাড়ে তিন গন্ডা জায়গা বিনামূল্যে তাঁর মহানুভবতার স্বীকৃতি স্বরূপ সৎসঙ্গ আশ্রমকে দান করেন। এই পর্যায়ে এসে প্রায় ১০ গন্ডা জায়গার উপর প্রকৌশলী শিবপ্রসাদ কামুদোর পরিকল্পনা মাফিক আশ্রম নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। সারাদেশে বর্তমানে প্রায় ১৫০ জন ঋত্ত্বিকের মধ্যে ২৪ জন ঋত্ত্বিক আছেন চট্টগ্রামে। বৃহত্তর চট্টগ্রামে শাখা আশ্রম মোট ৭৫টি। বৃহত্তর চট্টগ্রামে এক লক্ষেরও অধিক সৎসঙ্গ ী আছে। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট সৎসঙ্গীর সংখ্যা প্রায় ত্রিশ লাখ।
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি :প্রয়াত অধ্যক্ষ শ্রী চন্দ্রনাথ চক্রবর্ত্তী
বর্তমান সভাপতি :প্রফেসর শ্রী সুধীর বিকাশ দেব
সাধারণ সম্পাদক :শ্রী মদন দাশ
আশ্রম পরিচালনা পরিষদের বর্তমান সদস্যসংখ্যা :৩১ জন
শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন প্রার্থনার সময়কাল :সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তকাল
আশ্রমের প্রধান ঋত্ত্বিক দেবতা :সহ-প্রতি ঋত্ত্বিক শ্রী মনোরঞ্জন দে
প্রাত্যহিক পূজারী :শ্রী সমীরণ চক্রবর্ত্তী আশ্রমের বর্তমান কার্যক্রম
প্রাত্যহিক পূজা-অর্চনাঃ শ্রী শ্রী ঠাকুরের দৈনন্দিন সেবা পূজা শুরু হয় ভোরে বিনতি প্রার্থনার মাধ্যমে। সকালে বাল্যভোগ, ১১টায় পূজা ও মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রতিদিন যেকোন সময়ে আগ্রহী ভক্তদের দীক্ষা দেওয়া হয়। শ্রী শ্রী ঠাকুরের আর্বিভাব দিবস শুক্রবার সকালে বিশেষ পূজা ও সন্ধ্যায় সহস্রাধিক ভক্ত নর-নারী সমন্বয়ে বিশেষ প্রার্থনা ও সংগীতাঞ্জলি অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও প্রতিদিন সকাল ৯.০০টা থেকে রাত ১০.০০টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য আশ্রমের প্রধান ফটক খোলা থাকে। আশ্রমের নিরাপত্তার দায়িত্বে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা কর্মী নিয়োজিত আছেন। আশ্রমে প্রতিবৼসর ৩০শে ভাদ্র ঠাকুরের আর্বিভাব উৎসব এবং ১২ই মাঘ ঠাকুরের স্মরণ উৎসব উপলক্ষে ধর্মসভা, অষ্টপ্রহরব্যাপী নামকীর্ত্তনসহ তিনদিনব্যাপী নানাবিধ মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান উদ্যাপিত হয়ে থাকে।
সেবামূলক কার্যক্রমঃ মন্দিরের ২য় তলায় দাতব্য চিকিৼসালয়ে দুঃস্থ ও গরীব রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ঔষুধপত্র বিতরণ করা হয়। এই কার্যক্রমে প্রতি শুক্রবার একজন মেডিসিনের ডাক্তার এবং একজন দাঁতের ডাক্তার রোগীদের নিয়মিত সেবা দিয়ে থাকেন। এছাড়াও আশ্রমে বর্তমানে একজন গাইনী ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ মহিলা ডাক্তার নিয়মিত সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন।
চিকিৎসা সেবার সময়সূচীঃ সকাল ১০ টা থেকে ১.০০টা পর্যন্ত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সকাল ১০টা থেকে ১.০০টা পর্যন্ত গাইনী ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এবং বিকাল ৩.০০ টা হতে ৬.০০ টা পর্যন্ত দাঁতের ডাক্তার রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন। এছাড়াও গরীব, আর্থিকভাবে অসস্বচ্ছল মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের আশ্রমের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে। সনাতন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান, পারলৌকিক ক্রিয়া, বাৼসরিক ক্রিয়া, শ্রাদ্ধ, অন্নপ্রাশনের জন্য স্থানের ব্যবস্থাকরণসহ তৈজষপত্র সরবরাহ করা হয়।
