ব্রহ্মবিদ্যা ঋষিবিদ্যা। ঋষি দূরদ্রষ্টা; অন্তর্দ্রষ্টা। ব্রহ্মকে জানার বিদ্যা ব্রহ্মবিদ্যা। ব্রহ্মবিদ্যা অনুশীলন করে হন ব্রহ্মজ্ঞ। ব্রহ্মবিদ্যা গুরুমুখী বিদ্যা। ব্রহ্মকে জানলে, জ্ঞাতা ব্রহ্ম হয়ে যান। "ব্রহ্মাবিদ ব্রহ্মৈব ভবতি"। হিমালয়ের সন্ন্যাসী শংকর পুরী কৃপা করে এসে ব্রহ্মবিদ্যা দিয়েছিলেন স্বামী জগদানন্দ পুরীকে। তিনি দিয়েছিলেন স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরীকে। পরম্পরাকে ব্রহ্মবিদ্যার ধারাপ্রবহমান। ব্রহ্মবিদ্যা অমৃতবিদ্যা। ব্রহ্মবিদ্যা পরাবিদ্যা। শ্বেতাশ্বতার উপনিষদের ঋষি বলেছিলেন, " বেদাহমেতং" জেনেছি তাহারে। একালের ঋষি স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ তাঁর আচরণে, বচনে, লিখনে বুঝিয়েছেন, তিনি ব্রহ্মকে জেনেছেন। তিনি জীবন্মুক্ত মহাপুরুষ। এমন মহাপুরুষের সান্নিধ্যে স্পর্শে, তাঁর থেকে জ্ঞান লাভে, তাঁর বিষয় চিন্তনে, আলাপে, তাঁকে কেন্দ্র করে উৎসবে অনুষ্ঠানে ব্রহ্মভাবনা অন্তরে জাগো। মহাপুরুষের মানস সংযুক্তিতে মহাপুরুত্ব জাগে। তিনি তাঁর নামের সার্থক প্রতিভূ। দ্বৈত নয়, অদ্বৈত। বেদান্ত ভাষ্য করে শঙ্কারাচার্য অদ্বৈতবাদ সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। বৈষ্ণব সাধক শ্রীল অমৃতলাল গোস্বামী যথার্থই তাঁর নামকরণ করেছিলেন। অদ্বৈত। নামকরণে কার্যকরণ। এও দৈবী করুণা। উপণিষদ বলেছে, ভূমৈব বিজিজ্ঞাসিতব্য, ভূমৈব সুখং, নাল্পে সুখমস্তি। ভূমাকে জান। ভূমাতে সুখ। অল্প সুখ নেই। বিশালতায়, অখন্ডতায়, পরিপূর্ণতায়, উদারতায়, মহাব্যাপ্তিতে, সীমাহীনতায়, প্রসারতায় সুখ। তৎবিপরীতে সুখ নেই। ব্রহ্মে মহানন্দ ব্রহ্মানন্দ। ব্রহ্মানন্দের কাছে সংসারানন্দ তুচ্ছ।ত্যাগে সুখ, ভোগে পূর্ণ সুখ নেই।
যেখানে চক্ষু বাক্য মন যেতে পারে না, তাকে না পেয়ে মন সহ বাক্য ফিরে আসে সেখানেই তার বসতি।
ন তত্র সূর্য ভাতি ন চন্দ্র তারকম্ ,
নেমা বিদুতি ভাতি কুতোহয়মগ্নি।
তমেব ভান্তং অনুভাতি সর্বং,
তস্য ভাসা সর্বমিদং বিভাতি।
যেখানে সূর্য, চন্দ্র, তারকা, বিদ্যুৎ, অগ্নি আলো দেয় না। তার আলোতে সবকিছু আলোকিত। তিনি উৎস কেন্দ্র। তিনি ব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্র, তিনিই দেহভাণ্ডের কেন্দ্র। তার শক্তিতে সবাই শক্তিমান। তিনি মহাশক্তির কেন্দ্রমূল। তাকে জানলে সত্যতঃ সব জানা যাবে। তিনি দেহ মধ্যে প্রাণ, আত্মারূপী ভগবান। তাই উপনিষদ বলেছে, "আত্মানং বিদ্ধি" আত্মাকে জান, তিনি প্রাণ।
