বিশ্বচরাচরে আমাদের পদাতিক জিজ্ঞাসারা যখন পৌঁছায় পূর্ণতায়, তখন বাবা এসে হাজির হয় সামনে। সব উত্তর নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে তিনি। সর্বরোগের ঔষধ নিয়ে। যেন ঈশ্বরের প্রতিলিপি অলক্ষ্যে। কোন এক বিজন রাতে, শোক-তাপে ছিন্নভিন্ন আমার অস্তিত্ব যেন বিশ্বাস করতে চায় না তার আবিষ্কারের মহাপৃথিবীটাকে। কিন্তু আমাদের চিৎকার আর মেকি পৃথিবীটা ঠিক কাঁপতে থাকে অন্য এক নতুনকে জড়িয়ে। তখন হয়তো নিজের অজান্তেই লুটিয়ে পড়ি নিজস্ব অস্তিত্বকে জলাঞ্জলি দিয়ে। যেন নিস্পলক তাকিয়ে থাকা, কিছু বোবা আর্তনাদ। যেহেতু আকাশের ঠিকানা আমাদের জানা নাই। যেহেতু বৃষ্টির ফাঁকে ফাঁকে হেটে চলবার কথা ছিল আমাদের। যেহেতু তীব্র কণ্ঠে তাঁর অন্য আরেক বিস্ময়! আমাদের করে দিতে স্থান,চিরকালের জন্য তিনি কঠিন ও কোমলতার মিশ্রণ। সব বাবা একই রকম। সন্তানের জন্য করতে পারেন না, এমন কোন কাজ নেই তার পক্ষে।
আমার বাবা আমাকে যা দিয়েছেন, তা গুনতে গুনতে আমি ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে পড়ি ঝরা পাতার মতো। আমার জন্য তিনি সূচের চেয়ে সূক্ষ্ম কোন যন্ত্র, যা হৃদয় মেরামতে ব্যবহার হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। যত গভীরভাবে তা চিরে যাক না কেন, তিনি ঠিকঠাক করে দিতে পারেন।তাঁর মধ্যে এমন এক যাদু আছে, যা প্রশান্তি নিয়ে আসে সাত সমুদ্র তের নদীর ওপার থেকে।
আমার বাবাকে আমি, সব সৌভাগ্যের উৎস বলেই মানি। যেদিকেই তাকাই সব জায়গার তার আশীর্বাদ দরকার পড়বেই। তিনি আর তাঁর কোমল জায়নামাজ কত পবিত্র, তখনই বোঝা যায়। আমার কোন ব্যর্থতাকেই তিনি সহ্য করতে পারেন না। এই একটিই তার অক্ষমতা! তিনি ছড়িয়ে থাকেন বট বৃক্ষের মতো। সে ছায়ার নীচে অনন্তকাল পার করে দিতে থাকে না কোন সংশয়।
কিন্তু কারণে, অকারণে কত বেফাঁস কথা বলে ফেলি বাবার বিরুদ্ধে। তখন ভুলে যাই এই যে আমার রক্ত-মাংসের শরীর, সবটাই তার ভালবাসা দিয়ে গড়া।এ ব্যাপারে আবেগশূন্য হয়ে যাই আমি! তখন নিজেকে খুব স্বার্থপর মনে হয়। ঘৃণ্য পশু মনে হয় নিজেকে। অথচ এ অস্তিত্বের সব আহ্বান ছিন্ন করে দিয়ে শুধু আমার বাবার সন্তান হিশেবে বেঁচে থাকাটাই আমার জন্য যথেষ্ট। খুব নিরাপদ। খুব সুখের।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৯ সকাল ৮:১২