সুবিশাল লাইব্রেরী ও মাসিক পত্রিকাঃ মন্দিরে রয়েছে সুবিশাল লাইব্রেরী যেখানে শ্রী শ্রী ঠাকুরের বাণী ও জীবনী সম্বলিত বই-পুস্তকাদি ছাড়াও বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মহাপুরুষগণের জীবনীর উপর গ্রন্থাদি রয়েছে। শুধুমাত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের নয়: অন্যান্য সম্প্রদায়েরও মূল্যবান অনেক ধর্মীয় গ্রন্থ, মনীষীদের উপর লেখা বইও পাওয়া যায় আশ্রমের লাইব্রেরীটিতে। এককথায় ধর্মীয় বিভিন্ন গ্রন্থে সমৃদ্ধ লাইব্রেরীটি। আশ্রমে বসে জ্ঞানপিপাসু যেকোন পাঠক বিনামূল্যে বইগুলো পড়তে পারেন। এছাড়াও আশ্রমের নীচের তলায় বিভিন্ন ধর্মীয় বই, পোষ্টার, ছবির স্টল ছাড়াও সুদৃশ্য বিশাল ডিসপ্লে সেন্টার রয়েছে। যেখানে বিভিন্ন মনীষী ও মহাপুরুষদের ছবি, পুস্তকাদি, বাণী, জীবনীগ্রন্থ, প্রার্থনার ক্যাসেট ও সিডি পাওয়া যায়। তাছাড়াও আশ্রমের রযেছে নিজস্ব সাংস্কৃতিক দল। তাঁদের পরিচালনায় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্ররে পূর্ণাঙ্গ বিনতি প্রার্থনার একটি সিডিও বের করা হয় যাতে ঠাকুরের পৌত্র শ্রী বিনায়ক চক্রবর্ত্তীর কণ্ঠের সুমধুর গীতও সন্নিবেশিত। আশ্রমটি থেকে বর্তমানে "পুরুষোত্তমদীপনা" নামক একটি মাসিক মুখপত্র (পত্রিকা) প্রকাশিত হয়।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাঃ শ্রী শ্রী ঠাকুরের ভাষায় "কর্মই ধর্ম" বাণীটির আলোকে গরীব, অস্বচ্ছল, মেধাবী ছাত্রদের জন্য ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ছাত্রাবাস তৈরিরও পরিকল্পনা আছে। এতে ছাত্রদের আবাসন, আহার ও পড়াশুনার ব্যবস্থা থাকবে। গরীব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের আর্থিক সহায়তাকল্পে বৃত্তি প্রদান প্রকল্প খুব শীঘ্রই চালূ হবে। দুঃস্থ ও স্বামী পরিত্যক্তা মহিলাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে হস্তশিল্প, বক-বাটিক, বুটিক ও সেলাই প্রশিক্ষণের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহনেরও পরিকল্পনা আছে। তথ্য ও প্রযুক্তির যুগে গরীব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে স্বল্প ব্যয়ে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহন করতে পারে সেজন্য একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনেরও চিন্তাভাবনা আছে।
আশ্রমে বর্তমানে বিরাজিত সমস্যাদিঃ আশ্রমটিতে উপরের তলায় উঠার সিঁড়ি সংকীর্ণ হওয়ায় বিভিন্ন উৼসবের সময় লোকজন উঠা-নামার ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হন। এছাড়া আশ্রমটিতে নিজস্ব জেনারেটরের ব্যবস্থা না থাকায় ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হয়।
সাহায্যের আবেদনঃ বর্ণিত কোটি কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন হয়েছে ভক্তদের অকৃপণ সহায়তায়। পাঁচতলা বিশিষ্ট চট্টগ্রাম সৎসঙ্গ মন্দিরের উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, দ্বিতীয় সিঁড়ি নির্মাণ, ছাত্রাবাসসহ অন্যান্য সেবাধর্মী কর্মযজ্ঞের ত্বরিত সুসম্পাদনকল্পে দেশ বিদেশের উদার ধার্মিক ব্যক্তিদের সহযোগিতা ও অনুদান কাম্য। ব্যাংক একাউন্ট নং সিটি ব্যাংক, খাতুনগঞ্জ শাখা, চট্টগ্রাম।। হিসাব নং-২১০১৩৬৯১
যোগাযোগঃ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রম, ২৭, দেওয়ানজী পুকুর লেইন, রহমতগঞ্জ, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



