somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় কবি অথবা খোন্দকার আশরাফ হোসেন

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০৮ সালের এক গুমোট দুপুর। কলা ভবনের চারতলার শ্রীহীন এক ক্লাসরুমে বসে আছি। মাত্র তিন দিন আগে *** দাদা নামক এক অদ্ভুত প্রজাতির অকারন দুর্ব্যবহার সহ্য করে অবশেষে মার্কেটিং থেকে ইংলিশ-এ মাইগ্রেশন শেষ করেছি। সাথে সাথে শেষ করেছি আরও অনেক কিছু- নিশ্চিত সুন্দর ভবিষ্যৎ এর স্বপ্ন, সেশনজ্যাম-হীন গ্রাজুয়েশান এর স্বপ্ন।

আব্বু ভীষণ বিরক্ত এই ডিসিশানে। আমিও কিঞ্চিৎ হতাশ। যে ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট এর এত নাম-ডাক শুনে (এবং পড়ে) এতবড় রিস্ক নিলাম, এই দীনহীন ডিপার্টমেন্টের সাথে কিছুতেই সেটা মেলাতে পারছিলাম না। স্বপ্নভঙ্গের একবুক হতাশা নিয়ে কলাভবন নামক পাঁচতলা এক আস্তাবলে ঘুরে বেড়াই প্রতিদিন।

গ্রীষ্মের সেই গুমোট দুপুরে চারতলার নোংরা ক্লাসরুমটাতে ক্লাস নিতে ঢুকলেন কালোমতন এলোমেলো বাবরি চুল-ওয়ালা এক অধ্যাপক। প্রথম দর্শনে তাঁকে ফকির আলমগিরের বড় ভাই হিসেবে চালিয়ে দেয়া যাবে। উনি নাকি আবার ডিপার্টমেন্ট-এর চেয়ার। খোন্দকার আশরাফ হোসেন। ডিপার্টমেন্টের চেয়ার বলেই বোধহয় উনি কাঠের চেয়ার-এ বসলেন না। বসলেন চেয়ার এর হাতলের উপর।

প্রথমে কিছু অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা। তারপর শুরু করলেন T.S. Eliot এর The Love Song of J Alfred Prufrok। পরের একটা ঘণ্টা উনি যা করলেন সোজা বাংলায় তাকে বলে কেয়ামত।

প্রথম-বর্ষের এক সদ্য কৈশর পেরোনো বালকের সামনে উনি খুলে ধরলেন সাহিত্যের এক রাংতামোড়া বায়োস্কোপ। আমার সমগ্র সত্তা অসাড় হয়ে আসলো, সমস্ত জগৎ নিস্তব্দ্ধ। কবিতা তাহলে এভাবে বুঝতে হয়? হৃদয়ের অলিন্দ-নিলয়ে ঝড় তোলা এই মাতাল অনুভূতির আরেক নামই কি সাহিত্য? কি আশ্চর্য!

আমি যেনো আমার সমস্ত অস্তিত্ব দিয়ে অনুভব করলাম রোগা, টেকো, হতাশ প্রুফ্রকের হৃদয়ের ক্ষরণ। মুহূর্তের জন্য বিভ্রম হলো- আমিই কি প্রুফ্রক? সে কি পক্ষান্তরে আমার কথাই বলছে না? আচ্ছা, শতশত মাইল দূরের সেই কবি কিভাবে জানলেন আমার একান্ত নিজস্ব সব গহন-কথা? জীবনের সাথে সাহিত্য তাহলে এভাবে জড়িয়ে যায়?

কলাভবনে একটার সময় কারেন্ট চলে যায়। স্যার ক্লাস শেষ করলেন দেড়টায়। তখন প্রথমবারের মত অনুভব করলাম ঘেমে গোসল করে ফেলেছি।

আমি হুমায়ন রশিদ অসম্ভব অহংকার নিয়ে সবসময় বলি- এক জীবনে বহু সুন্দর কথা আমি শুনেছি। মানুষের কথা আমাকে আর মুগ্ধ করে না। আমার সেই অহংকার দুমড়ে-মুচড়ে আস্তাকুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন আশরাফ স্যার। মাত্র ৪০ মিনিটের একটা ক্লাসে।

জীবনে যতবার মনে হয়েছে সাহিত্য পড়তে আসাটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো, আমি ততবার ফিরে গিয়েছি ২০০৮ সালের সেই দম-বন্ধ-করা মধ্যাহ্নে। ঠিক ততবার, বিশ্বাস করুন স্যার, ঠিক ততবার পেয়েছি জীবন চালানোর শক্তি। আমার চরম হতাশার দিনে আপনি যে কি পথের সন্ধান আমাকে দিয়েছিলেন, আমি কোনোদিনই আপনাকে তা জানাতে পারিনি।

আশরাফ স্যার, প্রিয় কবি, আপনি না সব সময় Frost এর এই লাইনগুলো আবৃত্তি করতেন-

“The wood is lovely, dark and deep
But I have promises to keep
And miles to go before I sleep
And miles to go before I sleep”

তাহলে আপনি কেমন করে ভুলে গেলেন আমাদের দেয়া আপনার প্রমিসগুলো? একবারও ভাবলেন না আপনার আলফু সরদারের কি হবে? সে কি এখনও “মাগ্রেবের অক্তে” তাঁর জীবনটা মেপে বেড়াবে “বুরহানির গিলাস দিয়া”?

আর আমরা? তারাভরা মাতোয়ালী রাতগুলোতে কে আমাদের শুনাবে “তিন রমণীর ক্বাসিদা”? করিডোরে হাঁটতে হাঁটতে আর কি কখনও উঁকি দেয়া হবে ২০৭৯ রুমটায়?

কবিতার যে অসহ্য সুন্দর জগতে আপনি আমাদের নিয়ে এসেছিলেন হ্যামেলিনের সেই বাঁশিওলার মতো- সেই জগৎ থেকে কেন আপনিই হঠাৎ করে হারিয়ে যাবেন এভাবে?

আপনার না আরও দূর যাবার কথা ছিল?

...ঘুমোবার আগে!
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×