somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুধু মাত্র বাবার জন্য...

১১ ই এপ্রিল, ২০০৯ রাত ৮:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাবাকে ইদানিং যতই দেখি ততই অবাক হই। দিন দিন বাবা কেমন যেন অন্যরকম এক বাবা হয়ে যাচ্ছেন। অনেকটা গ্রামীনফোনের বিল পের ঐ এ্যাডটি বাবার মত। মানে, আগের মত সেই রাগী, রাশভারী ভাবটা একদমই নেই। তার বদলে কেমন যেন নরম হয়ে গেছেন! আজ প্রায় চার বছর হল, বাবা রিটায়ার্ড করেছেন। বাসা থেকে তেমন একটা বের হন না । সারাদিন হয় খবরের কাগজ পড়ছেন অথবা টিভিতে নিউজ দেখছেন। বাবার যে অনেক বন্ধু বান্ধাব আছে তাওতো মনে হয়না। কারও সাথে যে কিছুটা আড্ডা দিয়ে সময় কাটাচ্ছেন তাও না। মা তো সারাদিন তার নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। আর আমার সাথে বাবার দেখা হয় ছুটির দিন ছাড়া মাত্র দুবার। সকালে অফিসে যাবার সময় একবার আর রাতে খাবার টেবিলে আরেকবার। এবং সবচেয়ে বেশি অবাক হই যখন দেখি সবাই রাতের খাবার খেয়ে নিলেও বাবা, আমার জন্য বসে আছেন.. এক সাথে খাবেন বলে! খুব লজ্জা লাগে আমার। মনে মনে বলি, আমি কি সত্যই বড় হয়ে গেছি?

আমি জব করছি প্রায় চার বছর। আগে কখনও বাবাকে এতটা নিবিড় করে দেখিনি বা দেখার চেষ্টাও হয়ত করিনি। অথবা, দেখলেও হয়তো উনাকে বুঝবার মতন বয়স, মন মানসিকতাও আমার হয়ে উঠেনি। আর এখন বাবাকে দেখলে অবাক হই। এই তো সেদিনও বাবার কাছে থেকে লেকচার ফটোকপি করব বলে টাকা চেয়ে নিতাম। আবার ভার্সিটিতে ক্লাস না থাকলেও বলতাম "না আমার ক্লাস আছে। টাকা লাগবে টাকা দেন!!"। আর এখন আমি... বাবাকে দেবার চেষ্টা করি। হাঃ হাঃ । তবে বাবাকে সরাসরি টাকা দিতে আমার কেমন জানি লাগে। খুবই লজ্জা লাগে। তাই প্রতিমাসে বেতন পেয়ে লুকিয়ে বাবার চশমার নিচে টাকা রাখি। আমি জানি আমার এই টাকা বাবার জন্য হয়ত তেমন কোন ব্যাপার না হয়ত টাকাটা নাহলেও কিছু যায় আসে না। তারপরও... আমার অনেক ভাললাগে, অন্যরকম ভাললাগে। বাবা হয়তা মনে মনে হাসেন। ভাবেন ছেলে বড় হয়েছে এখন উল্টা আমাকে হাত খরচ দিচ্ছে....। বাবা হয়ত মাকেউ দেখান আর দুজন মিলে হাসাহাসি করেন। ইদানিং মা দ্বিবসে মার জন্য কিছু কিনে আনলে বাবা বলেন "ও মা দ্বিবস উৎযাপন হচ্ছে .. বুঝি...মা.ই সব কিছু বাবা আর কিছু না? মা দ্বিবসের মত বাবা দ্বিবসও থাকা উচিৎ!!!"... আমি হাসি... বাবাকে এতটা অভিমানিতো আগে কখনও দেখিনি?

যেদিন আমার জীবনের প্রথম বৃত্তীর খবরটা বাবাকে জানালাম ... আমার স্পষ্ট মনে আছে সেদিন আমি বাবার দুচোখ ছল ছল করতে দেখেছিলাম। বাবার চেহারায় এক অন্যরকম সুখানুভূতির আলো ঠিকরে বের হচ্ছিল। বাবা তখন কেবলমাত্র অফিস থেকে বাসায় ফিরেছেন। ঠিক ঐ সময়ে আমিও বাড়িতে এসেছি মাকে খবরটা দেব বলে। বাবা খবরটা শুনে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে রাখলেন অনেকখন। এমনিতেও বাবা আমাকে অনেক ভালবাসতেন। কিন্তু ঐ দিনের আদরের কথা আমার আজীবন মনে থাকবে। আমি কেঁদে ফেললাম। কেন যেন কান্না পেল সেদিন আমি জানিনা। আমিও বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাদলাম। ব্যাস... ঐ দিনের পর থেকে আমাকে আর কোন দিন পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

আমি জানি হয়ত আমিও একদিন আমার বাবার মত বাবা হব। আমারও সন্তান-সন্ততি হবে। ওদের সফল্যে আমার চোখ ভিজে উঠবে। ওদের বিফলে রাগ হবে, কষ্ট হবে। হয়ত আর দশটা পরিবারের মত আমিও একদিন আমার বাবার মত বাবা হয়ে ঘরে বসে বসে নিউজ আর খবরের কাগজ নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখার নিরন্তন চেষ্টা করে যাব। বিনোদন বলতে তো এই। শুনেছি কাজ পাগল জাপানীজ বৃদ্ধরা নাকি বাড়ির সামনের রাস্তা প্রতিদিন ধুয়ে মুছে সাফ করে। কি করবে... কাজ নাই তাই... রাস্তা ধোয়, বাগান পরিষ্কার করে। জানিনা এদেশে এমন কিছু হবে কিনা কিন্তু যদি এমন হয়ও তাহলে ক্ষতিই বা কি? নিঃসঙ্গতা কাটাতে এর চেয়ে ভাল কিছু আর কি বা হতে পারে।

আমার বাবার মত হাজারও বাবা আছেন যারা পেপার পড়ে, খবর দেখে, নামায-কালাম পড়ে, বাড়ির বাজার সদাই করে সময় কাটাচ্ছেন। জীবনের হয়ত বড় একটা সময় তারা আমাদের জন্য অনেক ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। নিজের সুখ আহলাদ বাদ দিয়ে শুধুমাত্র আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে দিনের পর দিন অমানুষিক পরিশ্রম করেছেন। আর এখন তাদের অফুরন্ত অবসর। বসে আছেন সময় কাটান। হয়ত তীর্থের কাকের মত বসে থাকেন ছেলে বা মেয়ের সাথে একটু কথা বলবেন বলে। আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের দেশের কত বীর, কত যোদ্ধাদের শত কোটি সম্মান জানাই, সেলুট দেই। কিন্তু আমাদের এই যোদ্ধাদের আমরা কতবার সম্মান জানাই? প্রতিদিন কত বার একটু ভাল করে ঐ মুখটাকে দেখি? দিনে কত বার 'বাবা' বলে আদর করে ডাকি? কয়বার ঐ মুখটার দিকে তাকিয়ে বলি বাবা তোমায় আমি অনেক অনেক ভালবাসি....।

(শেষ)
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×