somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈশ্বরের স্বর্গবাস

২৩ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ১০:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্বর্গ ও নরক ভ্রমণ করবেন ঈশ্বর, প্রথম ঠিক হলো স্বর্গে যাবেন;
শুভ দিনক্ষণ দেখে জিব্রাইলকে নিয়ে একদিন রওনা হলেন।

‘এ-দিনটির কথা ওরা জানলে হৃদয় খোদাই করে লিখে রাখতো’—
যেতে যেতে বললেন জিব্রাইল;
ঝলমলে হয়ে উঠলেন মহান ঈশ্বর—‘হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ।’

প্রবেশমাত্র নাক চেপে ধরলেন প্রভু—‘কী ব্যাপার! কোথায় এলে?’
‘কেন!’—বললেন জিব্রাইল—‘আমরা তো স্বর্গেই এসেছি...’
‘দেখো, ভুল করনি তো!’—বিস্ময়ভরা কণ্ঠে ঈশ্বর!
বের হয়ে ভালো করে দেখলেন—হ্যাঁ... এই যে... স্পষ্ট...
স্বর্ণাক্ষরে লেখা ‘স্বর্গোদ্যান’; ফিরে নিঃসংশয়ে জানালেন জিব্রাইল;
‘তাই!’—ঈশ্বরের চোখেমুখে উৎকণ্ঠার ছাপ!

চারপাশ দেখতে দেখতে হেঁটে চলছেন পরম করুনাময়
পেছনে পেছনে নিঃশর্ত-চিরদাস জিব্রাইল।

‘তাহলে এসব কিসের আলামত...’
কিছুটা চড়া গলায় ঈশ্বর—‘তুমি কোনো গন্ধ টের পাচ্ছ?’
‘হ্যাঁ!’—উদ্বিগ্ন চোখেমুখে জিব্রাইল—‘তা-ই তো!’

খেজুরগাছ তলায় দেখেতে পেলেন কুৎসিত এক ভূত
কাছাকাছি যেতে যেতে মনে হল ভূত নয়—
উপর দিকে চেয়ে হা-করে আছে একজন মানুষ
গায়ে তার পিঁপড়ে ও মৌমাছির বাসা;
জিব্রাইল ডাকলেন, সাড়াশব্দ নেই...
আবার ডাকলেন, নাহ্!... কোনো সাড়াশব্দ নেই...
অঃতপর পাছায় এক লাথি মারলেন!
এদিকে লজ্জায় অন্ধ হয়ে আসে ঈশ্বরের চোখ!

এবার নিশ্চুপ বাদশার গল্প বলতে বলতে নরকের পথ ধরলেন
হাঁটতে পারছেন না ঈশ্বর—মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীর মত
চোখে নেমে আসে সীমাহীন অন্ধকার।
‘নিজের চোখকেও আমি বিশ্বাস করতে পারছি না...’
ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন ঈশ্বর!
নমনীয় চোখে তাকালেন জিব্রাইল;
ঈশ্বর নন, এ যেন নদী ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারান দুঃখে
ভেঙে পড়া মানুষের কণ্ঠস্বর—
‘এখানে না আগুন জ্বলার কথা, মিষ্টি বাতাস এলো কীভাবে?’
চারদিকে তাকালেন জিব্রাইল, কী যেন ভাবলেন—
‘হ্যাঁ, কিছুই তো ভালো ঠেকছে না!’
করুণ হয়ে এলো জিব্রাইলের নিস্পাপ মুখখানা।

তেরে নানা তেরে নানা তেরে নানা নানারে...
হৃদয়-উত্তাল ডেউয়ে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লো ঈশ্বর এসেছেন।

অভিবাদন জানালেন সক্রেটিস, অতিথিশালায়
ঝলমলে পোশাকে সজ্জিতা এক রূপসী মদ পরিবেশন করলেন;
সঙ্কোচ কাটিয়ে দ্রুত নিজেকে সামলে নেন ঈশ্বর;
এক এক করে ঈশ্বরের চোখে ভেসে উঠলো এতদিনের স্বপ্নসাধ—
সবকিছু কেমন গোলমেলে, কেমন যেন গোলমেলে মনে হয়!
তিনি এবার যেতে চাইলেন, সবাই ধরল—
না, না হুজুর, তা হয় না, একদিন থাকেন, অন্তত একটা দিন...
এত অনুরাগী দেখে খুশিতে বাকবাকুম ঈশ্বর থেকে গেলেন।

সন্ধ্যায় এক জলশার উৎসবে
ঈশ্বরকে লাল গোলাপের সংবর্ধনা দেয়া হল;
‘চাঁদ বদনি নাচ তো দেখি/ তালে তালে নাচ তো দেখি...’
শ্যাম নাগরের বাঁশির তালে তালে নাচলেন শ্রী দেবী,
রবীন্দ্রনাথ গাইলেন—‘আকাশ জুড়ে শুনিনু
ঐ বাজে ঐ বাজে তোমারি নাম সকল তারার মাঝে...’

প্রাণের আবেশে শিউরে উঠলেন ঈশ্বর, ভিজে এলো চোখ;
জিব্রাইল ঘাবড়ে গেলেন, অপরাধীর মত নিচু গলায় বললেন—
‘হুজুর, আপনি কি এখন যাবেন?’
ভুল করা লোকের মতো চোখ তুলে তাকালেন ঈশ্বর—
‘তুমি এখানকার সাইনবোর্ডটি খুলে স্বর্গে টাঙ্গিয়ে দাও,
স্বর্গের সাইনবোর্ডটি এনে এখানে টাঙ্গিয়ে দাও।’
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ১০:১০
২৮টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×