বাংলাদেশের সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের আদি শিক্ষা অর্থাৎ টোল শিক্ষা প্রথা এখন সম্পূর্নরূপে বিলুপ্ত। হিন্দু সম্প্রদায়ের ছেলে -মেয়েরা এই শিক্ষা থেকে পুরোপুরিভাবে বঞ্চিত হওয়ার কারনেই হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্ম চর্চা বিঘ্নিত হচ্ছে ও সঠিক দিক নির্দেশনা হারাচ্ছে। এক্ষেত্রে সংস্কৃতি ভাষাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দানের জন্য সরকারের যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। এর জন্য সংস্কৃতি শিক্ষাবোর্ড গঠন করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে এই দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় মঠ মন্দিরে সংস্কৃত ভাষার শিক্ষা অর্থাৎ টোল প্রথা প্রচলিত ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মঠমন্দির সুকৌশলে ধ্বংস করে দেয়া হয়। এর পূর্বে অর্থাৎৼ ১৪৪৭ সালে ভারত-পাকিস্থান দুইভাগে বিভক্ত হওয়ার পর এদেশে প্রচুর মঠ মন্দির ছিল। যার নিদর্শন এখানো দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যমান রয়েছে। এসব মঠমন্দিরকে হিন্দু সম্প্রাদায়ের তৼকালীন শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং বর্তমান নেতৃবৃন্দের সংরক্ষণের ব্যাপারে জোড়ালো কোন ভূমিকা না নেয়ার কালের বিবর্তনে তা ধ্বংস হয়ে যায়। সাথে সাথে ধ্বংস হয়ে যায় সংস্কৃত শিক্ষা বা টোল প্রথা।
সারা বাংলাদেশে সংস্কৃত ও পালি বোর্ডের নিয়ন্ত্রানাধীন ২১৯টি টোল চুতষ্পাটি ও সংস্কৃত কলেজ রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছে ৫৮৮ জন। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ জন কর্মকর্তার মাসিক বেতন ১৪৯.৫০টাকা। এই বেতন দিয়ে বর্তমানে দৈনিক একবেলা চা-নাস্তা খাওয়া যাবে না।
বিগত সরকার গুলোর কাছে সংস্কৃত ভাষার শিক্ষকরা আলাদাভাবে মাদ্রাসা বোর্ডের ন্যায় সংস্কৃত শিক্ষা বোর্ড গঠনের প্রস্তাব দেওয়া সত্ত্বেও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণালয় সম্পূর্নরূপে উদাসীন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই সব প্রতিষ্ঠান গুলোর কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সঠিকভাবে এবঙ যথা সময়ে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়ায় এই প্রাচীন সংস্কৃত শিক্ষার প্রতি অনীহা, ঘৃণা ও ক্ষোভ সঞ্চারিত হচ্ছে। ফলে এ শিক্ষার জ্ঞান অর্জনে ছাত্র/ছাত্রীরা এগিয়ে আসছে না।
পূর্বে হিন্দু সম্প্রদায়ের ছাত্র/ছাত্রীরা অষ্টম শ্রেনী পাশ করার পর বিভিন্ন সংস্কৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাব্যতীর্থ, ব্যাকরণ তীর্থ, স্মৃতিতীর্থ, জ্যোতিষতীর্থ, পৌরহিততীর্থ, দর্শনতীর্থ , বেদান্ততীর্থ, সাংখ্যাতীর্থ ও পুরাণতীর্থ ইত্যাদি অধ্যয়নের জন্য ভিড় জমাতো।একটি বিষয়ে পড়া লেখার সুবিধারজন্য পণ্ডিতরা তাকে তিনভাগে ভাগে করেছে। একজন ছাত্র/ছাত্রী এক বিষয়ে তিন বছর পড়া লেখঅর পর সংস্কৃত পালি বোর্ড কর্তৃক পরীক্ষা পাশের স্বীকৃতি পেলে সনদ দেয়া হতো।বতৃমানেও এই রীতি প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি সংস্কৃতও পালি বোর্ড কর্তৃক উল্লেখ্য বিষয়ে অধ্যয়ন করতে হলে ছাত্র/ছাত্রীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা দরকার মাধ্যমিক পাশ অর্থাৎ এসএসসি পাশ। কিন্তু স্বাধীনতার পর চট্টগ্রাম সহ সারা বাংলাদেশে টোল ,চতুষ্পাটি ও সংস্কৃত কলেজে যে সমস্ত শিক্ষক কর্মরত রয়েছে তাদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ শিক্ষক ডিপ্লোমাধারী । ফলে এই শিক্ষার মানোন্নয়ন বর্তমান প্রেক্ষাপটে সন্তোষজনক নহে।
সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষকগণ বেতন পাচ্ছেন সহকারী শিক্ষক হিসেবে। ১৯৯৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরী কমিশণ সুপারিশ করেছেন, বর্তমানে কর্মরত শিক্ষকরা স্নাতক, সম্মান উপাধিকারী (তীর্থ বিশারদ) তাদের স্নাতক/সমমান/ বিএ, বিপিএড/ এম এ (সংস্কৃত ডিগ্রী ধারীদের) ক্ষেত্রে প্রদত্ত সিনিয়র শিক্ষক পদ, বেতন স্কেল ও সুবিধাবাদী দেয়া যেতে পারে। তবে সরকার কামিল ডিগ্রীধারীদের সিনিয়র শিক্ষক পদ দিলেও তীর্থ/বিশারদ ডিগ্রীধারীদের ক্ষেত্রে তা শিথিল করে রাখে ।
কুদারাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্টে ও "সংস্কৃত ও টোল শিক্ষা" শিরোনামে ধৃমীয় শিক্ষার বিষয়গুলোর সাথে বাংলা, অংক,সাধারণ বিজ্ঞান, ও ইংরেজী এ চারটি বিষয় যোগ করে সনাতন পদ্ধতির সংস্কৃত ও টোল শিক্ষা সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়া সত্ত্বেও অদ্যাবধি পর্যন্ত এই শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে সরকার কোন প্রদক্ষেপ নেয় নি। বর্তমানে এই বোর্ডের অধীনে যে কয়টি টোল চতুষ্পাটি শিক্ষা ও সংস্কৃত কলেজ রয়েছে সেগুলোতে কর্মরত শিক্ষক /কর্মচারিরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অবমূল্যায়নের কারণে মানবেতর জীবন যাপন করছে।এই প্রাচীন ভাষাগুলোকে বাংলাদেশে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারী পৃষ্ঠপোসকতার সাথে সাথে হিন্দু ধর্মীয় শীর্ষ নেতাদের ও আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



