somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"ওসমানীর পাণ্ডুলিপি"

০২ রা এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৫:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মরহুম আতাউল গণি ওসমানী। সিলেটের এই বীর সন্তান মুক্তিযুদ্ধে যে অসামান্য অবদান রেখেছেন তা গোটা জাতির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। আমৃত্যু সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা ওসমানী ছিলেন বঙ্গভঙ্গ থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী। সামরিক কিংবা ব্যক্তিজীবনে তাঁর স্পষ্টবাদিতার অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়। সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এক সময় রাজনীতিতে জড়ালেও নীতিবোধ এবং স্পষ্টবাদিতার কারণে বেশিদূর এগোতে পারেননি। আমাদের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের অনেক জানা-অজানা ইতিহাসের নায়ক ছিলেন ওসমানী। তিনি জীবিত থাকাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অনেক প্রশ্নের উত্তরে নীরব থেকেছেন। বলতেন, তিনি বই লিখছেন যাতে সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। জীবদ্দশায় সাংবাদিকদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অনেক প্রশ্নের উত্তরই এড়িয়ে যেতেন। এসব প্রশ্নের ক্ষেত্রে প্রায়ই তাঁর জবাব ছিল, লিখিত পাণ্ডুলিপি বই আকারে প্রকাশ হলেই সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। ওসমানীর অন্তিম ইচ্ছে ছিল পাণ্ডুলিপিটি পাঁচ খণ্ডে বই আকারে প্রকাশ করবেন। এর মধ্যে দুটো খণ্ডে থাকবে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসের ঘটনাবলি। ওসমানীর ঘনিষ্ঠ সানি্নধ্যে ছিলেন এমন অনেকে বলেছেন, ওসমানী ঢাকায় এবং সিলেটে তাঁর বাড়িতে অবসর পেলেই পাণ্ডুলিপি লেখার কাজে বসে যেতেন। একজন সংবাদকর্মী হিসেবে খোঁজ নিয়ে যতটুকু জানতে পেরেছি তা হচ্ছে বঙ্গভঙ্গ থেকে শুরু করে মহান ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে শাসন প্রক্রিয়া ও ক্ষমতা দখলসহ অনেক ঘটনা সংবলিত লেখার পাণ্ডুলিপিটি তাঁর মৃত্যুর পরপরই রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে যায়। বিগত আড়াই দশকে সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো পর্যায়েই এই অমূল্য দলিলটি খুঁজে বের করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। জেনারেল ওসমানীর সানি্নধ্যে দীর্ঘদিন ছিলেন সিলেটের আইনজীবী দেবতোষ চৌধুরী। তাঁর কাছ থেকে জানা যায়, ইংরেজি ভাষায় রচিত এ পাণ্ডুলিপিটি ওসমানী তিন-চার বছরে তৈরি করেছিলেন। তিনি জানান, ওসমানী ডিকটেশন দিতেন এবং গোলক বাবু ও সোহেল চৌধুরী নামে তাঁর দুজন সহকারী তা লিখতেন। পরে তা টাইপ করা হতো। ১৯৮৪ সালে ওসমানী চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। দেবতোষ চৌধুরী সে সময় ওসমানীর সফরসঙ্গী ছিলেন। তিনি জানান, মৃত্যুর মাত্র কয়েকদিন আগে ওসমানী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পাণ্ডুলিপিটি প্রকাশ করবেন। কিন্তু সে সুযোগ তিনি পাননি। অ্যাডভোকেট দেবতোষ চৌধুরীর কাছ থেকে জানা যায়, ওসমানী যখন মারা যান তখন এই পাণ্ডুলিপিটি সিলেটের নাইওরপুলের ওসমানীর বাসভবন নূর মঞ্জিলে রক্ষিত ছিল। ওসমানীর বিশ্বস্ত কর্মচারী সিরাজ মিয়া তখন নূর মঞ্জিলের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। ওসমানীর মৃত্যু সংবাদ সিলেটে পেঁৗছালে জালালাবাদ সেনানিবাসের তৎকালীন অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার গোলাম রব্বানী এবং অন্য সংস্থার কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে ওসমানীর বাসভবন নূর মঞ্জিল পুলিশ হেফাজতে রেখে তাঁর শয়নকক্ষ ও স্টোর কক্ষটি তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। পরে ওসমানীকে দাফনের পর 'ওসমানী ট্রাস্ট'-এর সদস্যরা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের নির্দেশে বিশেষ বিমানে সিলেট আসেন এবং নূর মঞ্জিলে এক বৈঠকে মিলিত হন। ওই বৈঠকে সিলেটের কর্নেল (অব) এ আর চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট এ টি এম দলিল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সম্মানিত ট্রাস্টিবৃন্দ ট্রাস্টের দলিল মোতাবেক সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির দায়দায়িত্ব গ্রহণপূর্বক ওসমানীর সব সম্পত্তি আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মচারী সিরাজ মিয়ার কাছ থেকে বুঝে নেন। পরে সব অস্থাবর সম্পত্তি নূর মঞ্জিলে বিশেষ ব্যবস্থায় রেখে কেবল ওসমানীর পাণ্ডুলিপি, এ সংক্রান্ত বই ও কাগজপত্র ৮টি ট্রাংকে বোঝাই করে ওইদিনই অপরাহ্নে বিশেষ বিমানে ঢাকা ফিরে যান। এর পর থেকে এ পাণ্ডুলিপির আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে অ্যাডভোকেট দেবতোষ চৌধুরী ১৯৯১ সালের ৫ মে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের কাছে এক লিখিত আবেদনে পাণ্ডুলিপিটি উদ্ধারের আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু এ পর্যন্ত পাণ্ডুলিপিটি উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
মরহুম ওসমানীর এই পাণ্ডুলিপিটি উদ্ধার করা গেলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা ঘটনা হয়তো জানা যেত। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক বিতর্কেরও হয়তো অবসান হতো। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আজ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি কোনো সরকার। কিন্তু আমাদের জাতীয় স্বার্থেই ইতিহাসের এই অমূল্য দলিলটি উদ্ধার করা দরকার। ওসমানীর সেই পাণ্ডুলিপিটি আদৌ উদ্ধার করা সম্ভব হবে কি না কে জানে।
সূত্র:আহমেদ নূর,কালের কন্ঠ,১৬-২-২০১০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয় দিবসের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানিয়ে । সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ২০২৫, ১৬ই ডিসেম্বর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৯




দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রানের এক সাগর রক্তের বিনিময়। দুই লক্ষাধিক মা বোনের সম্ভ্রম হারানো। লক্ষ শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত‍্যু। এক কোটি মানুষের বাস্তুহারা জিবন। লক্ষ কোটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×