প্রাণহি ভগবানীশ প্রাণ বিষ্ণু পিতামহঃ।
প্রাণেন ধার্যতে লোকাঃ সর্বং প্রাণময়ং জগৎ।
প্রাণই ভগবান, ঈশ্বর, বিষ্ণু, পিতামহ ব্রহ্মা।প্রাণই জগৎ ধারণ করে আছে। সবকিছুই প্রাণময়। আগে প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করি।তারপর পূজা করি। অর্থাৎ প্রাণকেই পূজা করি। তাকে জানার জন্য। তাকে জানলে জানার অন্ত হয়ে যায়।
এই জানার কৌশল শাস্ত্রভরা। অনিত্যতে শান্তি নেই, নিত্যতেই শান্তি। শান্তি চেয়ে অস্থির, অশান্ত হয়ে পড়ি। অস্থির অশান্ত হলে শান্তি আরো দূরে চলে যায়। অথচ বায়ুস্থিরে মনস্থির। দেহমধ্যস্থ উনপঞ্চাশ বায়ুকে স্থির করা গেলে মন পরিপূর্ণ স্থির হবে। সেই স্থৈর্যেই নিবাত নিস্কম্প দীপশিখার মোত অচঞ্চল স্থির প্রাণের অনভূতি হবে। তখন "অকুল শান্তি সেথায় বিপুল বিরতি"।
"মূলাধারাবধি পঞ্চচক্র ভেদি
আজ্ঞাচক্রে যদি থাকে নিরবধি
মিলিবে সে নিধি, যাবে ভবব্যাধি
ভাসিবে শান্তি সলিলে।"
সে অবস্থা যায় না গুরুকৃপা বিনে আর। মনে হচ্ছে তাকে জানা, বুঝা খুব কঠিন। আসলে তা মোটেই নয়।শ্রীকৃষ্ণ গীতায় অজুর্নকে বলেছেন, সহজং কর্ম কৌন্তেয়, তুমি সহজ কর্ম কর। সহজ, নিজের জন্মের সাথে যার জন্ম কার জন্ম? শ্বাসের জন্ম, শ্বাসকে ধরে কাজ কর। শ্বাস যে পথে যাতায়ত করে তাই মহাজনের পথ। মহাজনের যেন গতঃ স পন্থা। মহাজন যে পথে গমনাগমন করে তাই পথ। ধর্মস্য তত্ত্বং নিহিতং গুহায়া ধর্মের তত্ত্ব গুহায় নিহিত। কুটস্থ গুহা। সে গুহায় প্রবেশ করে ধর্মের তত্ত্ব, মর্ম জানতে হয়। এই ব্রহ্মবিদ্যা গুরুবহ্ম্রগম্য। গুরুর মুখে জানতে হয়; তদনুযায়ী অনুশীলন করতে হয়।এটি ঋষি শিল্প। স্বামী অদ্ধৈতানন্দ পুরী মহারাজ এই ব্রহ্মবিদ্যা ঋষিশিল্প নিজে মহাজীবনে সাধনা করে কৃপা করে লোকহিতার্থে ভাষায়ও প্রকাশ করেছেন। তাঁর শ্রী শ্রী দশ মহাবিদ্যা, শালগ্রাম তত্ত্ব, ধম্য প্রবেশিকা, গীতায় গুরুশিষ্য, পার্থিব শিব লিঙ্গ রহস্য, উপাসনা পদ্ধতি ব্রহ্মবিদ্যা ঋষিশিল্পের অমৃতবার্তায় পরিপূর্ণ। তিনি ঋষি, তিনি শিল্পী- তিনি ঋষি শিল্পী।
লেখাটি লেখক বাংলাদেশের স্বনামধন্য ধর্ম বিশারদ ঋষিবার্তায় লিখেছেন।
ন তত্র চর্ক্ষুগচ্ছতি ন বাক্ গচ্ছতি ন মনঃ।
যতো বাচো নির্বত্তন্তে অপ্রাপ্য মনসাসহ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



