somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি চাইনি!!! বোধ করি বিধাতা চেয়েছে

৩০ শে মে, ২০০৭ বিকাল ৪:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শেষ সম্বলটুকু আকঁড়ে ধরে সেটাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল আমার মনে, তাছাড়া বাকীদিনগুলো ত চলতে হবে। আগামী মাস পর্যন্ত চলতে হবে এই শেষ কিছু অর্থ দিয়ে। তাই কোন রকম খেয়ে বেঁচে ছিলাম। ভেবেছিলাম এভাবেই চালিয়ে দেব মাসের শেষটুকু। কিন্তু বিধাতা বোধ করি আমাকে জ্বলন্ত আগুনে না ফেলে শেষটা দেখালেন না। আমার কান্না বোধ করি এই পৃথিবীর কাউরো কানে পৌছায়নি, এতটাই নীরবে কেঁদেছিলাম। অনেক ক্ষত হয়েছিল, যার মলমটা বোধ হয় আজো আবিস্কার হয়নি। আচ্ছা আমার ওই অর্থগুলো কি সঠিক পথের কামাই ছিলনা? না এটা হতে পারে না কারন কামলা খাটা অর্থ নিশ্চয় হারাম হতে পারে না। সে যাই হোক বিধাতা ভাল জানেন, এবং বোধ কনি উনি সবার জন্য ভালটাই ঠিক করে রেখেছেন।

গভীর রাতে বন্ধুর ফোন। তার মামা আসছে বাংলাদেশ থেকে এয়ারপোর্টে রিসিভ করা থেকে বাসা পর্যন্ত পৌছে দেবার দ্বায়িত্ব আমার উপরে। তাকে বললাম সম্ভব না আমার কাছে চার আনা পয়সাও নাই যে আমি ঘর থেকে বেরুব। সে বলে তুই শুধু যাবি বাকি সব খরচ উনারা দেবে। কিছুটা ভরসা পেয়ে সকাল ৫টা ঘুম থেকে উঠে গেলাম এয়ারপোর্টে, তার মামা কে আগে দেখার সুবাদে এয়ারপোর্টে পেতে তেমন কোন সমস্যা হলনা। মামার সাথে দেখি উনার বউ আর ১০ বছরের একটা ছোট হাতি আই মিন মামার ছেলে। ছেলেটাকে দেখেই কেমন জানি সন্দেহ হল ওর কি একটা সিটে জায়গা হয়েছিল? যে যাকগে এর পর কি হল তাই বলি। মামা বেশ আগ্রহ নিয়ে বল্লেন "তুমার মামীরে লইয়া আইলাম তা একটা টেসকি নিলে কেমন হয়, মনে কর দেখতে দেখতে গেল আর কি' আমি কিছু চিন্তা না করেই বল্লাম জী মামা ঠিক কথা বলেছেন। উনি পকেট থেকে মোবাইল বের করে কারে যেন একটা ফোন দিলেন, আধা ঘন্টা পর এক লোক একখান টেসকি লইয়া আইল, টেসকিওলা আবার মামার বন্ধু। মাথায় আবার চিন্তা এই ভোটকা পোলাটা কেমনে বইব। পেছনের তিনজনের সিটে বইতে পারে না সবাই পোলা বইলে বাপে দরজা ভাইঙ্গা পইরা যায় না হয় মায়ে কয় 'বাবা তুমি একটু আগাইয়া বইবানি' পোলায় কয় 'পারিনা ত পাও লাইগা যায়'। কি আর করা হাতিটারে সামনের সিটে দিয়া আমি পিছনে গিয়া বইলাম।

