somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শূন্যতার সাথে বসবাস (অণুগল্প)

২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মাইকেল দেখছে তার নর্তকীকে। না দেখে উপায় নাই। নর্তকী এমনভাবে নাচছে, যেন সৌরজগৎ কাঁপছে ত্রাসে। বুকের ভেতর ঢিব ঢিব করে, চোখে নেশা লাগে, ভয় লাগে। তবুও মাইকেল তাকে দেখছে অপলক। নর্তকীর কোমড়ের দোলায় যেন ভূমিকম্প হচ্ছে। তার হাসিতে যেন মাইকেলের বুকে বাঁশি বেজে চলছে। তার বিচিত্র ইশারায় মন দিশাহারা হয়। মাইকেল তাকে দেখছে একা ঘরে। সংগোপনে। বাইরে চলছে কুকুরের কড়া পাহারা। নর্তকীরও নেই কোন তাড়া। রাত এখনো যুবতী। কত কি হবে আজ রাতে! নর্তকীর পিঠে হাত বুলায় মাইকেল। গানের তালে তালে সে মাতাল আজ। মাঝে মাঝে ঠোঁটটাকে বাঁকিয়ে শিস দিচ্ছে এলোমেলোভাবে। হঠাৎ মাইকেলের ঘুম ভেঙে গেল। সে স্বপ্ন দেখছিল। ঘুম থেকে উঠে তার খুব ক্লান্ত লাগছে। গতকাল সে একটা নির্জন জায়গার খোঁজে অনেক দূর হেঁটে এখানে একটা বট গাছে নীচে এসে বসে এবং বেখেয়ালে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ে। চারিদিক জনমানব শূন্য। মাইকেল বারবার মনে করার চেষ্টা করে স্বপ্নে দেখা নর্তকীর চেহারা। মনে পড়েছে তার। মেয়েটার নাম মাধুরী। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন তার সহপাঠী ছিল। মাইকেল ছিল পুরো দস্তুর একজন কবি। সে লেখাপড়া করতো খুব সামান্য। মাধুরী তাকে ভালবাসতো। তার লেখাপড়ার ব্যাপারে মাধুরী অনেক হেল্প করতো। কিন্তু মাইকেলের কোন কিছু নিয়েই অত মাথা ব্যথা ছিল না। তাই তাদের সম্পর্কটা খুব বেশি এগোয় নি। মাইকেল ক্লাস না করে বিভিন্নভাবে সময় নষ্ট করতো। এবং একসময় লেখাপড়া বাদ দিয়ে নিরুদ্দেশ যাত্রা শুরু করে। বাহ্যিকভাবে দেখলে তাকে এখন পাগল মনে হয়। কেউ কেউ দয়া করে তাকে কিছু খেতে দেয়। না দিলেও ক্ষতি নেই। সে এখন ক্ষুধাকে দমন করতে শিখে গেছে। ৩/৪ দিন না খেয়ে থাকলেও অতটা সমস্যা হয় না তার। তার কিছু গোপন জায়গা আছে সেখানে গিয়ে দিনের পর দিন ধ্যান করে মাইকেল। আজ তার অভুক্ত থাকার ৩য় দিন চলে। এ অবস্থা নিয়ে সে কবিতা লিখবে। লেখাটা থাকবে তার মাথায়। তার লেখার জন্য আর কোন কাগজ কলমের আর দরকার হয় না।

হে নর্তকী মম, তুমি মোর প্রাণসম
তুমি মধু-মক্ষিকাসম চিরতার রস
তোমায় করলে পান, হয় অবসান
মোর আত্মার সকল কু-রিপুর টান।

দেখতে তোমার নাচ সদা চোখ বুজি
তোমার রসের নদীর উৎস খুঁজি
যখন দেখি তোমার নদীতে প্লাবন
বুকে আসে অবাধ্য সিংহের সাহস।

মাইকেল আধো ঘুমে মগ্ন হয়ে কবিতা রচনা করছিল। কোথা থেকে কখন একটা রাজহাঁস তার পাশে এসে বসেছে, সে দেখেনি। রাজহাঁসটাকে খুঁজতে এক বৃদ্ধা সেখানে হাজির হয়েছে। বৃদ্ধা তার চুল-দাড়ির জট দখে তাকে সিদ্ধপুরুষ ভাবে। সিজদায় লুটিয়ে পড়ে বৃদ্ধা। মাইকেল বৃদ্ধার ঘন নিশ্বাস আর কান্নার আওয়াজ শুনে কিছুটা বিরক্ত হয়ে ধ্যান ভঙ্গ করে। চোখ খুলে দেখে এক বৃদ্ধা তাকে সিজদা করছে।

তুমি মাথা তোল হে অপ্রিয় সত্যবাদিনী
তোমার জন্য খোলা মোর সদর দরজাখানি
তুমি কি চাও এই অক্ষম পাগলের কাছে
এই মন মস্তিষ্ক চায় উত্তর হে মোর অভিমানী।

বৃদ্ধা উঠে দাঁড়ায় আর তার রাজহাঁসটাকে তাকে দিয়ে দেয় এবং বলে, "আপনি আমার এই সামান্য উপহার গ্রহণ করুন, এই আমার চাওয়া।"

বৃদ্ধা চলে যেতে থাকলে মাইকেল তাকে পেছন থেকে ডাক দেয়, "মাধুরী........."



সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:২৮
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×