গাড়ী শহরের ভিতরে ঢুকতে না ঢুকতে পোলা কয় ' আব্বায় আমার খিদা লাগছে' মাথায় আবার চিন্তা এই পোলা প্লেনের ভিতরে কয়জনের খাবার একাই সাবাড় করছে। যাউগ্গা আমার কি। মামা কয় 'আচ্ছা সামনে একটা খাবার দোকান আছে না?' আমি কইলাম জী। ড্রাইভারটাও বদ গাড়ীটা এক্কেরে দোকানের সামনে পার্ক করছে। সবাই দেহি টপাটপ নামল খাইতে। আমি ও নামলাম কারন সকালের নাস্তাটা এখনও করা হয়নাই। এই দোকানের বার্গারটা খুবই মজার। পোলাটার চাহনি দেইখা মনে হইল পুরা দোকানটা খাইয়া ফেলাইব। যাক বেশি না তিনটা বার্গার আর এক গামলা চিপসের অর্ডার দিল। তাইতো কই আমাগো দেশ এত গরীবি কেন? মামী দেখি আবার লজ্জা পায় খাইতে, লজ্জা পাইয়া উনি দেখলাম চিকেন ফ্রাই খাইতাছে টপাটপ। এগো খানা দেইখা আমার কইলজাটা এক্কেরে শুকাইয়া গেল, খালি এক গ্লাস পানি খাইয়া আমি আমার কইলজায় আবার পানি দিলাম। যাই হোক বিল দেবার পালা, মামা দেখি আমতা আমতা করতাছে তাই একটু ভদ্রতা করতে গিয়া কইলাম আমি দেই মামা, মামা কয় তুমি বিল দিবা!!! লগে লগে মামী কয় আচ্ছা ওই না হয় দিয়া দেক এত কইরা যখন কইতাছে, আহা এ কি আমি আবার এত কইরা কখন কইলাম। মামা দেখি আমার দিকে চাইয়া আস্তে কইরা মানিব্যাগটা আবার রাইখা দিল। হায় আল্লা একি !!! শেষে দোকানদার ও আমার দিকে চাইয়া একটা হাসি দিয়া কয় 'বিল প্লিজ' মাথার উপরে আমার বাজ আইসা পড়ল, শেষ সম্বলটুকুর প্রায় অর্ধেকটাই নাই। চোখের কোনে একফোটা পানি আইসা পড়লেও তাও কাউরে বুঝতে দিলাম না।

আবার শুরু হইল যাএা কিছুদুর যাইতে না যাইতে পোলা কয় 'আব্বায় আমি ভাত খামু' তখন আমার রাগে শরীরটা ১০০/১০০ তে জ্বলার শুরু করল। মনে হইল পোলাঠারে দুই গালে দুইটা দিয়া চুপ করাইয়া রাখি। লগে লগে মামী কয় 'আমার পোলা আবার বেশিক্ষন খিদা সহ্য করতে পারেনা' আগত্যা এক বিরানী দোকানের সামনে গাড়ী থামল। সবাই নামল। মামায় সবার লাইগা বিরানীর অর্ডার দিলেন। পোলায় কয় আমি কোপ্তা খামু। শালারে মনে হইতাছিল ঠাটায়া একটা থাপ্পড় আর একটা লাথি মাইরা পোলারে চুপ করাইয়া দেই। কিন্তু কি আর করা তা বোধ করি পারুম না। মামী দেখি লজ্জা পাইয়া পাইয়া দুইবার বিরানী লইল। আজব!!! খাওন দাওন শেষ, এবার বিল দেওনের পালা, মনটা আমার দুরু দুরু করতাছে, আতকা মামায় ডাক দিল , কয় তোমার কাছে কি কিছু হইব, আসলে সব মালপানি তোমার মামীর কাছে রাখা ত। আমি রাগে দু:খে কইলাম কত লাগবে, আমারে কয় পুরাটা দিয়া দাও। নিজেরে কতক্ষন গালি দিলাম কেন যে আমি আইলাম কেন যে আমি এই রকম একটা বাঁশ খাইলাম। যতক্ষনে বিল দিলাম ততক্ষনে আমার শেষ সম্বলের সবটুকু প্রায়ই শেষ।

অতপর তারা নিজেদের গন্তব্য স্থলে পৌঁছাইলো। বদের বাচ্ছা পোলাঠা কয় রাইতে আমরা কি খামু আব্বায়? তখন আমার মনে হইছিল বান্দরের কান দুইঠা ধইরা ইচ্ছামত যদি আছড়াইতে পারতাম। শেষ মেষ আবারো মামায় কইল এখানে কি কিছু পাওয়া যাইব? আমি অনেকটা রাগে কইলাম আমি জানি না, পরে আপনে দেইখা লইয়েন। বাড়ি ফিরা আমারে কয় ঠিক আছে তুমি আজ অনেক কষ্ট করলা এখন তাইলে তুমি যাও। আমি ত অবাক আমার থেকে খসায়া আমারে কয় যাও। আর আমার মালপানিটাও দিতাছে না। আজব। পরে বুঝলাম এই জালিয়াত কিছুই দিবনা। কি আর করা বাহির হইয়া আসলাম তখন পকেটে আর মাএ যা কিছু ছিল তা দিয়ে কোন কিছুই করার মত নয়। আকাশের দিকে তাকালাম, কেমন জানি আকাশটা বড্ড বিচিএ। গত ২৩ তারিখে এই কাহীনি হইছে আজ অবদি আমার কাছে পানি কিনার পয়সাটা নাই, রাতে কোন রকম পাউরুটি খাইয়া ঘুমাই আর দুপুরে আধা পোর্শান চিপস খাইয়া তাও পরিচিত এক দোকানীর কাছ থেকে। আর সকালের খাওয়াটা আবারো পাউরুটি। মনে হয় ডেট ওভার হইয়া গেছে।

১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×